moinul-islam

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি: চলমান সংকট ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আগেই সতর্ক করে গেছেন প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসা৷দেশের সংকটের সমাধানে সাংবাদিক-আইনজীবীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো দলের ঊধের্্ব উঠে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন৷শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এবিএম মূসার ৮৪তম জন্মদিনে স্মরণসভা ও মুক্ত আলোচনায় তিনি এ আহ্বান জানান৷ এবিএম মূসা ও সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন এ সভার আয়োজন করে৷সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে ও রোবায়েত ফেরদৌসের পরিচালনায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, মানব জমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা ও বৈশাখী টিভির সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, এবিএম মূসার মেয়ে রুমা মূসা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সহসভাপতি কাজী রওনক হোসেন, সাংবাদিক আব্দুর রহীম, গোলাম মর্তুজা৷আরো উপস্থিত ছিলেন- প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার সহধর্মিণী সেতারা মূসা৷

এদিকে, প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার ৮৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা ও মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে তর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবাহান চৌধুরী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম৷ এক পর্যায়ে বক্তব্য শেষ না করেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন মইনুল ইসলাম৷জানা গেছে, স্মরণসভায় ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে বলেন এবং রাজনৈতিক বক্তব্য না দেয়ার জন্য তাকে অনুরোধ জানান৷ এসময় মইনুল ক্ষুব্ধ হয়ে তার বক্তব্য শেষ না করেই সভাস্থল ত্যাগ করেন৷

এ ঘটনায় বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সব জায়গায় রাগ করতে নেই৷ সবার রাগ করতে নেই৷ সব সময় রাগ করতে নেই৷ রাগ করার শক্তি লাগে৷ কোথায় রাগ করা যাবে তার একটা পরিমিতিবোধ থাকা উচিত্‍৷ এটা একটা স্মরণসভা৷ মূসাকে ভালবেসে দলমত নির্বিশেষে সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছি৷এর আগে তার বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, এখন কথা বলতে গেলে ভয় পাই৷ মূসা ভাই নীরব থাকা সমর্থন করেননি৷ এজন্য বলছি, আজকের এই সংকট ভয়বহ রূপ নেওয়ার আগেই সতর্ক করে গেছেন মূসা ভাই৷ এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেছিলেন৷ অস্ত্রের ভাষা যে রাজনীতির ভাষা হতে পারে না, এ কথাও জোর দিয়ে বলে গেছেন৷তিনি বলেন, আজকের সংকটের উত্‍স নির্বাচন৷ এই সমস্যার সমাধান তো প্রধানমন্ত্রীর হাতে৷ তিনি নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন৷ প্রধানমন্ত্রীকে সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে৷ নির্বাচন দিলে সন্ত্রাসী তত্‍পরতা চালাবার সুযোগ কারো থাকবে না৷ ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন বাদ দিয়ে পুলিশি কায়দায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ করছেন৷ এই অবস্থায় সুযোগ নিচ্ছে, সুবিধাবাদীরা৷

ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, আজকে আমরা সাংবাদিক-আইনজীবীরা নিজেদের শক্তি হারিয়ে দলীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছি৷ এতে আমরা নিজেরাই শক্তিহীন হইনি, পুরো জাতিকে শক্তিহীন করছি৷ গণতন্ত্র মাঠে মারা যাচ্ছে৷ গণতন্ত্র রক্ষার শক্তি রাজনীতিবিদরা নন৷ সাংবাদিক ও আইনজীবীদের এ কাজ করতে হবে৷এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো দলের ঊধের্্ব উঠে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি৷প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সাহসী ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করেছেন মূসা ভাই৷ তিনি সত্যকে সত্য বলেছেন৷ বিরোধিতা করলে, সেটাও ছিল তথ্যনির্ভর৷ আমরা এখানে বিতর্ক সৃষ্টি করতে আসিনি৷ তাই, তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোচনা করছি না৷প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর বলেন, সাংবাদিকদের জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে রাজনীতি এড়িয়ে যাওয়া যায় না৷ কারণ, রাজনীতির ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়েই সাংবাদিকের কাজ৷ এখন তো সাংবাদিক নেই; সব দলীয় কর্মী৷

চলমান সংকট সমাধানে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, একদল অপর দলকে অস্ত্র দিয়ে মোকাবেলা করছে৷ পার্থক্য একটাই, কারো অস্ত্রের লাইসেন্স আছে, কারো নেই৷ অস্ত্র দিয়ে অস্ত্রের মোকাবেলা করতে গেলে রক্তক্ষরণ হবে৷সংকট সমাধানের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, এই সংকটের সমাধান করতে হবে টেবিলেই৷ টেবিলের বাইরে সমাধান করতে গেলে যে পরিণতি হবে, সেটা আমাদের সামনেই দেখতেই পাচ্ছি৷ অভিজিত্‍ রায় হত্যা উদাহরণ হতে পারে৷দৈনিক মানব জমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, দেশের সংকট থেকে উত্তরণ রাজনীতিবিদরা করতে পারবেন না৷ এই সংকট উত্তরণ করতে পারতো সাংবাদিকেরা৷ কিন্তু আজ কি কোনো এমন সাংবাদিক আছেন, যিনি দুই নেত্রীকে বলবেন- এনাফ ইজ এনাফ (যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়)৷অসুস্থ দলবাজি আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে৷ আমিও সেই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াবো৷ কারণ, আমি নিজেও সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলছি না৷সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মূসা ভাই ছিলেন আমাদের সাংবাদিকতার বাতিঘর৷ তার জন্মদিনের আলোচনা জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগেই করা উচিত ছিল৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, শুধু সাংবাদিক নয়, এখন আমরা সবাই একচোখা হয়ে গেছি৷ আমদের সমস্ত বিবেক, অনুভূতি, বিবেচনা রুদ্ধ হয়ে গেছে৷ অনেকে গোটা সুশীল সমাজকে আঘাত করে মান্না ভাইয়ের সমালোচনা করছেন৷তিনি মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রশংসা করে বলেন, মান্না ভাইয়ের সমালোচনা করতে হলে রাজনীতিবিদ মান্নার সমালোচনা করতে হবে৷ তিনি সারাজীবনই রাজনীতি করেছেন৷ তার এই বক্তব্যের জন্য রাজনীতিবিদরা দায়ী৷ কারণ, আজকের রাজনীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদকেও বলতে হয়েছে, আন্দোলন করতে হবে৷ তাতে যদি দুয়েকটা লাশ পড়ে পড়ুক৷

তিনি মন্তব্য করেন, আমরা যারা সব সময়ই লাশের রাজনীতির বিরোধিতা করেছি, তাদের মুখে মান্না ভাইয়ের সমালোচনা মানায়৷ কিন্তু যারা হল দখল করে লাশ ফেলে ক্ষমতারোহণ করেছেন, তাদের মুখে মান্নার সমালোচনা মানায় না৷কলামিস্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার বক্তব্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিকদের সমালোচনা করে বলেন, মাহমুদর রহমান উপসর্গ নিয়ে ঢালাওভাবে সমালোচনা বন্ধ করতে হবে৷মান্নার ফোনালাপ বিকৃত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷প্রখ্যাত সাংবাদিক মূসার স্মৃতিচারণ করে আবুল মকসুদ বলেন, তিনি সাংবাদিক তৈরির কারিগর ছিলেন৷ তার অনুপস্থিতিতে আমাদের সাংবাদিক সমাজে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা অপূরণীয়৷