260020141102152202

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ মার্চ: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুর্নবিবেচনা) আবেদন শুনানির দিন ধার্যের আদেশ আগামী রোববার।শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আনা আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আজ এ আদেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন দাখিল করে তার আইনজীবী।সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি দায়ের করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। এ বিষয়ে তার কামারুজ্জমানের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকরে বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে ৪৪টি যুক্তি আনা হয়েছে। মূল ৪৫ পৃষ্ঠার আবেদনে মোট ৭০৪ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে।

গত ২৬ ফেব্র“য়ারি কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফাইড কপি পেয়েছে তার আইনজীবী। এর আগে গত ১৮ ফেব্র“য়ারি ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। গত বছরের ৩ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ কামারুজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেয়। বেঞ্চের অপর তিনজন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো.আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। গত ১৮ ফেব্র“য়ারি পূর্নাঙ্গ রায়ে এ বেঞ্চের বিচারপতিগণ স্বাক্ষর করেন। ৫৭৭ পৃষ্ঠার এ পুর্নাঙ্গ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।রায় প্রকাশের পর কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা গত ১৯ ফেব্র“য়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। লাল কাপড়ে মোড়ানো এ পরোয়ানার সঙ্গে কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও প্রেরণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ঢাকার জেল সুপার ফরমান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের সূযোগ রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন,মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান তার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করায় ফাঁসির কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে।কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে তিনি তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।তিনি বলেন, আমি কামারুজ্জামানের রিভিউ পিটিশন শুনানির দিন ধার্যের জন্য চেম্বার আদালতে যাব।সাংবাদিকদের এক পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কামারুজ্জামান তার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দায়ের করার পরই ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ কথা কাদের মোল্লার রিভিউয়ের রায়ে বলা আছে।এদিকে দুপুরে আগামী রোববার রিভিউ শুনানির দিন ধার্য করার শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আপিল বিভাগ কবে শুনবে তা জানা যাবে রোববার।কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতের রায় রিভিউয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন।এরপর রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির তারিখ চেয়ে আবেদন করলে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আগামী রোববার আদেশের দিন ঠিক করে দেন।অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পরে বলেন, চেম্বার আদালতে শুনানিতে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আমরা বলেছি, এটা শুনানি হওয়া দরকার। আদালত বলেছে রোববার তারিখ জানিয়ে আদেশ দেওয়া হবে।একাত্তরে ময়মনসিংহের আল বদর প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়। গতবছর আপিল বিভাগও তার ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে।ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর গত ১৯ফেব্র“য়ারি তার মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারক। এরপর মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারাগারে, কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা যায়। আর আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করায় মৃত্যু পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে গেছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান।আগের দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন শিশির মনিরসহ পাঁচ আইনজীবী। তারা কারাগারে কথা বলেন প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা।কামারুজ্জামানের অন্যতম আইনজীবী তাজুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে একজন বিচারক দণ্ডের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন, তার পয়েন্টগুলো ধরেই তারা রিভিউ আবেদন করছেন।এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মোট সাতটি অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়।এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে সোহাগপুর গণহত্যা ও ধর্ষণ এবং চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফা তালুকদারের হত্যার ঘটনা রয়েছে।প্রথম অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ির কালীনগরের বদিউজ্জামানকে হত্যা এবং সপ্তম অভিযোগে রোজার দিনে টেপা মিয়ার ছেলেসহ পাঁচজনকে হত্যার কথা রয়েছে। এ দুই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন দেয়।

এছাড়া শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতনের ঘটনায় দ্বিতীয় অভিযোগে তার ১০ বছরের সাজা হয়।পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগ থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনাল।আপিলের রায়ে প্রথম অভিযোগ থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দ্বিতীয় ও সপ্তম অভিযোগে সাজা বহাল থাকে।তৃতীয় অভিযোগে আসামির অপরাধের বিষয়ে চার বিচারপতি একমত হলেও মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে।বিচারপতি ওয়াহহাব মিয়া সোহাগপুর গণহত্যায় কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করলেও এ অভিযোগে তিনি তাকে যাবজ্জীবন দণ্ডের পক্ষে মত দেন। সেই সঙ্গে ১, ২, ৪, ৭ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) এসকে সিনহা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী সর্বোচ্চ সাজার পক্ষে মত দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আসামির দণ্ড নির্ধারিত হয় মৃত্যুদণ্ড।চতুর্থ অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়।

ঊৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদন জমা দেওয়ার পর কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা ৪৪টি যুক্তিতে ৪৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন দিয়েছি। আমরা মনে করি, যুক্তিগুলো বিবেচনা করে দেখলে আদালতের রায় ভিন্ন হতে পারে।১৯৭৩ সালে দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। এখন তিনি যুদ্ধাপরাধ মামলায় লড়ছেন জামায়াত নেতাদের পক্ষে, যে দলটি একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতায় যুদ্ধাপরাধে অংশ নেয় বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছে।বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব বলেন,আপিল বিভাগে হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন। দেশের পরিস্থিতিও ভিন্ন রকম। আমরা আইনজীবীরা অনেকে এখন বাড়িতে থাকতে পারি না। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত সময় দিয়ে এ আবেদনের নিষ্পত্তি করা হবে বলে আমরা আশা করি।এর আগে আপিল বিভাগে আসা যুদ্ধাপরাধের প্রথম মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের সাজা বাড়িয়ে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়। তার রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেলে দণ্ড কার্যকর করা হয় ১২ ডিসেম্বর।আর আপিলে আসা দ্বিতীয় মামলায় জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত, যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশিত হয়নি।