দৈনিকবার্তা_DoinikBarta_khaleda-282392_1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ এপ্রিল: দুর্নীতি দুই মামলায় জামিন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার রোববার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার এই জামিন মঞ্জুর করেন। মামলার শুনানি আগামী ৫ মে পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত। টানা কয়েকটি ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় এই বিচারকই গত ২৫ ফেব্র“য়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদনও তিনি গত ৪ মার্চ নাকচজামিন আবেদনে খালেদার আইনজীবীরা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন নিরাপত্তার কারণে এতোদিন আদালতে আসতে পারেননি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই এখন তিনি হাজির হয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে এই জামিন আবেদনের বিরোধিতা করা হয়নি। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, জামিন নিয়ে তাদের কখনোই বিরোধিতা ছিল না। তারা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া হাজির না হয়ে বিচার এড়াচ্ছিলেন বলে।আসামিপক্ষের চারটি আবেদন মঞ্জুর করে রোববার মামলা দু’টির পরবর্তী এ দিন ধার্য করেন রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালত।একই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। তার সঙ্গে জামিন পেয়েছেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অন্য দুই আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।খালেদা ছাড়াও মামলাটির অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তার বড় ছেলে তারেক রহমান আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে পারবেন বলেও আদেশ দিয়েছেন আদালত।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই দুর্নীতি মামলার শুনানিতে সকালে আদালতে হাজির হন খালেদা। তার পক্ষে জামিনসহ মোট চারটি আবেদন জানান তার আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জারি থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল করে খালেদার পক্ষে দুই মামলায় জামিনের আবেদন দু’টি জানানো হয়। অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদও আদালতে হাজির হয়েছেন।প্রথমে জামিনের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। জামিনের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, আমিনুল ইসলামসহ অনেকে।তবে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেননি দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরের বিষয়ে আপত্তি নেই বলেও শুনানিতে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ফেব্র“য়ারি এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।গত ৪ মার্চ শুনানি শেষে দুই দুর্নীতি মামলায় প্রধান আসামি খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রাখেন আদালত।

খালেদার পক্ষে অন্য দুই আবেদন করা হয়- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্য দেওয়া বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে জেরা করতে তাকে রি-কল করা এবং ওই মামলায় যেসব ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়িত অনুলিপি পেতে।গত ২৫ ফেব্র“য়ারি হারুন-অর-রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে কোনো আসামি না থাকায় আসামিপক্ষের জেরা বাতিল করেছিলেন আদালত। খালেদার পক্ষে তাকে জেরা করতে আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। এ জন্যই প্রথম সাক্ষীকে রি-কল ও ডকুমেন্ট পাওয়ার আবেদন জানানো হয়।

এসব আবেদনও মঞ্জুর করে আগামী ৫ মে হারুন-অর-রশিদকে খালেদা ও তারেকসহ অন্য আসামিদের পক্ষে জেরার দিন ধার্য করেছেন আদালত। হারুন-অর-রশিদকে জেরা শেষ হলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণেরও দিন ধার্য করা হয়েছে ওই দিন। এর আগেই ডকুমেন্টগুলো আসামিপক্ষকে দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন আদালত।এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাত সাক্ষীর অন্য ছয়জন হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ, অফিসার (ক্যাশ) শফিউদ্দিন মিয়া, আবুল খায়ের, প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা নাজমা পারভীন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন। সাক্ষীরা সবাই আদালতে হাজির ছিলেন।

আসামিপক্ষের একটি আবেদন মঞ্জুর করে আদালত গত ৪ মার্চ মামলাটির অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আগের মতোই আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন। ফলে রোববার বরাবরের মতো তারেকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া হাজিরা দেন।খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, আদেশ সংশোধন, জামিন বহাল এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুপস্থিতিসহ ওইদিন (৪ মার্চ) মোট সাতটি আবেদন জানিয়েছিলেন আসামিপক্ষ।

