বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ মার্চ: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুলের রায়ের দিন আগামী ৫ এপ্রিল পুননিরর্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করতে বলা হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীর ‘নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা বাতিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের আবেদনের রায় আবার পিছিয়ে গেল।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ আগামী ৫ এপ্রিল রায়ের নতুন দিন ঠিক করে দিয়েছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন চলছে, যাতে সম্পাদক পদে লড়ছেন এ মামলায় খালেদার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদেও আছেন।নির্বাচনের বিষয়টি জানিয়ে দুপুরের দিকে খালেদার অপর আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, মামলার ফাইলিং ল’ইয়ার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছেন। আমরা শুনানির জন্য সময় চাই।

জবাবে আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, একই এজাহার থেকে উদ্ভূত অন্য দুটি আবেদন হাই কোর্টের দুটি বেঞ্চে নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু আমরা উভয়পক্ষকে শুনতে চাই। আবেদনকারীকে না শুনে আমরা রায় দিতে চাই না।আপনারা এসেছেন, আমরা সময় দিচ্ছি। আপনারা শুনানি শুরু করেন। উভয়পক্ষকে শুনে, আইন দেখে, আমাদের যতটুকু বুদ্ধি-বিবেচনা আছে- সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা রায় দেব।আদালত বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও এজে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করতে রাজি না হওয়ায় আদালত আবেদনের অন্তত একটি অংশ পড়তে বলে। মোহাম্মদ আলী এ সময় বলেন, আমি এর জন্য অথরাইজড নই।

জবাবে বিচারক বলেন, অথরাইজড না হলে শুনানি পেছানোর কথা বলছেন যেএ পর্যায়ে বদরুদ্দোজা বাদল আবেদনের একটি অংশ পড়ে শোনালে আদালত রায়ের নতুন তারিখ দেয়।স্থগিতাদেশের কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকা এ মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশন সচলের উদ্যোগ নিলে হাই কোর্টের দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয় গত ৩ মার্চ। দুই দিন শুনানির পর আদালত ১০ মার্চ রায়ের দিন রাখে।

কিন্তু ৮ মার্চ খালেদার পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতে গিয়ে শুনানির সুযোগ চাইলে আদালত রায়ের জন্য ১৫ মার্চ দিন রেখে এর মধ্যে শুনানি করতে বলে।এর মধ্যেই আবেদনটি অন্য আদালতে নিতে গত ১১ মার্চ হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন খালেদা।সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও ১০ মন্ত্রীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি শাহবাগ থানায় এই মামলা হওয়ার পর ৫ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি করেছেন।

ওই বছরের ১৬ অক্টোবর খালেদার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে মামলা কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাই কোর্ট।হাই কোর্টের ওই আদেশ আপিলেও বহাল থাকায় আটকে যায় মামলা।২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি এ মামলা থেকে স্থায়ী জামিন পান বিএনপি চেয়ারপারসন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তবে আসামিপক্ষ শুনানিতে অংশ নেননি। গত ৪ মার্চ তারা সময়ের আবেদন জানালেও আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

তিনদিনের রুল শুনানি শেষে গত ৫ মার্চ এর রায় দেওয়ার জন্য ১০ মার্চ দিন ধার‌্য করেছিলেন আদালত। তবে এর আগেই আসামিপক্ষের আবেদনে গত ৮ মার্চ রায়ের দিন পিছিয়ে ১৫ মার্চ পুননির্ধারণ করা হয়।এদিকে এ মামলার রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ বদলের আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গত ১১ মার্চ আদালত পরিবর্তন করে মামলাটি অন্য আদালতে বদলির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন জানান।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আবেদনে বলেছেন, তারা গত ৪ মার্চ রুলের ওপর শুনানি পেছানোর আবেদন জানালেও আদালত তাদের কথা শোনেননি। দুদকের আইনজীবীর শুনানি নিয়েই গত ৫ মার্চ আদেশের দিন ১০ মার্চ ধার্য করেছিলেন। পরে ৮ মার্চ আমাদের পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের আবেদনে রায়ের দিন পিছিয়ে ১৫ মার্চ ধার্য করা হয়েছে। খালেদা জিয়া এ বেঞ্চে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় বেঞ্চ পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

জরুরি অবস্থার সময়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম। মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এতে চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মরহুম), অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরহুম), শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল।

পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা দায়ের ও কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না জানতে চেয়ে সরকারকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। পরে সময়ে সময়ে মামলার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়।এ মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।

কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে (সিএমসি) বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম। একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়।মামলার অভিযোগে বলা হয়, কয়লা উত্তোলনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা সিএমসির সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করায় সরকারের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।