DoinikBarta_দৈনিকবার্তা bnp-logo

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ০৭ এপ্রিল: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সকল প্রকার অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনী নাটক করার যেকোন প্রচেষ্টা জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে অবশ্যই প্রতিহত করবে।মঙ্গলবার বিকেলে দলের সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ স্থানীয় সরকারের কোন পদে নির্বাচনের জন্য কোন রাজনৈতিক দল কাউকে মনোনীত করতে পারে না।সরকারি পদধারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ এসব নির্বাচনে কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। অথচ দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছে যে, মন্ত্রীসভার বৈঠকে দেশের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আনিসুল হক‘এর প্রতি তার সমর্থন ঘোষণা করেছেন এবং পরবর্তীতে তার সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত দলীয় সভায় আনিসুলকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।এই নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন টক- শে’গুলোতে বিশদ পর্যালোচনা ও সমালোচনা হলেও অনিয়ম পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন না শোনা, না জানা ও না বোঝার ভান করে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা দেয়ার জন্য সামান্য এক ত্রুটি দেখিয়ে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নামে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী প্রহসনে যেমন ফরমায়েসী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালন করে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে-এবারও তারই পুনরাবৃত্তি শুরু করেছে। যেদিন মিন্টুর মনোনয়ন পত্রে সমর্থনকারীর বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে।একই দিনে মনোনয়ন পত্রের ছোট-খাট ভুল সংশোধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার প্রার্থীদের কয়েক ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার তেমন সুযোগ দিলে আব্দুল আউয়াল মিন্টু ঐ নির্বাচনী এলাকার লক্ষ-লক্ষ সমর্থকের মধ্য থেকে একজনকে সমর্থক হিসেবে দেখাতে পারতেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, মিন্টুর সমর্থনকারী ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা হিসেবে প্রয়োজনীয় সব প্রমাণ হাজির করা সত্বেও আপিল নিস্পত্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা তা’ আমলে না নিয়ে মনোনয়ন পত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় মিন্টুকে উচ্চ আদালতে যেতে হয়েছে।তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর পাশাপাশি মিডিয়ার কল্যাণে দেশবাসী জেনেছে যে, জনপ্রিয় বহু প্রার্থীকে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা কিভাবে নমিনেশন পেপার কিনতে বাধা দিয়েছে। নমিনেশন পেপার কেনার অপরাধে হেনস্তা করেছে এবং নমিনেশন পেপার জমা না দেয়ার জন্য অন্যায়ভাবে চাপ দিয়েছে। এমনকি মিরপুরের এক মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীকে মনোনয়ন পত্র কেনার পর বাসায় তাকে না পেয়ে তার স্বামীকে নির্দয় নির্যাতন করে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এধরণের কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য হলো সরকার দলীয় প্রার্থীদের যেকোনভাবে বিজয়ী করা। এসব ব্যাপারেও নির্বাচন কমিশন স্বজ্ঞানে নিশ্চুপ হয়ে আছে।নজরুল ইসলাম বলেন, নানা মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিএনপি ও ২০ দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটক, পায়ে গুলি করে এবং বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুম করে নেতাকর্মীদের মধ্যে-ভীতির সঞ্চার করার সুযোগে সরকার শুণ্য মাঠে গোল দেয়ার উদ্দেশ্যে হঠাৎ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।কিন্তু বিএনপি ও ২০ দলের কৌশলী সিদ্ধান্তের ফলে গোটা পরিস্থিতি তাদের বিপক্ষে চলে যাওয়ায় এখন আজ্ঞাবহ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে মাঠে নামিয়েছে।তিনি বলেন, গত ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় প্রমাণ করেছে যে জনগণ মোটামুটি শান্তির্র্পূর্ণ পরিবেশ পেলে খুন, গুম এবং জনগণের অধিকার ও অর্থলুটকারী সরকারের সমর্থক প্রার্থীদের ভোট দেবে না।সরকার বিরোধী প্রার্থীদের ওপর অত্যাচার করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে এবং সর্বশেষ মিন্টুর মনোনয়ন পত্র বাতিলের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে সংকট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় বলে মনে করে বিএনপি।

এদিকে, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুললেও সেখানে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেননা তিনদিন আগে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুললেও এ কয়েকদিনে প্রায় ১৩ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।মঙ্গলবার বিকেলে এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।বিবৃতিতে বলা হয়, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পল্টন থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশ কিছু জানে না মর্মে বলা হয়। অথচ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তারকৃতদের সন্ধান মিলছে। কার্যালয়টি খুলে দেয়ার পর সরকারের কাছে বিএনপি আশা করে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তারসহ হয়রানি বন্ধ এবং বিএনপির সদর দপ্তরকে নির্বিঘ্নে দাপ্তরিক কাজকর্ম সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক গতিতে চালানোর ক্ষেত্রে নিরাপদ ও বিপদমুক্ত রাখবে। বিএনপি এও আশা করে সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেবে।বরকত উল্লাহ বুলু বিবৃতিতে বলেন, ‘সরকার আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারি আতঙ্ক থেকে মুক্ত রাখতে সচেষ্ট হবে। এছাড়া সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীকে মুক্তি দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিবেশকে শান্ত করতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।