akm-1423741211

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ১৫ মার্চ: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড হিটলার ও মুসোলিনকেও হার মানিয়েছে। তাই ভবিষ্যতে তাদের ভাগ্যে কী আছে তা বলা কঠিন।রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সিভিল রাইটস সোসাইটি আয়োজিত চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, আবদুল হাই শিকদার, আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আজাদ প্রমুখ।তিনি বলেন, আজ সাধারণ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। পুলিশ বাহিনী দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। সংবাদপত্র বন্ধ করে গণমাধ্যকর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকারের এসব কর্মকাণ্ড হিটলার ও মুসোলিনকেও হার মানিয়েছে।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা কোনো ভাবেই সরকারের এসব কর্মকাণ্ড মেনে নেবেন না। আজ হোক কাল হোক জনগণ জেগে উঠবে। আর তখন কী হবে তা বলা কঠিন। আওয়ামী লীগের মতো একটা সিনিয়র দল যদি এমন করে তাহলে ভবিষ্যতে তাদের ভাগ্যে কী আছে তা বলা কঠিন।চলমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, এবার ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন না করে ক্ষমতা দেখাচ্ছেন- অহমিকা করছেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, দেশে যে হারে গুম-খুন-অপহরণ-নিখোঁজ চলছে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে তাতে কেউই নিরাপদে নেই। পেট্রোল বোমার আগুনে হত্যা ও ক্রসফায়ারে বিচারবহির্ভূত হত্যা- কোনোটিই জনগণ পছন্দ করে না উল্লেখ করে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, কতোজন পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মরেছে, কতোজনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে, গুম-অপহরণ করা হয়েছে তা জানতে হাইকোর্ট রুল জারি করতে পারেন। তিনি এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে বলেন, বিচারপতিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে কারা এসব পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ মারছে, কারা ক্রসফায়ার চালাচ্ছে, মানুষ গুম-অপহরণ করছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, ৫ জানুয়ারির ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও ভারতের কংগ্রেস ছাড়া কেউ আর তাদের সমর্থন করেনি। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার, মৌলিক ও নাগরিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। অবিলম্বে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এজন্য জনগণকেও জেগে উঠতে হবে।পুননির্বাচন দাবি করে বি. চৌধুরী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় এই সরকারের প্রধানই বলেছিলেন সেটা নিয়মরক্ষার নির্বাচন। কিন্তু এখন ওই কথা তারা ভুলে গেছেন, অস্বীকার করছেন। তিনি অস্বীকার করলেও স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষী আছেন।

বি. চৌধুরী অভিযোগ করেন, একটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা নেওয়া সরকার মানুষের ঘুম হারাম করে ফেলেছে। এ সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। আমরা জননির্বাচিত সরকার চাই। এমন নির্বাচন চাই, যে নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে এবং সব মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তিনি বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের মতো একজন সাবেক মন্ত্রী,রাজনৈতিক নেতা, ভালো মানুষ এভাবে হারিয়ে গেলেন? সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা তার নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করে বলছেন, খালেদা জিয়া ময়লার বস্তার সঙ্গে তাকে পাচার করে দিচ্ছেন। এটা যে কতো বেশি অহংকার, অহমিকা আর ক্ষমতার কথা, তা যে কারোরই বোধগম্য। তিনি শুধু ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন।

শুধু সালাহউদ্দিন আহমেদই নয়- সরকার তিন বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ধরতে পারেনি অভিযোগ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন এ মহাসচিব বলেন, নিখোঁজের তালিকা আর কতো বড়ো হবে? ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেকের খোঁজ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। এটা আমাদের জন্য লজ্জার নয়, ঘৃণারও ব্যাপার। উচ্চ আদালত সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করে হাজির করার নির্দেশ দিলেও সরকার আদালতের কথায়ও কর্ণপাত করছে না অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, তারা এখন কেবলই ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে যে বক্তব্য দেন, তা শুনলে কেবল লজ্জাই পাই না, দুঃখও লাগে। এই ধরনের সংসদ আমরা কেউ চাই না। আসলে ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হয়েছে, সে সংসদে এ ধরনের কথা হবে এটাই স্বাভাবিক। দেশে কী ধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে এটা এখন সবাই বুঝে গেছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার যেভাবে ক্ষমতা দেখাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে তাদের মন্ত্রী-এমপি আর নেতাকর্মী-সমর্থকরা ছাড়া আর কেউ দেশে থাকতে পারবে না, সবাই নিখোঁজ-গুম হয়ে যাবে। জনগণকে এই অহমিকার বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। সভায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুস্থ থাকলে কিছু ভালো কথাও বলেন, তখন শুনতেও ভালো লাগে। কিন্তু মাঝে মধ্যে এমন কিছু কথা বলেন, তখন আরও সমস্যার সৃষ্টি হয়। তিনিই এ সমস্যার সৃষ্টি করেছেন, তাকেই এর সমাধান করতে হবে।গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বলেন, দেশে যে হারে খুন-গুম-অপহরণ হচ্ছে তাতে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন এবং এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি সংকট সমাধানের জন্য কোন ধরনের উদ্যোগ না নেয় তবে খুব শিগগিরই জাতীয় পর্যায়ে একটি মারামারির হতে পারে যাতে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। তিনি বলেন, চলমান সংকট একটি রাজনৈতিক সংকট। এর সমাধান রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে। যদি তা না হয় তবে খুব বেশি দূরে নয় কাছাকাছি সময়ে জাতীয় পর্যায়ে মারামারির আভাস দেখছি। পাকিস্তান-ভারতের স্বাধীনতার জন্য যে রকম মারামারি হয়েছিল সেইরকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে।ড. এমাজউদ্দীন দাবি করে বলেন, আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র কোনদিন একসঙ্গে যায়নি আর যাবেও না। এটা হল আমাদের সব চেয়ে বড় দুঃখের কথা।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এমাজউদ্দীন বলেন, এখনো সময় আছে অতীত ও বর্তমানের দিকে তাকিয়ে এবং আপনার আশপাশের লোকগুলো কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন। তারা কেউ আপনার পাশে থাকেনি। আগামীতেও থাকবে না। আপনি ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখুন। মুসোলিনি কিভাবে মারা গেছে তার মৃত্যুর খবর কেউ জানেনা।প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এমাজউদ্দীন বলেন, তারানকো আলতু ফালতু কোন লোক না। তিনি জাতিসংঘের অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন কর্মকর্তা। তারা লোক চিহ্নিত করতে ভুল করেন না। তারানকো যদি বাংলাদেশের জন্য রক্ষী বাহিনীর বার্তা নিয়ে আসেন তবে সেটা আমাদের জন্য ভাল হবে না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে যতটুকু এগিয়ে গেছি। সেটা অব্যাহত থাকবে না।তিনি বলেন, এভাবে দেশ চালানো যায় না। দেশ চালাতে অনেক বই পড়তে হয়। বিরোধী দলের নেতা সম্পর্কে বাজে কথা বলে জনগণকে কাছে রাখা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী পত্রিকা বাংলাদেশের রাজনীতিকে টক্সিক রাজনীতি বলেছে।