আবেদনগুলোর নিষ্পত্তির পর চারটি আবেদন নথিভুক্ত রেখে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেন আদালত। ফলে রাষ্ট্রপক্ষের সাতজন সাক্ষী সেদিনও আদালতে উপস্থিত থাকলেও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে রোববার সকাল দশটা ৩৭মিনিটে বিশেষ আদালতের এজলাসকক্ষে পৌঁছান খালেদা। এজলাসকক্ষের আসামির কাঠগড়ার সামনে তার বসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়। হাতলঅলা চেয়ার ও সামনে টেবিল বসানো হয়। টেবিলে রাখা হয় টিস্যু বক্স ও পানির বোতলসহ নানা কিছুও।খালেদা জিয়া এজলাসকক্ষে ে ােকার পর তার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন তার বসার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে চেয়ারে বসেন খালেদা।এর পর পরই আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা-তারেক ও রোববার জামিন পাওয়া দু’জন ছাড়া অন্য দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। তারাও রোববার আদালতে ছিলেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৫ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ৭ দিন।জামিন আদেশের আগে বিচারক বলেন, আমিও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি তো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিতাম না। কিন্তু বাধ্য হয়েছি। কারণ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না দিলে এই মামলার বিচার যে এগোনো সম্ভব নয়; রাষ্ট্রপক্ষের এমন দাবির সঙ্গে আমিও একমত।খালেদা জিয়ার সঙ্গে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকেও জামিনদেন বিচারক।এছাড়া এ মামলার অপর আসামি খালেদার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দিতে পারবেন বলে আদেশে জানানো হয়।আসামিপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে এ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ মে শুনানির নতুন তারিখ রেখে ওইদিন সাক্ষীদের হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ দুই মামলার আসামিদের বিচার শুরু হয়। কিন্তু দফায় দফায় আসামিপক্ষের সময়ের আবেদেন গত এক বছরে কেবল এতিমখানা দুর্নীতির মামলার বাদী হারুন অর রশীদের সাক্ষ্যগ্রহণ েেশষ হয়েছে।

মামলার আগামী ধার্য দিনে জেরার জন্য বাদীকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। জামিন নিয়ে খালেদা জিয়া সরাসরি তার গুলশানের বাসায় বাসায় যান। গত ৯৩ দিন ফিরোজা নামের ওই বাড়িতে তার পা পড়েনি।শুনানিতে যা হলো: সোয়া পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির এই দুই মামলার বিচার কাজ চলছে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ এজলাসে। খালেদা আসার আগে সকাল থেকেই আদালত ভবনের আশেপাশের এলাকা এবং সামনের মাঠে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। আশপাশের সড়কেও দেখা যায় পুলিশ ও র‌্যাবের উপস্থিতি।

আদালতে হাজির হতে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে গুলশানের কার্যালয় ছাড়েন খালেদা জিয়া, যেখানে গত ৩ জানুয়ারি থেকে তিনি অবস্থান নিয়ে ছিলেন। আদালতের পথে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও ছিলেন খালেদা জিয়ার গাড়িতে।গাড়িবহরে অন্য তিনটি পিকআপ ও চারটি মাইক্রোবাস ছিল। সঙ্গে ছিল পুলিশের একটি গাড়ি। গাড়ি বহর ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে আদালতে পৌঁছায়।খালেদার পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন ও সানাউল্লাহ মিয়াসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।খালেদা কেন আদালতে আসতে পারেননি তার ব্যাখ্যায় এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, তিনি এর আগে আসতে পারেননি নিরাপত্তার কারণে।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, আইনের প্রতি খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের প্রতি অবজ্ঞা করে তিনি অনুপস্থিত থেকেছেন এ কথা ঠিক নয়। আমরাই বলেছি যে আপনি আদালতে যাবেন না । কারণ রাস্তায় কোনো নিরাপত্তা নেই।গত ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার পথে সংঘর্ষ এবং তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর বিষয়টিও আদালতের সামনে তুলে ধরেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, তার মানে হলো, আইনজীবীদের পরামর্শে খালেদা জিয়া আদালতে আসেননি। উনার ইচ্ছা ছিল আসার।তিনি বলেন, মামলার বিচারের সুষ্ঠু গতির জন্য পরোয়না জারি ছাড়া উপায় ছিল না। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কারণেই তিনি আদালতে আজ হাজির হয়েছেন।এ মামলায় ৬০টির বেশি ধার্য তারিখের মধ্যে মাত্র ৬টিতে খালেদা জিয়া আদালতে এসেছেন বলে এসময় তিনি আদালতকে জানান। তবে আদালত পরিবর্তনের জন্য হাই কোর্টে খালেদার আবেদনের কথা তুলে ধরে জামিন আবেদনে ‘তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ঠিক হয়নি লেখায় এর বিরোধিতা করেন কাজল।

