Thakurgaon Deep Tubewells Pic_2

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ২৩ মার্চ: বৈদ্যুতিক সংযোগ না পাওয়ায় কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে চালু হচ্ছে না শতাধিক গভীর নলকূপ। এ কারণে চলতি ভরা বোরো মৌসুমে চারা রোপণ, আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় এক বছর আগে ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ উপজেলায় ১০৭টি গভীর নলকূপ বসানো হয়। প্রতিটি গভীর নলকূপ চালুর জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কৃষকের কাছ থেকে লক্ষাধিক করে টাকা জামানত আদায় করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি আর গড়িমসিতে এখনো বৈদ্যুতিক সংযোগ পায়নি ১০১টি গভীর নলকূপ। ফলে ভরা বোরো মৌসুমে নলকূপগুলো চালু না হওয়ায় এখনো অনেক আবাদি জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে অনেকে নতুন করে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি সেচ দিয়ে চারা রোপণের চেষ্টা করছেন। কৃষকদের দাবি, এবার অনেক জমিতে দেরিতে চারা রোপণের ফলে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনও কমে আসবে। এছাড়াও খরচও বেড়ে যাবে দ্বিগুণ। সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খোচাবাড়ী গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন, নজরুল ইসলাম, আবুল কাশেম জানান, তাদের গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ৮ মাস আগে। গভীর নলকূপে আবাদের আশায় তারা শ্যালোমেশিন বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু এখনো তাদের বেশ কয়েক বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে।

অপর কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, এবার শ্যালো মেশিনে আবাদ করায় তার বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তার ওপর দেরিতে আবাদ করায় এবার ফলনও কম হবে। একই অবস্থা জেলার পীরগঞ্জ উপজেলাতেও। ওই উপজেলায় এখনো চালু হয়নি ১৮টি গভীর নলকূপ। ফলে বিপাকে পড়েছেন এখানকার অনেক কৃষক।

Thakurgaon Deep Tubewells Pic_1পীরগঞ্জের ভোমরাদহ গ্রামের নতুন গভীর নলকূপের জন্য জমি দানকারী জয়ন্ত সরকার বলেন, কৃষকরা অল্প খরচে সেচ সুবিধা পাবে বলে নলকূপ স্থাপনে জমি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়াতে ওই সুবিধা পাচ্ছে না কৃষকরা। একই এলাকার কৃষক দিপু রায়, জয়শ্রী জানান, গভীর নলকূপ চালু হলেও তাদের সেচ খরচ অনেক কমে যাবে। গভীর নলকূপের আওতায় এ এলাকার প্রায় ২৫০ বিঘা জমিতে আবাদ হবে বলে তারা জানান। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, একটি নলকূপটি চালু না হওয়াতে সেখানে ১০টি শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে বিঘা প্রতি প্রায় হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।

এসব বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম খালেকুজ্জামান জানান, বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কোনো আবেদন আমাদের কাছে জমা নেই। আর যেগুলোর জন্য আবেদন এসেছিল ইতোমধ্যেই সে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ঠাকুরগাঁও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুর রহমান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবি অস্বীকার করে বলেন, গভীর নলকূপগুলো বসানোর পরেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তারা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গরিমসি করছেন।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়া ১০১টি গভীর নলকূপের আওতায় ৪ শতাধিক কৃষকের তিন হাজার হেক্টর আবাদি বোরো জমি রয়েছে। এ বছর জেলায় ৬১ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ থেকে উৎপাদন হবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৩ মেট্রিক টন ধান।