bnp

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।কোনো পরিস্থিতিতেই কর্মসূচি থেকে পিছু হটার চিন্তা করছে না তারা।জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।এদিকে, বিএনপিকে এক বিন্দুও ছাড় দেবে না সরকার। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চূড়ান্ত পরিণতির কথা ভাবা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পেট্রলবোমা হামলা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, গণতন্ত্রে কেউ রাজা-রানী নন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আইনের আওতার বাইরে নন। অন্যায়-অশান্তি, অপরাধ করলে বিচার হবে, জেল খাটতে হবে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের বিচারের বাইরে থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে বলে হুশিয়ারি ব্যক্ত করেন তিনি। এ দিন খুলনায় এক অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়াকে সারা জীবন জেলের মধ্যে কাটাতে হবে। বুধবার সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এক অনুষ্ঠানে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে কোনো মুহূর্তে গ্রেফতার করা হবে।বৃহস্পতিবার গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করাই এখন সরকারের কাজ।এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হুশিয়ারি ব্যক্ত করে বলেন, প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে। বুধবার জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, চলমান নাশকতার অপরাধ প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ডের শামিল। এর আগে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে একই বিষয়ের অবতারণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যদি মানুষ হত্যার অপরাধে বিএনপি নেত্রীর ফাঁসির দণ্ড হয়, সেটাও কার্যকর করবে সরকার। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারের একাধিক মন্ত্রীর বক্তব্যে বর্তমান অবস্থা নিয়ে সরকার সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বলে ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে সরকারের আর পেছনে যাওয়ার পথ নেই। তাছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের ভেতর ও বাইরের প্রবল চাপ সামলাতে হচ্ছে সরকারকে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়া যদি অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখেন, তাহলে তাকে গ্রেফতারে বাধ্য হবে সরকার।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করেছে সরকার।জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন তার সহকারী অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে এ মধ্যস্থতার জন্য মনোনীত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দুই নেত্রীর সহযোগিতা কামনা করা হয়। কিন্তু জাতিসংঘের এ উদ্যোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে সরকার।

এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, সরকার জাতিসংঘের চিঠির জবাব দেবে। এর আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির প্রতিনিধিরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি মানুষ হত্যা ও নাশকতা বন্ধ না করলে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় তারা যাবে না। তবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা সরকারকে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার অনুরোধ করেন।তারপরও সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী, যাদের নাশকতাকার সঙ্গে যুক্ত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে-তাদের পাকড়াও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে খাবার সরবরাহ বলতে গেলে প্রায় বন্ধ রয়েছে। খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নেতাকর্মীর খাবার যাচ্ছে না।তবে সরকারের ভেতরে উদারপন্থী বলে পরিচিতরা এ পরিস্থিতিতে বিএনপিকে এক্সিট দেয়ার পক্ষে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট থেকে উত্তরণ করতে চান।

এদিকে, পরোয়ানা জারির পর গ্রেফতার হতে প্রস্তুত বিএনপি চেয়ারপারসন। তাকে গ্রেফতার করা হলেও কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না এমন বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলনের কৌশল কি হতে পারে তা নিয়ে এরই মধ্যে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন চূড়ান্ত গতি পাবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।সংকট নিরসনে সরকার সহজেই সংলাপের উদ্যোগ নেবে বলে মনে করছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দেশী-বিদেশী চাপকেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। উল্টো আন্দোলন দমনে সরকার নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করছে। গণহারে গ্রেফতার, কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর এবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সরকারের এমন উদ্যোগকে আন্দোলন দমনে মানসিক চাপ হিসেবে দেখছেন তারা। চাপ মোকাবেলা করে সরকারকে উল্টো চাপে রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। আন্দোলন আরও জোরালো করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মার্চের শুরু থেকে অবরোধ, হরতালের সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

উদ্দেশ্য, যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীদের রাজপথে নামানো। আপাতত ঢাকাসহ দেশের প্রত্যেকটি মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঝটিকা মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব মিছিলে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মিছিলে নেতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে বড় ধরনের শোডাউনের চিন্তাভাবনাও রয়েছে তাদের।জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বারবার সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোর পরও তারা পাত্তাই দিচ্ছে না। দেশের বিশিষ্টজনের পাশাপাশি বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রও সংকট নিরসনে সংলাপের উদ্যোগ নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু কারও আহ্বানকেই তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। আলোচনায় না বসে সরকার দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলনকে থামানোর কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র করছে।তিনি আরও বলেন, এসব করে আন্দোলন থামানো যাবে না। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। আন্দোলন যে পর্যায়ে এসেছে সেখান থেকে সরে আসার কোনো অবস্থা নেই। তাই সংকট নিরসনে সরকার সংলাপের উদ্যোগ নেবে বলে আশা করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।

