ফেরত পাঠানো হলো খালেদা জিয়ার খাবার

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি: চতুর্থ দিনের মতো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকারী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীদের খাবার ফেরত পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিএনজিচালতি একটি অটোরিকশায় করে বিরিয়ানির প্যাকেট ও পানির বোতল কার্যালয়ের গেটের সামনে আনা হয়। তখন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা খাবারসহ অটোরিকশাটিকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠায়।খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শাইরুল কবিরের দাবি, আজ সকাল থেকে ভেতরে অবস্থানকারী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা অভুক্ত রয়েছেন। তাই দুপুরের খাবার হিসেবে ওই বিরিয়ানির প্যাকেটগুলো আনা হয়। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তা ফেরত পাঠিয়েছেন। শুক্রবার রাতে খাবার আনতে না দেওয়ায় চিড়া-মুড়ি খেয়ে রাত কাটিয়েছেন তারা।

শাইরুল কবিরের দাবি, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের হুমকির পর থেকেই এমনটা ঘটছে। আজকের আগে তিন দিন এভাবেই খাবার ফেরত পাঠানো হয়েছে।তবে খাবার ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে খালেদা জিযার কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সদস্যরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস ইউং শামছুদ্দিন দিদার অভিযোগ করে বলেন, দুপুর ১টার দিকে গুলশান কার্যালয়ের স্টাফদের জন্য একটি ভ্যানে করে খাবার নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দেয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে গুলশান থানা থেকে পুলিশ এসে ভ্যানগাড়ির চালকসহ গাড়িটি থানা নিয়ে যায়। এর আগে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে কিছু বক্সভর্তি খাবারের একটি ব্যাগ নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে আসেন জহুরুল ইসলাম নামে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমার রহমানের একজন গৃহকর্মী। ওই সময় পুলিশ খাবারের ব্যাগ তল্লাশি করে জহুরুলকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এর পর তিনি খালেদার কার্যালয়ে খাবার পৌঁছে দেন। বের হওয়ার সময় কিছু কাপড়- চোপড় ধোয়ার জন্য নিয়ে যান।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ৫০ জন বুধবার রাত থেকে শুকনো খাবার এবং ফল খেয়ে আছেন বলে জানা গেছে। বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে প্রায় ১২০ প্যাকেট খাবার ও কিছু পানির বোতল নিয়ে একটি ভ্যান খালেদার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে ফেরত পাঠানো হয়। এদিকে, বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দিশাই বিসওয়াল ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজাররিক।

বৃহস্পতিবার নিউইয়কেৃর স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় জাতিসংঘের দপ্তরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পদমর্যাদার ওই মুখপাত্র লিখিত বিবৃতিতে বলেন, বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগেরর অংশ হিসাবে সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারনকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ হয়েছে। নিশা বিসওয়ালের সঙ্গে অনুষ্ঠিত তার বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট উত্তোরনের উপায় নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনা হয়। মুখপাত্র বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছার লক্ষ্যে করনীয় নির্ধারণে উভয়ে একমত পোষণ করেছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী এসব জানিয়ে বলেছেন, তিনি বৈঠকের সুর্নিদিষ্ট ফলাফল জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন- এটি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। মহাসচিব বানকি মুনের দেয়া দায়িত্ব অনুসারে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণারোপ এবং খাবার প্রবেশে বাধা প্রদান প্রসঙ্গে স্টিফেন ডোজাররিক বলেন, এটি অবশ্যই উদ্বেগের। এ বিষয়সহ বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীল সকল পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি উন্নয়নে জাতিসংঘের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিরোধী মত দমন, নির্যাতন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সরকারের হস্ত ক্ষেপ বিষয়ে বিদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ডোজাররিক বলেন, আমরা এ সকল বিষয়ের উপর নজর রাখছি। বারবার উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছি। মহাসচিবের দেয়া দায়িত্ব অনুসারে সাবেক রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব পুনরায় কাজ শুরু করছেন। তিনি বিএনপি ও সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। করনীয় নির্ধারণে সার্বিকভাবে কাজ করছে জাতিসংঘ।