PM.sk_1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিএনপিকে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার আহবান জানিয়ে বলেছেন, ওই দলটিকে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ৰমতায় যেতে হবে, নিরপরাধ জনগণের মৃতদেহের উপর দিয়ে, সহিংসতা বা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করে নয়৷তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় ছিল এবং তারা আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে৷ কিন্তু তারা বাস ও ট্রাক চালক, শিশু এবং নিরপরাধ জনগনের আগুনে পোড়া দেহের উপর দিয়ে ৰমতায় যেতে পারে না৷ তাদেরকে অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে৷

প্রধানমন্ত্রী রোববার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন৷প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডে গতিশীলতা আনার উদ্দেশে নির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যে তাঁর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী রোববার এই মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন৷খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে রাজনৈতিক ভুল করেছেন বলে শেখ হাসিনা পুনরুল্লেখ করেন৷ দেশবাসী কেন তাঁর ভুল সিদ্ধানত্মের জন্য মূল্য দিবে এই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেন খালেদা জিয়াকে সুমতি দেন যাতে তিনি ধ্বংসাত্মক নীতি থেকে সরে আসেন৷

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী এম মতিউর রহমান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হাসান৷এ সময় মন্ত্রনালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলছিল৷ কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন,একই সময়ে তাদের লক্ষ্য জনগণের ভোগানত্মি বৃদ্ধি করা৷ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি নেত্রী হয়তো উন্মাদ বা মানসিক বিকারগ্রস্থহয়ে পড়েছেন, তা নাহলে কিভাবে তিনি দিনের পর দিন নিজের বাসা ছেড়ে কার্যালয়ে অবস্থান করেন৷এটা ঠিক স্পষ্ট নয় যে, তিনি কি ধরনের বিপস্নবের সূচনা প্রত্যাশা করেন৷ কিন্তু এটা সত্য যে, তিনি নরহত্যা করছেন এবং এমনকি শিশুদেরকেও জীবনত্ম পুড়িয়ে মারছেন৷

কিছু মানুষ হত্যা, আরও অনেককে বিকলাঙ্গ, যানবাহন পোড়ানো এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ব্যতীত এ ধরনের আন্দোলন থেকে বিএনপির অর্জন কি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি বিএনপি মনে করে এই ধ্বংসযজ্ঞ তাদের অর্জন, তাহলে জাতির জন্য তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শুধুমাত্র শুক্র ও শনিবারে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করেছে, কারণ ছেলেমেয়েরা ঝুঁকির মধ্যে পরীক্ষার হলে যেতে পারে না৷ তাই নতুন করে পরীক্ষার সময়সূচি প্রস্তুত করা হয়েছে উলেস্নখ করে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি- জামায়াত সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও হরতাল আহবান করতে পারে৷

বিএনপি ও জামায়াত ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে বিধায় তাদেরকে বিশ্বাস করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত চায়না জনগণ শিক্ষিত হোক, যদি জনগন শিক্ষিত হয় তাহলে তারা জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারবে না৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ৷ সেকুলারিজম মানে নাসত্মিকতা নয়৷ সকল ধর্মের মানুষের ধমর্ীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে এটি হলো একটি রাষ্ট্রীয় নীতি৷ এই নীতি অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম সাংবিধানিক মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেন৷তিনি বলেন, ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সহ অবস্থান ও সম্প্রীতি৷ এটিই মহানবী রাসুল (সা.)এর শিক্ষা৷ আওয়ামী লীগ সব সময়ই এই নীতিকে তুলে ধরছে যাতে প্রত্যেকে তাদের ধমর্ীয় অধিকার ভোগ করতে পারে৷শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করছে৷ স্বাধীনতার পর কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুই ইসলামের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন৷ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসকরা ইসলামের জন্য কিছুই করেনি৷এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন৷ বঙ্গবন্ধু জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনে প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন৷

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তায় জাতীয় মসজিদের দু’টি মিনার নির্মাণ এবং আরো সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে৷ তবে বিএনপি-জামায়াত যারা নিজেদের ইসলামপন্থী দাবি করে তারা ২০০১ সাল থেকে পুরো ৫ বছর প্রকল্পটি ফেলে রাখে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক মুসলিম দেশের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করেন এবং মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধমর্ীয় সমাবেশ আয়োজনের জন্য তুরাগ নদীর তীরে জমি বরাদ্দ করেন৷এখন বিএনপি-জামায়াত ইজতেমার মোনাজাতে অংশগ্রহণে মুসলি্লদের বাঁধা দিচ্ছে৷ তারা মসজিদকে তাদের অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে, পবিত্র কোরআনের কপি পুড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে বিএনপি-জামায়াতে ধর্মের প্রতি কোন বিশ্বাস আছে কিনা সেটি নিয়েই সন্দেহ আছে৷

ইসলামের উন্নয়ন এবং ইসলামিক চিনত্মা আদর্শ প্রচারে তাঁর সরকারের গৃহীত পদৰেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ধমর্ীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে যাতে কোমলমতি শিশুরা ধমর্ীয় বিশ্বাস ও নীতি আদর্শ নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে৷তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগের শাসনকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব বাজেটের আওতায় এনেছে এবং প্রতিটি জেলায় অফিস স্থাপন করেছে৷ সরকার ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছে এবং পবিত্র কোরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছে৷ সৌদি সরকার ও মুসলিম সম্প্রদায় বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনার সাফল্যের প্রশংসা করেছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর অবৈধ সরকার ইসলামকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং ইসলামের শিক্ষা থেকে সরে গিয়ে অন্যান্য ধমীর্য় সম্প্রদায়ের সদস্যদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছে৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা অনৈসলামিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিল এবং এখন তারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে যেখানে সকল ধর্মের লোক তাদের ধমর্ীয় ও জাতীয় অনুষ্ঠান উত্‍সবমুখর পরিবেশে উদযাপনে সৰম হয়৷

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার অন্যান্য ধর্মের লোকদের কল্যাণে এবং উন্নয়নে একইভাবে মনোযোগ দিয়েছে৷ এ জন্য অন্যান্য ধমর্ীয় উপাসনালয় স্থাপনের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করেছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার জন্য ১৫০০ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে৷ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিবছর বরাদ্দ বেড়েছে৷