সূত্র জানায়, দলের একটি অংশ মনে করছে শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হতে পারে। ক্ষেত্রে আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার কৌশল কি হবে বা কে নেতৃত্ব দেবেন সে বিষয়ে দলের সব পর্যায়ে একটা মেসেজ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে দলের সিনিয়র নেতা হিসেবে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বা ড. আর গনিকে আপদকালীন দায়িত্ব দেয়ার পক্ষে অনেকে। আন্দোলনের নেপথ্যে যেসব নেতা রয়েছেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। আর সার্বিক বিষয়ে এদের পরামর্শ দেবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে কিভাবে কারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন সে রূপরেখা আগেই তৈরি করা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকসহ তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার কাছে এমন বার্তাও পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার হলে শেষ মুহূর্তে দলের এসব পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেন তিনি।

তবে দলটির বড় একটি অংশ মনে করে, সরকার যতই প্রক্রিয়া করুক শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করবে না। মানসিক চাপ সৃষ্টি করতেই এসব কৌশল নেয়া হয়েছে। সরকারের এই কৌশল মোকাবেলা করে কিভাবে আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে নেয়া যায় সেদিকেই নজর দেয়া উচিত। তবে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলনের পালে নতুন হাওয়া যোগ হতে পারে। নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ আরও দানা বাঁধবে। সাধারণ মানুষও বিষয়টিকে ভালোভাবে নেবে না। সরকারের ওপর বিদেশী চাপও বাড়বে। সবকিছু মিলে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চায় দলের নেতারা।

সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলন থেকে কোনো কিছু অর্জন করা ছাড়া পিছু হটার চিন্তাভাবনা হাইকমান্ড থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোনো পর্যায়ে নেই। এ অবস্থা থেকে পিছু হটলে ভবিষ্যতে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশংকা রয়েছে। কারণ কর্মসূচি চলমান থাকার পরও সরকার নানাভাবে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করছে। গণগ্রেফতারের পাশাপাশি কথিত বন্দুকযুদ্ধে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মসূচি স্থগিত বা শিথিল করা হলে সরকারের দমনের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। কর্মসূচি চলার কারণে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিকে অনেকখানি ব্যস্ত। কর্মসূচি না থাকলে পুরো শক্তি নিয়ে তারা নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।

সূত্র জানায়,চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রায় সবাই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। নেতাকর্মীদের এমন মনোভাবের কারণে বিএনপির হাইকমান্ডও আন্দোলন থেকে সরে না এসে তা আরও বেগবান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সার্বিক মূল্যায়নে সরকারের নমনীয় হওয়ার লক্ষণ দেখছি না। সরকার আরও আক্রমণাত্মক হচ্ছে। গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুধু অব্যাহত নেই, তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের খলনায়কে পরিণত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, এতকিছুর পরও তারা অধিকতর জোর গলায় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দেশের জনগণ তাদের ভূমিকা জোরদারে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।অন্যদিকে, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক সাব-কমিটি বলেছে, সংলাপের মধ্য দিয়ে চলমান সংকট নিরসনের আগ্রহ বাংলাদেশের বড় দুই দলের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে সাব-কমিটির সদস্যরা তাদের উদ্বেগের কথা জানান। এই কমিটির সদস্যরাই সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে ব্রাসেলস ফিরে গেছেন।

বাংলাদেশ সফরকালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিনিধি দলটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে। এ ছাড়া প্রতিনিধি দলটি সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কমিশন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ৗৈবঠক করে। বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনার জন্যই মূলত এ বৈঠক।বৈঠকে প্রতিনিধি দলটি জানায়, তারা বাংলাদেশে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে যে টুকু বুঝেছে তা হল- দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতার কোনো সুযোগ তারা দেখছে না। তারা জানান, বিবদমান পক্ষগুলো খুবই অনমনীয় অবস্থানে। ঢাকায় কেউ কেউ তাদের জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না। যদি এভাবে চলতে থাকে পরিস্থিতি একপর্যায়ে গৃহযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। বৈঠকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, চলমান সহিংসতা বন্ধে দেশটির সব পক্ষকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাব-কমিটির প্রতিনিধি দলটি ১৬ থেকে ২০ ফেব্র“য়ারি বালাদেশ সফর করে।এদিকে বাংলাদেশ সফরকালেই সামগ্রিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ১৯ ফেব্র“য়ারি একটি বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এ প্রতিনিধি দল। ওই বিবৃতিতে সহিংসতা বন্ধ এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সিভিল সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে সাড়া দিতে আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে জোরপূর্বক গুম করে ফেলা, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা।মূলত শ্রম অধিকার, শিশু, নারী ও সংখ্যালঘু অধিকার বিষয়ে সফর করতে আসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক এ প্রতিনিধি দল। কিন্তু প্রতিনিধি দলটি দেশের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সিভিল ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয়। বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকও করেছে প্রতিনিধি দলটি।ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইউরোপীয় পিপলস পার্টির এমপি রুমানিয়ার রাজনীতিবিদ ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রেদার নেতৃত্বে মানবাধিকারসংক্রান্ত উপকমিটির এ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। প্রতিনিধি দলের অপর দুই সদস্য হলেন- সোসালিস্ট ও ডেমোক্রেটদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের এমপি জোসেফ উইডেনহোলজার এবং ইউরোপিয়ান কনজারভেটিভ ও রিফর্মিস্ট গ্র“পের ক্যারল কারাস্কি।