1427016023

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ মার্চ: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে এটা শতভাগ নিশ্চিত বলে দাবি করেছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। সোমবার গুলশানস্থ নিজ বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।সাবেক এই সাংসদ বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আজ ১৩ দিন যাবৎ আমি ও আমার পরিবার অস্থিরতার মধ্যে আছি। আমি আবারো বলছি,‘ আমার স্বামী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। যা শতভাগ নিশ্চিত।

তিনি বলেন, স্বামীকে ফিরে ফেতে আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায় বার বার অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন । আমি বিশ^াস করি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেই তাকে ( সালাহ উদ্দিন) সুস্থ অবস্থায় ফেরত পাবো।গত ১০ মার্চ থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালা হউদ্দিন আহমেদ ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। সোমবার সকালে গুলশানের বাসায় সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সহমর্মিতা জানাতে আসলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি একথা জানান।

হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘১৩ দিন হয়ে গেছে- এখনো আমার স্বামী নিখোঁজ। কিভাবে কোথায় আছেন- কিছুই জানি না। আমি শতভাগ নিশ্চিত উত্তরার বাসা থেকে আমার স্বামীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। আমাদের কাছে অনেক সাক্ষ্য প্রমাণ আছে, যা ইতিমধ্যে মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি, এখনো জানাচ্ছি- তিনি যেন নির্দেশ দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমার স্বামীকে জনসমক্ষে হাজির করে। সোমবার সকাল পৌনে ১১টায় গুলশানের ৭২ নং সড়কের ৭ নম্বর প্লাটিনাম রেসিডেন্স এর এপার্টমেন্টে বি চৌধুরী ও তার ছেলে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী আসেন। তারা নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন। সন্তানদের খোঁজ-খবর নেন।

হাসিনা আহমেদ আবেগময় কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা স্বামীকে ফিরে পেতে আমি সকলের সহযোগিতা চাই। আমরা বিশ্বাস আছে- সকলে সহযোহিতা করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার স্বামী নিশ্চিত আমার কাছে ফিরে আসবেন।সাংবাদিকদের কাছে সা্বকে রাষ্ট্রপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘১৩ দিন ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তিনি হারিয়ে যাবেন। সরকারের দায়িত্ব তাকে খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। সরকার তা করতে পারেনি, এটা তাদের চরম ব্যর্থতা। একই সঙ্গে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের আবেদনে প্রধানমন্ত্রীর সাড়া দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী আমাকে বলেছেন, তিনি শতভাগ নিশ্চিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। তারা ডিবি পরিচয়ে এসে নিয়ে গেছে। এই অবস্থায় আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো- তিনি যেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রীকে সাক্ষাৎ দিয়ে তার কথা শুনেন।’গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্বারকলিপি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চান।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ক্ষোভের সুরে বলেন,বর্তমান সরকারের আমলে এভাবে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নিকৃষ্টতম উদাহরণ হয়ে আছে। অতীতেও অনেকে এভাবে নিখোঁজ- গুম হয়ে গেছেন। আর ফিরে আসেনি। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি।১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেছেন তার স্ত্রী হাসিনা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেনি। তার কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি।এ বিষয়ে আগামী ৮ এপ্রিল হাই কোর্টে আবার শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন।তাদের দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সৈয়দ ইব্রাহিম আহমেদ কানাডায় ও বড় মেয়ে পারমিজ আহমেদ ইকরা মালয়েশিয়াতে লেখাপড়া করেন। ছোট ছেলে সৈয়দ ইউসুফ আহমেদ ও ছোট মেয়ে ফারিবা আহমেদ রাইদা দেশেই থাকেন। এদিকে,বিএনপি’র নিখোঁজ যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধানে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটিতে ডিএমপি’র পুলিশ কর্মকর্তারাই রয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তিনি (সালাহ উদ্দিন) নিখোঁজ না আত্মগোপনে তা খতিয়ে দেখবে সার্চ কমিটি।তিনি আরো জানান, কমিটির সভাপতি একজন যুগ্ম কমিশনার। এছাড়াও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম এবং দুইজন সহকারী পুলিশ কমিশনার রয়েছেন।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই শক্তিশালী সার্চ কমিটি কাজ করছে। ব্যাপক পরিসরে গঠিত কমিটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস কর্মকর্তারা রয়েছেন। সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধানে কূটনৈতিক তৎপরতা ছাড়াও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ চলছে।সূত্রটি আরো জানায়, সালাহ উদ্দিনের পরিবারসহ ঘনিষ্ঠজনকে নজরদারিতে রাখছে পুলিশ। বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কয়েক নেতাও। এছাড়া বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী ও অপহরণচক্রের বিষয়েও অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে সরকার ও রাষ্ট্রকে বিপাকে ফেলতে বা আন্দোলন চাঙ্গা করতে নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে কিনা, সে বিষয়েও পর্যালোচনা ও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

এছাড়া ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক বা পুরনো কোন শত্রুতা নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। আগেই বিদেশে পালিয়ে গিয়ে তার নামে অন্য কেউ বিবৃতি দিতো কিনা বা বিবৃতিগুলো সত্যি সত্যিই সালাহ উদ্দিনের তরফ থেকে দেয়া হতো কিনা, সে বিষয়েও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১০ মার্চ রাত ১০ টা ১০ মিনিটের দিকে উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ।