hasina_215546

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ৪ ফেব্রুয়ারি: টানা এক মাস ধরে বিরোধী জোটের সহিংস অবরোধ চললেও জরুরি অবস্থা জারির শঙ্কা নাকচ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷তিনি বুধবার সংসদে বলেছেন, ওই স্বপ্ন দেখে লাভ হবে না৷ অলীক-অলৌকিক স্বপ্ন যারা দেখছে, যারা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চায়, আমাদের রক্ত থাকতে তা হতে দেব না৷ইমারজেন্সি দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি কেউ সৃষ্টি করতে পারেনি৷বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন৷

চলমান সহিংসতা বন্ধে জরুরি অবস্থা (ইমার্জেন্সি) জারির পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেন, অনেককেই বলতে দেখছি৷ হয়ে গেল, এসো গেল ইমার্জেন্সি৷ ইমার্জেন্সি লাগবে কেন? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা তো আছে৷ কীভাবে সন্ত্রাস দমানো যায় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া আছে৷তিনি বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে৷ জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এ অবস্থার মোকাবেলা করতে পারবো ইনশাল্লাহ৷

অতীতে জারি করা জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইয়াজ উদ্দিন জরুরি অবস্থা জারি করতে পেরেছিলেন, কারণ তিনি একই সাথে সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন৷ এঙ্িিকউটিভ (নির্বাহী) ক্ষমতায় তিনি জরুরি অবস্থা জারি করতে পেরেছিলেন৷ এখন যদি জরুরি অবস্থা জারি করতে হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে লিখে দিতে হবে তারপর রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন৷তিনি বলেন, দেশের কিছু লোক আছেন যারা দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে তাদের ভালো লাগে না৷ অসাংবিধানিক পন্থায় কাউকে আনা যায় কি না সেজন্য ব্যস্ত থাকেন৷

তিনি বলেন, সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদের ‘খ’ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে যে কেউ যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে৷ আবার এখানে ‘ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট’র (সর্বোচ্চ শাস্তি) ব্যবস্থা আছে৷প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর দেশে বার বার কু্য হয়েছে৷ বহু মানুষ মারা গেছেন৷ আমরা চাইনা দেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটুক৷ আমার রক্ত থাকতে তা হতে দেওয়া হবে না৷ আমরা জনগণকে সঙ্গে নেই বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবো৷
রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকার কার্যকর পরিকল্পনা বাসত্মবায়ন করছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনকল্পে আওয়ামী লীগ সরকার গত মেয়াদ থেকে এ পর্যনত্ম সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷তিনি বলেন, এর মধ্যে অনেকগুলো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং অনেক পরিকল্পনা বাসত্মবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে৷ ইতোমধ্যে ঢাকার যানজট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য বাসত্মবায়িত বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান৷

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা মহানগরীর পশ্চিমাংশের সাথে বুড়িগঙ্গা তীরবতর্ী কেরানীগঞ্জের যাতায়াত সহজ করার জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু (৩য় বুড়িগঙ্গা সেতু) নির্মাণ, টঙ্গীতে পাঁচদোনা-ঘোড়াশাল-কালিগঞ্জ সড়কের ১ম কিলোমিটার শহীদ আহসান উলস্নাহ মাস্টার উড়াল সেতু নির্মাণ, বৃহত্তর সিলেট ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী যানবাহনের ঢাকা প্রবেশ ও নির্গমন, কিশোরগঞ্জ সহজ করার লক্ষ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর সুলতানা কামাল সেতু নির্মাণ ও বনানী রেল ক্রসিং-এ ট্রেন চলাচলের ফলে সৃষ্ট যানজট নিরসনে ৮০৪ মিটার দীর্ঘ রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিম যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে শহরের যানজট নিরসনে রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমান ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণ, ঢাকা-আরিচা জাতীয় মহাসড়কের সাভার-নবীনগর সড়কাংশ ৪ লেনে উন্নীতকরণ, শিমরাইল-ইপিজেড-নারায়ণগঞ্জ সড়ক উন্নন, হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, জয়দেবপুর টাঙ্গাইল মহাসড়কে-কালিয়াকৈর বাইপাস সড়ক নির্মাণ, যাত্রাবাড়ী কাঁচপুর মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে চাষাড়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, যানজট নিরসনের লক্ষ্যে নবীনগর বাইপাইল ও জিরানী ইন্টার, চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর-লেনে উন্নীতকরণ ১০ সেকশন, গাবতলী-সোয়ারীঘাট সড়ক সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০ বছরের অধিক পুরাতন বাস-মিনিবাস ও ২৫ বছরের অধিক পুরানো পণ্যবাহী যানবাহন ঢাকায় চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এফএম ব্যান্ড রেডিওতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল ও যানজট বিষয়ে তথ্যাদি এবং সড়ক নিরাপত্তামূলক বক্তব্য/ বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে৷ সড়ক নিরাপত্তামূলক তথ্যচিত্র বিটিভিসহ অন্যান্য চ্যানেলে প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, পুরাতন জরাজীর্ণ ট্যাঙ্কি্যাব-এর পরিবর্তে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে আধুনিক মানসম্মত ট্যাঙ্কি্যাব সার্ভিস চালু করা হয়েছে, বিআরটিএ’র উদ্যোগে পেশাজীবী গাড়ি চালককে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যনত্ম ঢাকাসহ সারাদেশে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৮৫ জন পেশাজীবী গাড়ি চালককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে৷ এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে৷ তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট নিরসন এবং দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ২০১৪ থেকে ১০ নভেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হ”েছ৷ ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাসসহ মোট ৯৫৮টি বাস সংগ্রহ করা হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমদানিকৃত বাসগুলো পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশ দূষণসহ যানজট উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে৷ স্কুল ও কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১টি রম্নটে ৪টি স্কুল বাস সার্ভিস বিআরটিসি’র মাধ্যমে পরিচালিত হ”েছ৷ এর ফলে বিপুল পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের জন্য পৃথকভাবে যানবাহনের প্রয়োজন হয় না যা যানজট নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে৷শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার যানজট হ্রাসকল্পে রেলপথে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে৷ তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনকল্পে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন গ্রহণ করা হয়েছে৷

এদিকে, সকল রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) নারী শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি নির্মাণের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে সরকার৷বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপৰের (বেপজা) বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় এ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়৷প্রধানমন্ত্রী ও বেপজার চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন৷বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এই ডরমেটরি নির্মাণে তার গৃহায়ন তহবিল থেকে সহায়তা দেবে৷

অন্যান্য বোর্ড সদস্যগণের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ এইচ এম মোসত্মফা কামাল, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এস এ সামাদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বিদু্যত্‍ প্রতিমন্ত্রী নসরম্নল হামিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহা. নজিবর রহমান, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহা. হাবিবুর রহমান খান সভায় উপস’িত ছিলেন৷সভায় বিদেশী বিনিয়োগকারী ও শ্রমিকদের জন্য স্থানীয় বাজার থেকে মাত্র ১৫ শতাংশ কমিশনে কিছু নির্ধারিত কিছু লিকার আইটেম ও জিনিসপত্র কেনার অনুমতি দেয়া হয়৷ এৰেত্রে রেকর্ড রাখতে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য একটি করে পাসবই প্রদানের সিদ্ধানত্ম হয়৷এতে বেপজাকে পলস্নী অঞ্চলে ইপিজেড প্রতিষ্ঠায় ইউনিয়ন হোল্ডিং ট্যাঙ্ প্রদান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়৷
সভায় আদমজী জুট মিলের দ্বিতীয় ইউনিট এলাকা বিনিয়োগকারীদের দেয়ারও সিদ্ধানত্ম হয়৷ এৰেত্রে পাট প্রক্রিয়াকরণ ও পাটজাত পণ্য উত্‍পাদনকারীদের অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই জমিতে বসবাসকারী অবাঙালি বিহারি পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে বহুতল ভবন নির্মাণের নির্দেশ দেন৷ এখানে ১ হাজার ৪০৭টি বিহারি পরিবার রয়েছে৷ এর মধ্যে প্রায় ২শ’ পরিবারকে ২০টি ব্যারাকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে৷এই বিহারি পরিবারগুলো অনেকেই তৃতীয় প্রজন্মের৷ তারা ওই ইপিজেডে চাকরির সুযোগ পাবেন৷