ICC-Cricket-T20-ODI-and-Test-Team-Ranking-2013-asportsnews

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ মার্চ: বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা বাংলাদেশ। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভ ঝেড়েছেন খোদ আইসিসির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালও। তবে আইসিসি সভাপতির মন্তব্য ও অভিযোগকে দুঃখজনক, ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন একই সংস্থার প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন।বিষয়টি তো এখন গোলমালের পর্যায়েই চলে গেল। কোনো সংস্থার সভাপতির মন্তব্যে যখন সেই সংস্থারই প্রধান নির্বাহী প্রতিক্রিয়া দেখান, তখন গোলমালটা কিন্তু বেশ স্পষ্টই হয়ে ওঠে।

একজন আম্পায়ারদের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আরেকজন সেই বিতর্কিত আম্পায়ারদের আগলে রাখার চেষ্টা করছেন! এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রিচার্ডসন বলেছেন, আইসিসি জনাব মুস্তাফা কামালের মন্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। ওনার বক্তব্য খুবই দুঃখজনক। হতে পারে এটি তাঁর ব্যক্তিগত মত, কিন্তু আইসিসির সভাপতি হিসেবে ম্যাচ অফিশিয়ালদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে তাঁর আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। কারণ, তাঁদের সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।রুবেল হোসেনের বলে রোহিত শর্মা আউট হলেও সেই বলটি নো বল ডেকে সমালোচনার মুখে পড়েছেন দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ও আলিম দার। বলটির উচ্চতা কোমরের বেশি ছিল কি ছিল না, এ নিয়ে যখন বিতর্ক, আইসিসির প্রধান নির্বাহী তখন সিদ্ধান্তটিকে ৫০: ৫০ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বিবৃতিতে বলেছেন, নো বলের সিদ্ধান্ত ছিল ৫০: ৫০ সম্ভাবনা।খেলাটার চেতনা বলে, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং সেটাকে সম্মান করা উচিত। ম্যাচের আম্পায়ারিংকে বাজে আম্পায়ারিং’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছিলেন, অনেক সিদ্ধান্তই ভুলভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে। তবে সেটা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত, তা আমি জানি না।আইসিসি সভাপতির এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রিচার্ডসন বললেন, ম্যাচ অফিশিয়ালদের অ্যাজেন্ডা ছিল কিংবা তাদের সামর্থ্যের বাইরে অন্য কিছু করেছে, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।ওদিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, আমার মতে, তিনি (মুস্তফা কামাল) এসব ব্যাপার আইসিসি সভায় তুলতে পারতেন। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতেছি। লিগ পর্বেও ভারত সবগুলো ম্যাচ জিতেছে।এখন সময় সামনে তাকানোর…পরের সভায় (আইসিসি) এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করব।

আইসিসিতে ভারতের প্রভাব ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে-এমন অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ও বিসিবির সাবেক সভাপতি মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি না। কেউ যদি এমন ফল আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়, কেউ তা মেনে নিতে পারে না।বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রুবেল হোসেনের বল নো ডাকা নিয়ে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছে আইসিসি। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তটি আম্পায়ারদের ফিফটি-ফিফটি কল’ ছিল উল্লেখ করলেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।আম্পায়াররা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে নেমেছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটাকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে জোরালো ভাষায় তা প্রত্যাখ্যান করেন রিচার্ডসন।

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়ে আইসিসির সভাপতি এবং বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের করা মন্তব্যকে খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দেওয়া হয় আইসিসির বিবৃতিতে।আইসিসির সভাপতি হিসেবে আইসিসির ম্যাচ কর্মকর্তাদের (আম্পায়ার) সমালোচনা করার ক্ষেত্রে তার আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। তাদের (আম্পায়ারদের) সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না।গত বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হারে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারতের ইনিংসের ৪০তম ওভারে বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি দেন আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গৌল্ড।

ওভারের চতুর্থ বলটি ফুলটস দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন। বলটিতে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ইমরুল কায়েসকে ক্যাচ দেন ভারতের রোহিত শর্মা। তবে পাকিস্তানের আম্পায়ার দার বোলিং প্রান্তে থাকা ইংল্যান্ডের আম্পায়ার গৌল্ডকে বলটি কোমরের ওপরে ছিল বলে সংকেত দেন। গৌল্ড তখন নো ডাকলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।বিষয়টি নিয়ে মাঠের আম্পায়াররা তৃতীয় আম্পায়ারেরও সহায়তা চাননি। আইসিসির বিবৃতিতে নো বলের সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিষয়টি ফিফটি-ফিফটি বলে উল্লেখ করা হলেও কেন আম্পায়াররা টিভি রিপ্লে দেখতে চাননি তার ব্যাখ্যা দেয়নি আইসিসি।

টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, বলটি কোমরের ওপরে ছিল না। তখন টিভি ধারাভাষ্যকাররাও বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।আম্পায়ারদের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে ক্রিকেট পণ্ডিতদের অনেকেই সমালোচনা করেন। ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা।অন্য অনেকের মতো আইসিসি সভাপতি মুস্তফা কামালও বাংলাদেশের হারের জন্য আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক আচরণকেই দায়ী করেন। আম্পায়াররা বাংলাদেশকে হারাতে প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছিল উল্লেখ করে কামাল আইসিসিকে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ বলে অ্যাখ্যা দেন। প্রয়োজনে আইসিসির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার কথাও বলেন তিনি