hasina

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি: বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণ দুর্নীতির তিনটি মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত৷বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইমরুল কায়েম শুনানি শেষে নথি পর্যালোচনার পরে এ আদেশ দেন৷

গত বৃহস্পতিবার দুদকের পক্ষে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মীর আব্দুস সালাম আদালতে ওই প্রতিবেদন গ্রহণের জন্য আবেদন করেন৷এর আগে সমপ্রতি দুদকের ওই প্রতিবেদন দুদকের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ ঢাকা সিএমএম আদালতে দাখিল করেন৷ এরপর গত ২ ফেব্রুয়ারি সিএমএম আদালত থেকে প্রতিবেদনটি গ্রহণ বিষয়ে শুনানির জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়৷নভোথিয়েটার দুর্নীতির তিনটি মামলা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে গ্রহণ করেছেন আদালত৷ এর মাধ্যমে মামলাগুলোর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন আসামিরা৷

তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় মামলা তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাসহ সব আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করে দুদক৷ বৃহস্পতিবার সকালে এ প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷ দুদকের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মীর আব্দুস সালাম৷শুনানি শেষে নথি পর্যালোচনা করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস৷ দুপুরে দেওয়া আদেশে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি আমলে গ্রহণ করেন আদালত৷

২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে দায়ের করা এ মামলার সময়কালে শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলের নেতা৷ ১৩ বছর ধরে দুদকের অনিষ্পন্ন শাখায় পড়েছিলো বহুল আলোচিত-সমালোচিত এ মামলাটির কার্যক্রম৷মামলার ১৩ বছর পর সব আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করা প্রতিবেদনটি কমিশন অনুমোদন দেয়৷ সমপ্রতি দুদকের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ চূড়ান্ত এ প্রতিবেদনটি বিচারিক আদালতের জেনারেল রেকর্ডিং শাখায় দাখিল করেন৷

মঙ্গলবার দুদকের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০২ সালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন বু্যরো মামলাটি দায়ের করেছিল৷ যেসব অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি৷ এজন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি কমিশন নিয়ম অনুযায়ী আদালতে পাঠিয়েছে৷দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সে সময়কার বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট একনেক সদস্যদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৩টি মামলা করে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন বু্যরো৷

বু্যরোর পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে একটি এবং অ্যান্টি করাপশন অফিসার (এসিও) খান মো. মিজানুল ইসলাম বাদী হয়ে দু’টি মামলা করেন৷ তিনটি মামলায়ই তখনকার বিরোধী দলের নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান এবং অভিন্ন আসামি করা হয়৷মামলাগুলোতে যথাক্রমে ৭ জন, ৮ জন এবং ১২ জনকে আসামি করা হয়৷আসামিদের মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং শিক্ষামন্ত্রী এএইচএসকে সাদেক মারা গেছেন৷

অন্যদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর অভিযোগের দায় থেকে উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে সূত্র জানায়৷ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আলোচিত মামলাগুলো ১৩ বছর ধরে পড়েছিল দুদকের অনিষ্পন্ন শাখায়৷ দুর্নীতি দমন বু্যরো দুর্নীতি দমন কমিশনে রূপান্তরিত হওয়ার পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের কমিশন মামলাগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন৷বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে শেখ হাসিনা পৃথক দু’টি রিট (নং-৭৯৬৬/০৫ এবং ৭৯৬৭/০৫) করেন৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের ৪ মার্চ চার্জশিট দাখিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন৷

এ সময় মামলা সম্পর্কে আদালত বলেন, নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলা শেখ হাসিনাকে হয়রানি করা এবং হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যেই দায়ের করা হয়েছিল৷ বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্তকে আমলে নিয়ে মামলাগুলো করা হয়৷ সিদ্ধান্তগুলো ছিল- প্রকল্পের পরামর্শকের ব্যয় বৃদ্ধি, ভবন নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় বৃদ্ধি৷

এসব অভিযোগ সম্পর্কে উচ্চ আদালত থেকে বলা হয়, অভিযোগগুলো ফৌজদারি আইনের কোনো বিধানের আওতায় পড়ে না৷ এ মামলা চললে বিবাদী আরও হয়রানির সম্মুখীন হবেন৷ আদালত পর্যবেক্ষণে এটাও বলেন, মামলার নথিপত্র উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তত্‍কালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে৷পরে ওই তিন মামলার চার্জশিট আর দাখিল করা হয়নি৷ এরপর দুদক এ মামলাগুলোর পুনর্তদন্ত করতে দুদকের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়৷ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় কমিশন অব্যাহতির সুপারিশ করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুমোদন দিয়ে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়৷