kr

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ মার্চ: কৃষি উন্নয়ন ও কৃষক সহায়তার জন্য আসন্ন জাতীয় বাজেটে কৃষিতে ২৬ শতাংশ বাজেট বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজ্ঞজন। জাতীয় প্রেসক্লাবে গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) আয়োজিত কৃষক বান্ধব কৃষি বাজেট’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি জানান তারা।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন সিএসআরএল-এর সহ-সভাপতি জিয়াউল হক মুক্তা। আলোচনাপত্রে তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটে কৃষকের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আলোচনাপত্রে তিনি বাজেটে কৃষকদের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে কৃষকের জন্য দরকষাকষি করার সংগঠন সৃষ্টি, কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা ও পর্যাপ্ত কৃষিসেবা, কৃষিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, খাল-বিল-নদী-নালা-জলাশয়-খাসজমিসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদে কৃষকের সহজ প্রবেশাধিকার, কৃষিপণ্যের লাভজনক মূল্য, কৃষি গবেষণায় পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান, কৃষিতে নারীর অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কৃষি প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা ও কৃষি সংশ্লিষ্ট নীতিমালাসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্যতা বিধান করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানের আহ্বান জানান।

সিএসআরএল-এর সভাপতি ড. সিএস করিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শরমিন্দ নীলোর্মি এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএলআরআই) এর সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ডঃ আবুল কালাম আজাদ, বিআইডিএস-এর সাবেক ফেলো ও কর্মজীবী নারীর সভাপতি ড. প্রতিমা পাল মজুমদার, সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জ (সিজিসি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান উদ্দিন আহমেদ, অক্সফামের ক্যাম্পেইন অফিসার মৌসুমি বিশ্বাস, জাতীয় কৃষক জোট এর সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবল সরকার প্রমুখ।

জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুকূল আবহাওয়া, বহুমূল্য যোগান এবং কৃষকের শ্রমে ও ঘামে কৃষি উত্পাদন হয়। কৃষিতে আবহাওয়ার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ, যার সাথে জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি হুমকির মুখে। তাই বর্তমান কৃষি ব্যবস্থা যদি প্রচলিত থাকে, তবে কৃষিসমূহ হুমকির মুখে পড়বে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলা করার মতো কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা এবং দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে ছিলাম। সম্প্রতি কয়েক বছর থেকে আবার কৃষিকে গুরুত্ব দেয়া শুরু হয়েছে, কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন অর্থবছরে কৃষি বাজেট প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমে এসেছে। অন্যদিকে অনুন্নয়ন বাজেট বেড়েছে। কৃষির উন্নয়নের জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বাজেটকে কৃষি বাজেটের সাথে যুক্ত করা প্রয়োজন। কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক কম বরাদ্দ থাকে, এটি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কৃষি ভতুর্কির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি হিসাবে আনলে এটি পূর্ববতী বাজেটগুলোর চেয়ে হ্রাস পেয়েছে, এটি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমাদের বাড়তি খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে হলে ৩.২ শতাংশ হারে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা এখন প্রায় ২ শতাংশ হারে খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধি করি। তাই আমাদের দেশের বাড়তি খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে হলে আমাদের উত্পাদন হারের এই গ্যাপ পূরণ করতে হবে।

ড. প্রতিমা পাল মজুমদার বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, সেগুলো নির্দ্দিষ্ট করে বলতে হবে। কৃষিতে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আনোয়ারুল ইসলাম বাবু গত দুই মাসে চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনে কৃষকদের ক্ষতি লাঘবের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।