26-03-15-PM_Shishu Kishor Somabesh_Bangabandhu Stadium-6

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ মার্চ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের নিরাপত্তা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত্‍ নিশ্চিত করতে হাতাহাতি, সংঘর্ষ ও অগি্নসংযোগের রাজনীতি পরিহার এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে না বলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শিশুরা যাতে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে,এ জন্য একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে আমাদের মাতৃভূমিকে গড়ে তুলতে প্রত্যেককে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে না বলতে হবে৷

তিনি বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন৷ ৪৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা জেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এই সমাবেশের আয়োজন করে৷ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিপনা করছে এবং আগুন দিয়ে শিশুদের জীবনত্ম পুড়িয়ে মারছে, তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না৷ যারা শিশুদের ভবিষ্যত্‍ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, জাতির কখনোই তাদেরকে ক্ষমতা করবে না৷ জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, আর কোন শিশুর এভাবে মৃতু্য হোক আমরা তা কখনোই প্রত্যাশা করি না৷ আর কেউ শিশুদেরকে স্কুলে যেতে বাধা দিতে পারবে না৷

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিক্ষা বছরের প্রথম দিকে শিশুদের হাতে বই তুলে দিয়েছিলাম যাতে তারা লেখা-পাড়ায় মনোনিবেশ করতে পারে এবং তাদের শিক্ষা জীবনের একটি দিনও যাতে নষ্ট না হয়৷ অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য, সেই প্রত্যাশা পূরণে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের লোকেরা মানুষকে পুড়িয়ে মারছে৷ এমনকি কোমলমতির শিশুরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না৷ তারা শিশু-কিশোরদের পরীৰা দিতে বাধা সৃষ্টি করছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ সমাজে একটি শানত্মিপূর্ণ পরিবেশ চায়৷ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত্‍ প্রত্যাশা করে৷ বর্তমান সরকার জনগণের এই প্রত্যাশা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের অগ্রগতিতে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না৷বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং আগামীদিনেও এগিয়ে যাবে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশা আলস্নাহ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হবে৷ যেখানে আজকের শিশুরা খুঁজে পাবে একটি সুন্দর ভবিষ্যত্‍ ও শানত্মিপূর্ণ পরিবেশ৷প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জীপে করে দিবসটি পালন উপলক্ষে আয়োজিত প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন৷ তিনি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং শিশুদের শারিরীক কসরত প্রত্যৰ করেন৷

দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও বীর শ্রেষ্ঠদের প্রতিকৃতি, প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়৷

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শিশুদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতা আমাদেরকে নিজস্ব পরিচয়ে বাচার সুযোগ করে দিয়েছে৷ আমরা আমাদের নিজস্ব পৃথক ভূখ- পেয়েছি৷ আমরা আমাদের পৃথক জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও সংবিধান পেয়েছি৷শেখ হাসিনা বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি৷ আমাদের লক্ষ্য স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা এবং একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে জাতির অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করা৷শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের, সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধের সময় পাকিসত্মানি দখলদার বাহিনীর হাতে সম্বম হারা মা-বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷তিনি বলেন, আমাদের মহান নেতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর গভীর ভালবাসা ছিল৷ সে কারণে তাঁর জন্মদিনটি শিশুদের জন্য জাতীয় দিবস হিসেবে উত্‍সর্গ করা হয়েছে৷ জাতির পিতা দেশের সংবিধানে প্রথম দিকেই শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন৷শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক শিশুর জন্য শিৰা বাধ্যতামূলক করেছিলেন৷ পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিৰা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন৷ তিনি শিশুদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ ভবিষ্যত্‍ নিশ্চিত করতে বহুমুখী পদৰেপ নিয়েছিলেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় দেশের যুদ্ধবিধ্বসত্ম অর্থনীতি পুনর্গঠন কাজ শুরু হয়৷ অথচ জাতির দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাঁর পরিবারের সঙ্গে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে৷ এ কারণে দীর্ঘ ২১ বছর দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রসত্ম হয়৷শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রণীত শিশু আইন ও শিশু নীতির আলোকে শিশু উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করে৷ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শিশুদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তাদের জন্য শিৰার সুযোগ করে দেয়৷তিনি বলেন, তাঁর সরকার এ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যনত্ম প্রত্যেক শিশুর হাতে টেস্ট বই তুলে দিয়েছে৷ সরকার ১ জানুয়ারি বিনামূল্যে শিক্ষাথর্ীদের মাঝে ৩২ কোটি বই বিতরণ করেছে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল শিক্ষাথর্ীদের বিনা মূল্যে বই দেয়ায় বছরের শুরুতে অভিভাবকরা তাদের সনত্মানদের জন্য বই কেনার চাপ থেকে রেহাই পেয়েছে৷ স্কুল ঝড়েপড়ার সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে৷ পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার ৯০ শতাংশের বেশি হয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শিশুদের মেধা এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের প্রতিম্রুতি আজ বাসত্মবে রূপ নিয়েছে৷ কম্পিউটার ও প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণে ছাত্রদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ বাসত্মবভিত্তিক শিৰা গ্রহণে শিৰাথর্ীদের সহায়তা দিতে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রম্নম স্থাপন করা হয়েছে৷

তিনি বলেন, শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক চর্চা ও তাদের সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে৷ প্রতিটি উপজেলায় ছোট স্টেডিয়াম করা হচ্ছে৷ প্রতিটি বিদ্যালয়ে এখন শিৰাথর্ীদের জন্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে শিশুদের মনোযোগী হবার আহবান জানিয়ে বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ সুতরাং দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি, মর্যাদা বৃদ্ধি ও দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনতে শিশুদের দেশের মূল্যবান নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে৷তিনি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ও খেলাধুলায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে শিশুদের প্রতি আহবান জানান৷ তিনি বলেন, পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করতে হবে এবং দেশের একজন মূল্যবান নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে ও দেশের ভবিষ্যত্‍ নেতৃত্ব গ্রহণে যোগ্যতা অর্জনে শৃংখলা মেনে চলতে হবে৷