শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল-মানববন্ধন

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি: শিক্ষা কার্যক্রম এবং এসএসসি পরীক্ষাকে হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবিতে বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের অভিমুখে মৌন মিছিল এবং মানববন্ধন করেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা ও বারিধারায় এসব মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সাদা পতাকা হাতে গুলশান ২ নম্বরের মোড় থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দিকে যান। শিক্ষা কার্যক্রমকে নির্বিঘœ করার পাশাপাশি পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধেরও আহ্বান জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।

শিক্ষা কার্যক্রম হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবিতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী।বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ির সামনে যান, যেখানে গত প্রায় এক মাস অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া।

সাদা পতাকা হাতে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। ওপাশ থেকে কোনো সাড়া না আসায় বিএনপি প্রধানকে দিতে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক নাজিম উদ্দিনের কাছে স্মারকলিপিটি দিয়ে চলে আসেন তারা।স্মারকলিপি দেওয়ার পর ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার বলেন, আজ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে যেতে পারছে না। বোমা মেরে, আগুন দিয়ে তাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এ অবস্থা কোনোভাবে চলতে দেওয়া যায় না-মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্মারকলিপি দেওয়ার সময় ন্যূনতম সৌজন্য দেখায়নি তারা। এটা নিচু মানসিকতার দৃষ্টান্ত।অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে গুলশান-২ নম্বর মোড় থেকে সারিবদ্ধ হয়ে যাত্রা শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীদের হাতে দেখা যায় বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, যাতে বোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধের দাবিও ছিল।

মোহাম্মদপুরের শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর মোরশেদ শেখ বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেকের শিক্ষাজীবন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এর প্রতিবাদে সাদা পতাকা হাতে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।

এই প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শরীফ বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি তাদের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। হরতাল-অবরোধে ওই পরীক্ষা পিছিয়ে ৮ ফেব্র“য়ারি নেওয়া হয়েছে।এখন শুনছি ৮ ফেব্র“য়ারিও হরতাল দেওয়া হতে পারে। এখন আমরা কী করবো?

শরীফের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়ায়। বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাইয়ের দেওয়া টাকায় লেখাপড়া চালিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।এভাবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে আমাদের কী হবে? কবে পরীক্ষা দিব? বড় ভাই কতোদিন টানবে?, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এদিকে বেলা দেড়টার দিকে সর্বস্তরের নিরীহ গাড়িচালক ব্যানারে একদল চালক একটি ভ্যানে করে হরতালে পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাওয়া একটি গাড়ি নিয়ে আসেন বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কাছে।অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সড়কে ঢোকার প্রবেশ মুখে অবস্থান নিয়ে হরতাল-অবরোধে নাশকতার প্রতিবাদে নানা শ্লোগান দেন তারা।

ক্রমিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাদের দাবির টওতি সমর্থন জানান ওই এলাকার সাংসদ বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপাসনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন। আর তা যদি না করেন তাহলে আপনি শপথ ভঙ্গ করবেন।

বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার ডাকে গত ৫ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে অবরোধ চলছে। অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে হরতালেরও ডাক আসছে বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষ থেকে।এসব কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, যাতে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এরইমধ্যে গত সোমবার থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হরতাল-অবরোধের কারণে প্রথম দুই দিনের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।পরিবর্তিত সূচিতে আগামী শুক্রবার প্রথম পরীক্ষায় বসার কথা রয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের। এবার প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন।এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ না রাখতে আগের দিন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন ঢাকার কয়েকটি স্কুলের কয়েকশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক।

গুলশান মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালাচাঁদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মানববন্ধনে অংশ নেন।হরতাল-অবরোধবিরোধী বিভিন্ন শ্লোগানের পাশাপাশি পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও ছিল তাদের হাতে।প্রায় এক ঘণ্টা হাতে হাত রেখে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ পেতে বিএনপি নেত্রীর প্রতি কর্মসূচি প্রত্যাহারের আবেদন জানান তারা।