khaleda-zia-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি: সোয়া পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির দুই মামলায় ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত৷বুধবার ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এই তিনজনের জামিন বাতিল করে পরোয়ানা জারির আদেশ দেন৷ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা ছাড়া বাকি দুজন হলেন,মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল,ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ৷খালেদার আইনজীবীরা পরে পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করলে তাও নাকচ করে দেয় আদালত৷

এদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে৷এর মধ্যে খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা যাচ্ছে গুলশান থানায়৷ অন্য দুই আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রমনা ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা যাচ্ছে ক্যান্টনমেন্ট থানায়৷

বুধবার দুপুর দুইটার কিছু আগে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালত থেকে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন আদালতের পেশকার আরিফুল ইসলাম ও পুলিশের ডিসির সহকারী কনস্টেবল তাজুল ইসলাম৷ এর আগে আদালতে হাজির না হওয়ায় দুই দুর্নীতি মামলায় এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালত৷ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টিতে তাদের জামিনও বাতিল করে দেন আদালত৷

বুধবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদের অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামী ৪ মার্চ দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত৷ ওই দিন একই মামলার আসামি খালেদার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হাজির করতে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক৷

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার ছয় আসামির অন্য দু’জন ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন৷ এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত্‍ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়৷

মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ মোট ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন৷

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান৷

মামলাটির অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়৷ কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উত্‍স ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি৷জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে৷২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান৷

এ মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তত্‍কালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডবি্লউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন৷ হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷

গত বছরের ১৯ মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়৷ খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও৷

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাত্‍ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাত্‍ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতভবনে চালানোর আদেশ জারি করে৷

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের দায়ের করা এ দুটি মামলার বিচার চলছে ঢাকার বকসিবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে৷

এদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতেই এতিমখানা দুর্নীতি মামলার বাদী হারুন অর রশীদের অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়৷আসামিরা উপস্থিত না থাকায় প্রথম সাক্ষীর জেরা বাতিল করে পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দি শোনার জন্য ৪ মার্চ দিন রাখেন বিচারক৷

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ মামলার আসামি তারেক রহমানকে হাজির করানোর আবেদন জানান৷ তিনি বলেন, অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে চিকিত্‍সার কথা বলে জামিন নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন তারেক রহমান৷ এখন তিনি সুস্থ আছেন বলে আমরা জেনেছি৷ তাই মামলার বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে তাকে আদালতে হাজির করানো প্রয়োজন৷

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে দু’টি সময়ের আবেদন জানান৷ বেলা পৌনে এগারটার দিকে এসব আবেদনের শুনানি শুরু হয়৷ শুনানি শেষে দুই আবেদন নামঞ্জুর করে তার এবং দীর্ঘদিন আদালতে হাজির না হওয়ায় অন্য দু’জনের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত৷আদালত তার আদেশে বলেন, গত ধার্য তারিখে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বুধবার তাকে অবশ্যই হাজির করাবেন বলে জানিয়েছিলেন৷ জামিনদাররা সে কথা না রাখেননি৷ এছাড়া মামলা দু’টির ৬৩টি ধার্য তারিখে তিনি মাত্র ৭ বার আদালতে হাজির হয়েছেন৷

 তারা দুই কারণে দু’টি সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন৷অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাহীনতায় অনুপস্থিতির কারণে একটি আবেদন জানানো হয়৷ অন্যদিকে গত ৭ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া৷ বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়৷ তাই ওই আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য আরেকটি আবেদন জানানো হয়৷

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি সর্বশেষ ধার্য তারিখেও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃতু্যর কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন জানান খালেদা জিয়া৷ এ সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার৷গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে৷

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ছিল নতুন বিচারকের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রথম দিন৷ সেদিন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বকশিবাজার এলাকায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে এমপি ছবি বিশ্বাসসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন৷ বিএনপির কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও আওয়ামী লীগের নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেন৷

প্রথম দিনের বিবেচনায় খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে ২৪ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ৭ জানুয়ারি ধার্য করেছিলেন নতুন বিচারক৷ ৭ জানুয়ারি আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পুনরায় ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হলেও খালেদার আইনজীবীদের আবেদনে ফের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়৷দুদকের আইনজীবীর আবেদনে এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় খালেদার ছেলে ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও ওইদিন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয় আদালত, যিনি চিকিত্‍সার কথা বলে উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন৷

ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃতু্যতে শোকের কথা জানিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি আদালতে না এসে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন পাঠান খালেদা জিয়া৷ বিচারক সেদিন তা মঞ্জুর করে সাক্ষ্য শোনার জন্য ২৫ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন৷এর আগে গত ১৫ জানুয়ারিও আদালতে যাননি খালেদা৷ ওইদিনআদালতে হাজির না হওয়ার কারণ হিসাবে গুলশান কার্যালয়ে খালেদাকে অবরুদ্ধ করে রাখার কথা বলেছিলেন আইনজীবীরা৷ বিচারক তাকে সেদিনের হাজিরা থেকে রেহাই দিলেও সময়ের আবেদন নাকচ করে বাদীর সাক্ষ্য চালিয়ে যাওয়ায় আদেশ দেন৷ এ নিয়ে আদালতে হৈ চৈ হয় এবং খালেদার আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানান৷গত ৩ জানুয়ারি থেকে নিজের গুলশানের কার্যালয়েই অবস্থান করছেন বিএনপিনেত্রী৷ পুলিশি অবরোধ সরিয়ে নেওয়া হলেও তিনি বাসায় ফেরেননি৷

নিজের দলের ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যে বুধবারও খালেদা জিয়া আদালতে না এসে সাক্ষ্য পিছাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে আবারও আবেদন করেন৷ উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিলের কথা জানিয়ে এই আবেদন করা হয়৷

শুনানি শেষে বিচারক দুই আবেদনই খারিজ করে দেন৷ টানা কয়েকটি ধার্য দিনে আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ায় জামিন বাতিল করে তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা৷বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এবং ২০১১ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্টে দুনীতির্র অভিযোগে এ দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন৷

গতবছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিচার শুরু করে৷ এর মধ্যে এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিনজন আসামি হিসাবে রয়েছেন৷

এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠন ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে গেলেও তা খারিজ হয়ে যায়৷খালেদার অনুপস্থিতিতেই গতবছর ২২ সেপ্টেম্বর এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় বাদী হারুন অর রশীদের জবানবন্দি শোনা শুরু করেন তিনি৷ কিন্তু আসামিপক্ষ দফায় দফায় সময়ের আবেদন করায় তার সাক্ষ্য এখনো শেষ করা যায়নি৷

এ দুটি মামলায় হাজিরা দিতে সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর আদলতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া৷ ওইদিন বকশিবাজার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত এলাকায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷

এ পর্যন্ত এ দুটি মামলায় মোট ৬৩ দিন আদালত বসেছে, যার মধ্যে খালেদা হাজির ছিলেন মাত্র সাত দিন৷গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ৷ এরপর থেকে নানা কারণ দেখিয়ে সময়ের আবেদন জানানোর মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে নেন খালেদা জিয়া৷ ফলে প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হতে সময় লেগেছে দীর্ঘ পাঁচ মাস৷

খালেদা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান৷তাদের মধ্যে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে ছিলেন৷

মামলার অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন৷অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন৷ এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত্‍ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়৷মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ মোট ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন৷

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান৷মামলাটির অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়৷ কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উত্‍স ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি৷

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে৷২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান৷

এ মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তত্‍কালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডবি্লউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন৷ হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷গত বছরের ১৯ মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়৷ খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও৷

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাত্‍ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাত্‍ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতভবনে চালানোর আদেশ জারি করে৷২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷

তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত্‍ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে৷এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়৷দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন৷