বেগম খালেদা জিয়া-Khaleda Zia (2)

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ মার্চ: তিপ্পান্ন দিন পর নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসে যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বললেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে কষ্ট স্বীকার করে হলেও বৃহত্তর স্বার্থে এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ২০-দলীয় জোটের আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতি পর্যন্ত না পৌঁছা পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শুক্রবার বিকেলে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। তবে যৌক্তিক পরিণতি বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে খালেদা জিয়া কোনো ব্যাখ্যা দেননি।আন্দোলন (হরতাল-অবরোধ) চলার কারণে সাময়িক কষ্ট স্বীকার করতে জনগণের প্রতি অনুরোধও জানান খালেদা জিয়া।খালেদা জিয়া লিখিত বক্তব্য বলেন, এই সরকারের সময় দেশের প্রতিটি জনপদে আজ স্বজন হারানোর কান্না চলছে। কে কখন গুম-খুন হবে, তা কেউ জানে না। এর পরও যাঁরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানান বিএনপির চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশানে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তির দিন ২০-দলীয় জোটের তরফ থেকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশি বাধায় তিনি তাঁর কার্যালয় থেকে বের হতে পারেননি। কার্যালয়ের গেটের ভেতরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি বলেন, অবরোধ চলবে। ওই ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত অবরোধ চলছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বিবৃতির মাধ্যমে হরতাল কর্মসূচি। কার্যালয়ে থাকার সময় গত ১৯ জানুয়ারি রাতে প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। ৫৩ দিন পর আজ আবার সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে ডাকা টানা অবরোধের ৬৭তম দিনে নিজের গুলশানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, যার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

তিনি বলেন, শ্বাসরূদ্ধকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং একের পর এক উসকানিমূলক আচরণ করে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটানো হচ্ছে। কাজেই যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছানো না পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।সরকারের দমন-পীড়ন জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত’ করেছে মন্তব্য করে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় তিনটি দফায় পুরনো দাবিগুলোই নতুন করে তুলে ধরেন ২০ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা ।তার তিন দফা হলো-ক. আন্দোলন দমনের জন্য সারাদেশে বিরোধী দলের যে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।খ. গুম, খুন ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। পুলিশি ও যৌথ বাহিনীর হয়রানি বন্ধ করতে হবে। নেতাকর্মীদের বিরেুদ্ধে দায়ের হয়রানিমূলক সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। সেই সঙ্গে সভা-সমাবেশ মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত সব প্রকার বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। গ. সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে অবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের বিশ্বাস এই প্রক্রিয়াতেই আমরা সমস্যা সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতেই বিএনপি ও শরিকরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। ভোট েেঠকাতে তাদের আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতায় সারা দেশে নিহত হন শতাধিক মানুষ।বিএনপিহীন ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শুরুতে জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আলোচনায় আসার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানালেও পরে বিএনপির সঙ্গে সব ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওই মহা কারসাজির নির্বাচনী প্রহসনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শেখ হাসিনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমঝোতা হলে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের অঙ্গীকারও করেছিলেন।

কিন্তু যথারীতি তিনি তার সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন। আসলে প্রতিশ্র“তি রক্ষার কোনো দৃষ্টান্ত তাদের নেই।পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ট্রায়াল অ্যান্ড এরর-এর মধ্য দিয়ে যে কোনো পদ্ধতিই সংশোধিত ও পরিশোধিত হতে পারে। প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত ত্রুটি-বিচ্যুতিও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংশোধনের সুযোগ ছিল এবং উচিত ছিল সেটাই করা।গত মহাজোট সরকারের সময় ওই সংশোধনীর ফলে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক পন্থায়’ ক্ষমতা হস্তান্তরের সব পথ প্রায় রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করে এ বিষয়টিকেই সব সংকটের মূল উৎস’ হিসাবে তিনি চিহ্নিত করেন।

নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট পর শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টায় খালেদা জিয়ার এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। গত ১১ ফেব্র“য়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি থাকলেও এ সংবাদ সম্মেলনের কারণে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কে খালেদার ওই কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয় পুলিশ।এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি এই কার্যালয়েই খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। এরপর একাধিকবার দলের শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে বিবৃতি পাঠালেও তিনি সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন’কে সরকার জঙ্গিবাদ বলে দেশ-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।ক্ষমতাসীনরা তাকে ক্রমাগত জেল-জরিমানার হুমকি দিচ্ছে এবং অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রধান।তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জঙ্গিবাদ বলে দেশ-বিদেশে অপটওচার চালাচ্ছে। জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এখন তাদের পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।খালেদা জিয়া বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে তারা। বিভিন্ন হামলার পেছনে তারাই দায়ী বলে প্রমাণ হয়েছে।দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের উদাহরণ টেনে বিএনপি প্রধান বলেন, আমাদের যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে গত তিনদিনে স্বীকার করেনি সরকার। মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও আটক করে পরে নাটক সাজিয়ে ফেরত দিয়েছে।এসময় সালাউদ্দিন আহমেদকে ফেরতের দাবিও তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা অভিযোগ করে বলেন, আমাকে হীন পন্থায় যেভাবে রেখেছে দেশবাসী সব জানেন।সংকট নিরসনে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি শর্ত দিয়ে বলেন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সভা-সমাবেশ, মিছিল কর্মচি পালনের ওপর থেকে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এছাড়া, সংলাপের আয়োজন করতে হবে।তিনি বলেন, সমঝোতার কথা যারা বলে- এই সরকার তাদের অসম্মান করে।গাজীপুরের জনসভা বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি ও তার আদালতে হাজিরার বিষয়ে সমস্যা তৈরি করা হয়েছে বলেও সরকারের প্রতি অভিযোগ বিএনপি চেয়ারপারসনের।খালেদা বলেন, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তাই যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দেশে গভীর সংকট চলছে মন্তব্য করে এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন ২০ দলীয় জোটনেতা।তিনি বলেন, দেশ আজ গভীর সংকটে। এর জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ, আরও স্পষ্ট করে বললে শেখ হাসিনা।বক্তব্যের শুরুতেই তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান।

খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ একতরফা সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ করে দেয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগই তারা রাখেনি।তিনি বলেন, মহাবিতর্কিত জাতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের নাম-নিশানা মুছে দিতে চেয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অবৈধ সরকার গঠন করেছে। প্রহসনের নির্বাচনের আগে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। যথারীতি প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করেছিলেন। আসলে প্রতিশ্র“তি রক্ষার ইতিহাস তাদের নেই।দুই মাসের আন্দোলনে জনসমর্থন পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়া।খালেদার বক্তব্য শুরুর আগেই সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তার বক্তব্য শেষ হতেই এক নারী সাংবাদিক প্রশ্ন করে ফেলেন।দুই মাসের হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে এতোগুলো মানুষ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে কী পেলেন? আন্দোলনের অর্জন কী?’- মর্মে প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আন্দোলনে জনগণের সমর্থন পেয়েছি।এরপর আর কোনো কথা না বলেই সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

তিনি বলেন, আলোচনার কথা বললে তার ব্যবস্থা করা সরকারের ওপর বর্তায়। এক তরফাভাবে তারা যে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে, তা এক তরফাভাবে বাতিলও করে দিতে হবে।খালেদা জিয়া বলেন, দেশে একাত্তরের প্রেতাত্মারা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। হিটলারের যেমন শেষ রক্ষা হয়নি, এখানেও হবে না। ক্ষমতাসীনেরা প্রতিনিয়ত আমাকে জেল-জরিমানাসহ নানা হুমকি দিয়ে চলছে। কোনো লাভ হবে না।বিএনপি প্রধান বলেন, শেখ হাসিনা যদি এবার তার প্রতিশ্র“তি রাখেন, তাহলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। ক্ষমতাসীন দল পদত্যাগ করে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন দিলে আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে ৪৫তম স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারবো।তিনি বলেন, এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়। এই আন্দোলন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার। এই আন্দোলন ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দেশ গড়ার।খালেদা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রক্রিয়ায় চললে খুব তাড়াতাড়ি আমরা সফলতায় পৌঁছাতে পারবো।তিনি বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কারা তাদের পক্ষে দেশ পরিচালনা করবে।

আন্দোলনে এখনও যারা নিষ্ক্রিয় রয়েছে- তাদের যার যার জায়গা থেকে আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে আমরা সফল হবো।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকার ব্যবহার করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যখন আমরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি, তখন জনবিচ্ছিন্ন সরকার পুলিশ,র‌্যাব বিজিবি সদস্যদের বিরোধী দল নিপীড়নের কাজে ব্যবহার করছে এবং বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশ আজ গভীর সংকটে। এই সংকট আওয়ামী লীগের তৈরি, আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনার তৈরি।খালেদা জিয়া বলেন, তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পর গণতন্ত্রের কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার তাদের নেই।৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রহসন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা তখন বলেছিল, সেটা নিয়মরক্ষার নির্বাচন। সমঝোতার মাধ্যমে মধ্যবর্তী নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল। কিন্তু সে কথা রাখেনি।বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারের অধীন নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা জাতীয় বেইমানে পরিণত হয়েছে। এমন অনেক কারণের পরও তাদের প্রতিশ্র“তির কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর মধ্যবর্তী নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। কিন্তু কোনো কথাই তারা রাখেনি। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কোনো সুযোগই তারা রাখেনি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে গণতন্ত্রের নাম নিশানা ধ্বংস করে দিয়েছে। আলোচনার কথা বললে তার ব্যবস্থা করার দায় সরকারের বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, আলোচনার কথা বললে তার ব্যবস্থা করা সরকারের ওপর বর্তায়। এক তরফাভাবে তারা যে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে, তা এক তরফাভাবে বাতিলও করে দিতে হবে।তিনি বলেন, এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়। এই আন্দোলন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার। এই আন্দোলন ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দেশ গড়ার।তিনি বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কারা তাদের পক্ষে দেশ পরিচালনা করবে।খালেদা জিয়া বলেন, তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পর গণতন্ত্রের কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার তাদের নেই।হুঁশিয়ার জানিয়ে তিনি বলেন, সালাহউদ্দিনকে মুক্তি না দিলে পরিণতি ভালো হবে না। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তা জনগণ জানে।চলমান সহিংসতা নিয়ে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তারা কিছু যানবাহন রাস্তায় নামায়। পেট্রোলবোমা মেরে নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। তারা তাদের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছে।

খালেদা বলেন, শীর্ষস্থানীয়সহ সারাদেশে ১০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। রিজভীকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসা সরকারের কাছে জনগণের ভোটের যে কোনো মূল্য নেই তারা তা প্রমাণ করেছে।প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের কোনো পদক্ষেপ নেই উল্লেখ করে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। যার ফলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া ব্যাহত হচ্ছে। অথচ সরকারদলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে সহিংসতা করার পরেও পার পেয়ে যাচ্ছে।খালেদা আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের দেখামাত্র গুলি করার বেআইনী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার নামে দলীয় লোকজনকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। দেশের জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এমন সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৫২ দিন পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন। গত ৩ জানুয়ারি থেকে নিজের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি প্রধান। ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচি পালন করছে তার দল।