দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ এপ্রিল: ভোটের প্রচারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় রাজধানীর নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে মন্তব্য করে জরুরিভিত্তিতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আওয়াল। মঙ্গলবার সকালে আদাবর এলাকায় গণসংযেগে এসে তিনি বলেন, মঙ্গলবার যে ঘটনা হয়ে গেছে তার নিন্দা জানানোরও ভাষা আমাদের নেই। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ঢাকা আর নিরাপদ নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ আর মনে হয় কখনো হয়নি। এ কারণেই জানমালের নিরাপত্তা আর নেই।
প্রসঙ্গত,বিকালে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে চারদিনের জন্য সেনাবাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর তা ভোটগ্রহণের পরদিন অর্থাৎ আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে।প্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনরা শাহনেওয়াজ।তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচারে নামা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবার বিকালে কারওয়ান বাজারে যান। সেখানে কাঁচাবাজারের সামনে পথসভা অংশ নেওয়ার সময় তিনি হামলার মুখে পড়েন।খালেদার বক্তব্যের শেষ দিকে পাশ থেকে একদল লোক ‘ছি ছি খালেদা- খালেদা ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে। আশপাশের ভবনের ওপর থেকে খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করা হয়।ইটের আঘাতে তার কয়েকজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী ও সাংবাদিক আহত হন। খালেদা জিয়া অক্ষত থাকলেও ইটের আঘাতে তার গাড়ির এক পাশের কাচ ফেটে যায়।দুদিন আগে উত্তরায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়েও সরকার সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় তাকে কালো পতাকা দেখানোর পাশাপাশি তার বহরে থাকার পুলিশের গাড়িতে লাঠি ছোড়া হয়।
এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়াসহ চারটি অভিযোগ এনেছেন।মঙ্গলবার দুপুরে ফ্যাক্সযোগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের কাছে এসব লিখিত অভিযোগ করেন তাবিথ।সিইসি’র একান্ত সচিব মাজহারুল ইসলাম এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, প্রচারণার সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাসহ আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মোট চারটি অভিযোগ করেছেন তাবিথ। অন্য অভিযোগগুলো হলো- তার প্রচারণার সময় মাইক ভেঙে ফেলা, নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা ও তার প্রচারণায় অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি।সিইসির একান্ত সচিব জানান, বিকেলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ, জমির উদ্দিন সরকার ও আ স ম হান্নান শাহসহ একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে।এর আগে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলও কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে জরুরিভিত্তিতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আওয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ বলেন, সেনা মোতায়েনের দাবি আমরা আগে থেকেই জানিয়ে আসছি। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে মাঠে নামানো হোক। যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, প্রতিনিয়ত গুম-খুনের আশঙ্কা করছি। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ যেন বজায় থাকে সেজন্য এখন থেকেই সেনাবাহিনী চাই।এবারের নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা হলে পরবর্তী কোনো নির্বাচনেই ‘পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা যাবে না’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই মেয়র প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ এনে তাবিথ বলেন, শুধু যে আচরণবিধিই লংঘন হচ্ছে তা নয়, দেশের চলমান আইনও কিন্তু লংঘন হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন বা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।আদাবরের শম্পা মার্কেট থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ। সেখানে তিনি পৌছান তার নির্বাচনী প্রতীক ‘বাসে’ করে।এর আগে সকালে মিরপুর ১০ নম্বর পানির ট্যাংক এলাকায় প্রচার চালান তাবিথ। অন্যদিকে ছেলের পক্ষে নাসরিন আওয়াল মিন্টু প্রচার চালান খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার পল্লিমা সংসদ এলাকায়।হামলার ঘটনার পরও নির্বাচনে থাকবেন তাবিথ
এদিকে, হামলার ঘটনার পরও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবেন বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে মিরপুরের কাজীপাড়া বাজারের সামনে তাবিথের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবদিন ফারুক এ কথা বলেন।জয়নাল আবদিন বলেন, যতই আক্রমণ আসুক, বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে অংশ নেবেন।’ তিনি নির্বাচনী প্রচারের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক একটি ঘটনা। নির্বাচন বানচাল করতেই এ হামলা করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, বিএনপি ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। হামলা হলেও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাবিথ আউয়ালকে ভোট দিতে তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।তাবিথ আউয়াল ও তাঁর সমর্থকেরা মোহাম্মদপুরে প্রচারকাজ শেষ করে শ্যামলী, আগারগাঁও, তালতলা ও শেওড়াপাড়া হয়ে বেলা আড়াইটায় কাজীপাড়া পৌঁছান। এ সময় তাঁর সঙ্গে জয়নাল আবদিন ফারুকসহ বিএনপির নেতা-কর্মী ও সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছিলেন। তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, বুলেটের জবাব ব্যালটে হবে।প্রচারকাজ চালানোর সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপরে যে ন্যক্কারজনক হামলা হলো, তা প্রমাণ করে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তো দূরে থাক, কোনো মানুষেরই নিরাপত্তা নেই।