তিনি বলেন, ওই বক্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর। আবেদন থেকে এ অংশটি কেটে দেওয়া হোক। উনারা মুখে বলবেন যে তারা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আবার একই মুখে অন্য কথা বলবেন- এটা ঠিক না।খালেদা জিয়ার বয়স, মর্যাদা, তার ছেলের মৃত্যু ও অন্যান্য বিষয়’ আমলে নিয়ে এবং তিনি যদি ‘নিয়মিত আদালতে আসেন, বিচারের বাধা সৃষ্টি না করার প্রতিশ্র“তি দেন, তাহলে আদালত জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন বলে মত দেন দুদকের আইনজীবী।এরপর আবেদন থেকে ওই অংশটি বাদ দিতে রাজি হন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

জামিনের পাশাপাশি সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে দিয়ে মামলার বাদীকে জেরা করার জন্য খালেদার আইনজীবীরা জব্দ তালিকাসহ নথিপত্রের সত্যায়িত অনুলিপির আবেদন করেন। এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে বলা হয়, মামলার এই পর্যায়ে এসে কাগজপত্র দিতে গেলে সাক্ষ্যগ্রহণ আরও পিছিয়ে যাবে।দুইপক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামিপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষ্য মুলতবি করেন এবং রাষ্ট্রপক্ষকে নথিপত্র সরবরাহের নির্দেশ দেন।তিনি প্রথমে ২৬ এপ্রিল শুনানির পরবর্তী তারিখ রাখলেও খালেদার আইনজীবীরা সিটি নির্বাচনের কথা বলে আরও সময় চাইলে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৫ মে দিন ঠিক করে দেওয়া হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বাকি ছয় সাক্ষী সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হারুনুর রশিদ, অফিসার (ক্যাশ) শফিউদ্দিন মিয়া, আবুল খায়ের, প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা নাজমা পারভীন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন এদিন আদালতে হাজির ছিলেন।শুনানির পর কাজল আসামিপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা আজ বিচার কাজে সুন্দর সহযোগিতা করেছেন।উত্তরে মাহবুবউদ্দিন খোকনও রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।খালেদা জিয়া সারা দেশে অবরোধ ডেকে তার গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়ার পর গত ২৪ জানুয়ারি তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে মারা যান। মুদ্রা পাচারের মামলায় ছয় বছর কারাদণ্ডের সাজা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে ছিলেন তিনি।রোববারের শুনানিতে কোকো প্রসঙ্গ এলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাজল ও বিচারক নিজেও খালেদা জিয়ার প্রতি সমবেদনা জানান।বিচারক আবু আহমেদ জমাদার বলেন, আমি উনার পুত্র বিয়োগের পরে আদালতে বসে সমবেদনা জানিয়েছি। আমি আজও আদালতে বসে তাকে আবারও সমবেদনার বার্তা দিতে চাই।

শুনানির সময় সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ এজলাস ও খালেদা জিয়ার ছবি তুলতে গেলে বিচারক তাদের সতর্ক করে বলেন, কেউ ছবি তুলবেন না। এটা বেআইনি। কেউ এজলাসের মধ্যে শুনানির সময় মোবাইল ফোনে কথাও বলবেন না। কোনো তথ্য বা মেসেজে বিচার চলাকালে বাইর সরবরাহ করবেন না। যদি তা করেন তবে আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবো।

২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

এ মামলার অপর আসামিরা হলেন-খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে।এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।গতবছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত এ দুই মামলায় আসামিদের বিচার শুরু করে।