শিশু জিহাদ

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি: রাজধানীর শাজাহানপুরে পাইপে পড়ে নিহত শিশু জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না,তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রোববার এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এ রুল দেন। একই সঙ্গে শিশু জিহাদের মৃত্যুতে বিবাদীদের অবহেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল হালিম রিট আবেদন করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম। পরিত্যক্ত নলকূপের পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় এ ধরনের উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

আদেশের আব্দুল হালিম জানান, অরক্ষিত গর্ত, পাইপ, পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ ও অন্যান্য জলাধারে শিশু বা মানুষ পড়লে তাদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে উদ্ধারে গত দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কী কী যন্ত্রপাতি কিনেছে, তার একটি তালিকা আগামী ১৫ মের মধ্যে রেল কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে বলেছে আদালত। জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে রুল দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি হওয়ায় শিশুটির মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, রেলওয়ে এবং সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তাও জানতে চেয়েছে আদালত।সারাদেশে অরক্ষিত ও উন্মুক্ত পাইপ, কূপ, টিউবওয়েল, স্যুয়ারেজ পাইপ, গর্ত এবং পানির ট্যাংকের তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না- আদালত তাও জানাতে বলেছে।

স্বরাষ্ট্র সচিব,রেলওয়ে সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক,রেলওয়ের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেনটেইনেন্স), ওয়াসার চেয়ারম্যান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার ও শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।পয়োনিষ্কাশন পাইপে কেউ পড়ে গেলে দ্রুত কার্যকরভাবে উদ্ধার করতে গত দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস কী ধরনের জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা অর্জন করেছে সেসব বিষয়ে আদালতে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দিতেও রুলে বলা হয়েছে।

তিন ভাইবোনের মধ্যে জিহাদ ছিল সবার ছোট। বয়স চার বছর। বাবা নাসির ফকির মতিঝিলের একটি স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বিকেল চারটার দিকে অন্য শিশুদের সঙ্গে বাসার পাশেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পানির পাম্পের কাছে খেলতে যায় সে। একপর্যায়ে পাম্পের দেড় ফুট ব্যাসের একটি পাইপে পড়ে যায় সে। চলে যায় গভীরে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ওই পাইপের গভীরতা ৫০০ ফুট। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ৪০০ ফুট। কেউ বলে ৬০০ ফুট। পাইপের ভেতর শিশুটি পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। শুরু হয় উৎকণ্ঠা, প্রার্থনা। ছুটে যান ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কয়েক শ কর্মী। শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, তারপর রাত, ভোর, সকাল, দুপুর কিন্তু ছেলেটি উদ্ধার হয় না। পাইপে সরবরাহ করা হয় অক্সিজেন। রশি ফেলে আবার টানা হয়। একটু ভারী ভারী মনে হলেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আশপাশের শত শত মানুষ পড়তে থাকে দোয়া-দরুদ। কিন্তু রশি কিছুটা ওপরে ওঠানোর পর আবার হালকা হয়ে যায়। হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে চলে দীর্ঘ অভিযান।

প্রশিক্ষিত দমকল বাহিনী যখন ব্যর্থ, পাঁচ ফুট উচ্চতার একটা লোহার খাঁচা, কিছু উদ্যমী তরুণ-যুবক আর একটি ক্যামেরাই সৃষ্টি করল ইতিহাস। টানা ২৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর উদ্ধার হলো ছোট্ট শিশু জিহাদ। তবে জীবিত নয়, মৃত।গতবছর ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে খোলা থাকা কয়েকশ ফুট গভীর একটি নলকূপের পাইপে পড়ে যায় চার বছরের জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে অনেক নিচে ক্যামেরা নামিয়েও ফায়ার সার্ভিস কোনো মানুষের ছবি না পাওয়ায় পাইপে জিহাদের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। ওই সন্দেহ রেখেই উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।এর কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে উঠে আসে অচেতন জিহাদ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি বেঁচে নেই। ওই ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।