শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি: দেশে সহিংসতার রাজনীতি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে টানা অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শাহবাগে শুরু হওয়া টানা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেনী- পেশার মানুষ।মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার অভিযোগ করেন, দেশে নাশকতা বন্ধ করতে ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।এ সময সহিংসতা বন্ধে সকলকে রাজপথে নেমে আন্দোলন করার আহ্বানও জানান তিনি।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘেœ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে এজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের আহ্বান জানান ইমরান এইচ সরকার।একই সঙ্গে জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধেরও দাবি জানান তিনি।যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে দুই বছর আগে যেদিনে শাহবাগে বসেছিলেন ছাত্র-জনতা এবার সেই দিনে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধের দাবিতে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন গণজাগরণ কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে সমবেত হতে শুরু করেন জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা।শিক্ষক-সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।

শাহবাগে জাতীয় যাদুঘরের সামনের রাস্তায় গোল হয়ে বসে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও বোমাবাজি বন্ধের দাবিতে নানা শ্লোগান দিচ্ছেন তারা। শ্লোগান আসছে যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতেও।

হরতাল-অবরোধের নামে দেশজুড়ে যে নাশকতা চলছে তা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান চলবে বলে জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।তিনি বলেন, দেশজুড়ে সহিংসতারপ্রতিবাদে ছাত্র-শিক্ষকসহ কর্মজীবী, পেশাজীবী মানুষকে সাথে নিয়ে আমাদের এই অবস্থান। সহিংসতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলবে।

জামায়াতই দেশব্যাপী সহিংসতা চলাচ্ছে অভিযোগ করে ইমরান বলেন, এই যুদ্ধাপরাধী সংগঠনটি গণতন্ত্রের নামে, বিভিন্ন মানুষের অধিকারের নামে কথা বলে। তারা একটি অপরাজনীতি করে মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি শুরু হয় শাহবাগের জাগরণ। তাদের আন্দোলনের মুখে আইন সংশোধন করা হয়,যাতে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের মতো আপিল করার সুযোগ পায় প্রসিকিউশন।আপিলে যুদ্ধাপরাধে কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা হয়, যা ওই বছর ডিসেম্বরেই কার্যকর হয়।ইমরান এইচ সরকার বলেন, যে দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠেছিল, তাদের এখনকার অবস্থান কর্মসূচিতেও সেই দাবি আছে।যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দুই বছর আগে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। আমাদের সেই সংগ্রাম চলছে-চলবে।

বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার ডাকে গত ৫ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে অবরোধ চলছে। অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে হরতালেরও ডাক আসছে বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষ থেকে।এসব কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, যাতে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।হরতাল-অবরোধে নাশকতায় প্রাণহানির প্রতিবাদে এরইমধ্যে রাস্তায় নেমেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণি- পেশার মানুষ।কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবারও গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

এদিকে, রাজনীতির নামে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধসহ ছয় দফা দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টিএসসি থেকে শাহবাগমুখী রাস্তার মাথায় রাস্তা আটকিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করে ইমরান এইচ সরকার-সমর্থক অংশটি। বেলা একটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে কামাল পাশা চৌধুরী জানান, বিকেল তিনটা থেকে তাঁর সমর্থক অংশটিও শাহবাগে লাগাতার অবস্থান করবে।

‘মানুষ হত্যার রাজনীতি বন্ধ কর করতে হবে, হত্যা খুনের রাজনীতি, চাই না, যে হাত মানুষ পোড়ায়, সে হাত ভেঙে দাও এবং আমার ভাই পুড়ছে কেন? প্রশাসন জবাব চাই’সহ বেশ কয়েকটি স্লোগান দিচ্ছে ইমরান অংশের সমর্থকেরা। পাশেই কামাল পাশা চৌধুরীর অংশটিও মাইকে বিভিন্ন প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করছে। এতে এই এলাকায় ব্যাপক শব্দদূষণ হচ্ছে ও একদিকের রাস্তা বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট।