20130142190242wBarisal_District_Map_Bangladesh

দৈনিকবার্তা-গৌরনদী (বরিশাল), ১৮ এপ্রিল: পোলে (সেতুতে) উটলে মোগো পরান দুরু দুরু করে, না জানি কহন পোলডা ভাইঙ্গা ফসল নিয়ে পরইয়া মরি। মোরা কৃষক দেইখ্যা কেউই মোগো কষ্ট দেহে না। কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম সরদার (৫০)। এ কথা শুধু আব্দুল করিম সরদারের একার নয়, একথা গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী বার্থী, খাঞ্জাপুর ও রাজিহার ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষকদের। গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বার্থী বটতলা থেকে ধুরিয়াইল পর্যন্ত সড়কের ৭৫ ফুট বটতলা হারুন ফকিরের বাড়ির কাছে এল,জি,ইডির নির্মিত সেতুটি দীর্ঘদিন যাবত মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। সেতুটি ভেঙ্গে অপসারন কিংবা সংস্কার না করা হলে প্রানহানীর আশঙ্কা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যনসহ এলাকাবাসী।

স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী কৃষক, ও সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী, পশ্চিম বার্থী, মাদ্রা, উত্তর মাদ্রা, ধুরিয়াইল, গোরক্ষডোবা, আগৈলঝাড়া উপজেলার ভাল্লুকসী, ডুমুরিয়া, ছোট ডুমুরিয়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষের একমাত্র জীবিকা কৃষি। বার্থী গ্রামের জব্বার হোসেন, আবুল হাসেম হাওলাদার, লালচাঁন সরদারসহ অনেকেই জানান, সেতুটি সুবিধাভোগী গৌরনদী ও অগৈলঝাড়ার তিনটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক পরিবার। এসব পরিবারের একমাত্র জীবিকা হচ্ছে কৃষি এবং বোরো চাষ। এসব কৃষকরা ৫ হাজার একর দ্বিফসলী জমি চাষ করে থাকেন। ওই কৃষক পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমে নৌকায় ফসল পরিবহন করেন কিন্তু বোরো মৌসুমে খাল শুকিয়ে গেলে ফসল নিয়ে কৃষকের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

১৯৯৭ সালে এ এলাকার কৃষকরা তৎকালীন জাতীয় সংসদের সাবেক চীপ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর কাছে সমস্যার কথা জানিয়ে সেতু নির্মানের জন্য দাবি করেন। তার উদ্যোগে ১৯৯৮-১৯৯৯ অর্থ বছরে বার্থী ইউনিয়নের বার্থী বটতলা থেকে ধুরিয়াইল পর্যন্ত সড়কের ৭৫ ফুট বটতলা হারুন ফকিরের বাড়ির কাছে বরিশাল এল,জি,ইডি স্বল্পব্যায় প্রকল্পের উদ্যোগে ১৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ৬৫ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু নির্মান করা হয়। সেতু নির্মানের ফলে কৃষকরা বৈশাখ জৈষ্ট্য মাসে টেম্পু ট্রলার, নসিমন, করিমন, ভ্যান টিলার ট্রাকের মাধ্যমে ফসল পরিবহন করতেন। বর্তমানে সেতুটি অধিক ঝুঁকিপূর্ন হয়ে মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির চারিদিকে সবুজ ফসলের সমারোহ, ফাগুনের মৃদু বাতাসে দুলছে রোবো ধানের ক্ষেত। এযেন কৃষকের প্রানের নাচন। সড়কের মুখেই নির্মিত হয়েছে সেতুটি। ৭টি স্পানের আয়রন ষ্ট্রাকচারের উপরে আরসিসি ঢালাই দিয়ে নির্মিত সেতুটি। ৬টি স্পানের সেতু রক্ষার উপকরন নেই। বর্তমানে সেতুটি মৃত্যুর ফাঁদ কেননা সেতুটি রক্ষার কিছুই নেই। শুধু খুটির উপর বিশাল ওজন নিয়ে দাড়িছে আছে। যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। আর ধসে পড়লেই প্রান হানি। সেতুটির আয়রন ষ্ট্রাকচারের ফ্লাট বার, এ্যাংগেল, ক্রস, ব্রাকেট, ওয়াটার বার, স্ক্রুগুলো খুলে নিয়ে গেছে কে বা কারা। রেলিং ভেঙ্গে রড কেটে নিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, গত ১৬ বছরে সেতুটি সংস্কার করা হয়নি।

স্থানীয় কৃষক ফিরোজ বেপারী, সুশীল রায়, রাজে আলীসহ অনেকেই জানান, এবারে বোরো ধান খুব ভালো হয়েছে, কিছুকিছু জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এসব ফসল কি ভাবে পরিহন করবে এনিয়ে তারা বড়ই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাদের দাবি ফসল উঠার পূর্বেই সেতুটি সংস্কার করা হোক। এ প্রসঙ্গে বার্থী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্যাদার কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সেতুটি ১০ গ্রামের পাঁচ হাজার কৃষকের প্রান। সেতুটি সংস্কারের জন্য আমি বহুবার উপজেলা সমন্বয় সভায় ও প্রকৌশলীকে বলেছি কিন্ত তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। আসন্ন বোরো ফসল উঠার আগে তিনি সেতুটি সংস্কারের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী দিপুল কুমার বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি কৃষকের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রকল্পটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে সেতুটি নির্মান করা হবে।’