nahid_1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি: দুইদিন বাদেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসছে প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী৷ পরীক্ষা শুরুর আগের দিন রোববার থেকে টানা ৭২ ঘন্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট৷ লাগাতার অবরোধ তো চলছেই৷ অবরোধে পরীক্ষা চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলেও হরতালে পরীক্ষা চালাবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷ এই অবস্থায় চরম উত্‍কন্ঠিত ১৫ লাখ শিক্ষার্থী৷ সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও৷আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা৷ অভিভাবকরা দেশের স্বার্থে পরীক্ষা চলাকালীন হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন৷ কিন্তু তাদের দাবি উপেক্ষা করেই চলমান আন্দোলনে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী জোট৷ পরীক্ষার্থীরা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে কি না- এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি৷

ঢাকার একটি স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী নুরজাহান বলেন, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলেও বারবারই পরীক্ষা আটকে যাওয়ার ভয় কাজ করছে৷ এমনটা হলে পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷এক অভিভাবক জানান, দেশে যে পরিস্থিতি শুরু হয়েছে তাতে সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা দায়৷ শিক্ষকদের গাড়িতেও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ তাই অনেক শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে আসছে না৷

গত বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ তিনি হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য বিরোধী জোটের প্রতি আল্লাহর দোহায়, মানবতার দোহাই দিয়ে আহ্বান জানান৷ পরীক্ষার সময়ে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার দায় অবরোধকারীদেরই নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী৷

অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া হলেও যেদিন হরতালের কর্মসূচি থাকবে সেদিনের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হবে নাকি নেয়া হবে তা নিয়ে মন্ত্রণালয় দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে৷ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবরোধের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ তারা বলেছেন, একসঙ্গে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেয়ার মতো লোকবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নেই৷ তবে অবরোধের মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান৷

মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে৷ অবরোধ ও হরতালের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার বেশিরভাগ বোর্ডের প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষার খাতা জেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী৷ এরমধ্যে সাত লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ জন ছাত্র এবং সাত লাখ ১৫ হাজার ৯২৭ জন ছাত্রী৷

অবরোধের পাশাপাশি বিএনপি জোটের ৭২ ঘন্টা হরতালে নির্ধারিত তারিখে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে কি না- তা জানতে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আরও দুই দিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পরীক্ষা শুরুর একদিন আগে হরতালের মধ্যে পড়া পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে৷এদিকে, হরতাল-অবরোধের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেছে পুলিশ ও বিজিবি৷বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল টানা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষা শুরুর দিন ২ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডাকায় সারাদেশে এই পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ-উত্‍কন্ঠা দেখা দিয়েছে৷

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, সরকার পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে পুলিশ সব ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা দেবে৷ পরীক্ষা কেন্দ্র ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতসহ সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে৷গত ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে মাঠে থাকা বিজিবির পক্ষ থেকে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানানো হয়েছে, তারাও পরীক্ষার্থীদের বিশেষ নিরাপত্তা দেবে৷

বিজিবির এক কর্মকর্তা বলেছেন, পরীক্ষার্থীরা যাতে কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে যেতে পারেন, সেজন্য তাদের টহল জোরদার হবে৷ কেউ নাশকতা চালাতে না পারে সেজন্য পরীক্ষা কেন্দ্র ঘিরে তাদের সতর্ক অবস্থান থাকবে৷২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে হরতাল প্রত্যাহারে বেশ কয়েকদিন ধরেই অনুরোধ জানিয়ে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদ৷অবরোধ প্রত্যাহার না হলেও পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানের কথাও ঘোষণা করেন তিনি৷তবে এর মধ্যেই শুক্রবার বিরোধী জোট এক বিবৃতিতে রোববার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে৷

নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকার কি ভাবছে- জানতে চাওয়া হলে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, হরতাল এবং অবরোধের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার বিষয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত জানানো হবে৷এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার অংশ নিচেছ ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী৷

নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি বর্ষপূর্তির দিনে ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন, যার মধ্যেই বিচিছন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে হরতাল হচ্ছে৷এসব কর্মসূচিতে প্রতিদিনই গাড়িতে অগি্নসংযোগ ও বোমাবাজির মতো নাশকতা ঘটছে৷ এ বছর ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তিন হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবে৷

আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ১০ হাজার ২৯৫ জন এবার মাধ্যমিক সমাপনীর এ পরীক্ষা দেবে৷এর আগেও ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতালের কারণে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পেছানো হয়েছিল৷ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়৷এছাড়া গত বছরের শেষ দিকে জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়৷