Naogaon-Pic-04.05.2015-11

দৈনিকবার্তা-ময়মনসিংহ, ৫ মে:  নিজের জমি নেই, অন্যের জমি চাষ করেন আবদুল হামিদ। তিন ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার। দুশ্চিন্তায় আজ ঘুম নেই তার। ফসলের মাঠ দেখে শুধু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। জুটবে না এবার তিন বেলা ভাত। সন্তানদের নিয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন তিনি। মিশ্রণ বীজের কারণে একই জমিতে নানা জাতের ধান! ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবদুল হামিদ নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। হাউমাউ করে কেঁদে বললেন, আমার সব শেষ! বিএডিসির মিশ্রণ বীজের কারণে দুটি ইউনিয়নের চার শতাধিক কৃষক শত কোটি টাকার ফসল হারিয়ে আজ নিঃস্ব। কৃষকের সর্বনাশ করে অবৈধ বীজ ব্যবসায়ীরা লাপাত্তা। কৃষকরা জানান, বিএডিসির ডিলার আল আমিন ট্রেডার্স, শাহগঞ্জের সিরাজ মিয়া, ভূটিয়ারকোনার নেকবর, সঞ্জু, স্বপন ও তাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছিলেন। খুচরা বীজ বিক্রেতা সিরাজ জানান, আল আমিনের কাছ থেকে তিনি ১০০ বস্তা বীজ নিয়ে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করেছেন। বর্গাচাষী আবদুল হামিদ। তিনি ১১৫ শতাংশ জমিতে বিএডিসির ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেন। এতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। বেশি ফসল ফলাতে দিনরাত খেটে যান।

শুধু বীজের কারণে আজ তা পন্ডশ্রমে পরিণত হয়েছে। কৃষক মো. বাচ্চু মিয়া। বড় ছেলে মহসীন আলম এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কন্যা কণা আক্তার এইচএসসি ও ছোট ছেলে হৃদয় ৯ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। পুরো পরিবারের ১২ মাসের খাদ্য জোগাতে ১২০ শতাংশ জমি আবাদ করেন। ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেন। একই জমিতে ব্রি-২৯, ব্রি-২৮, গাজী, বগড়া (স্থানীয় জাত), গুটি ধান জন্ম নেয়। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে শংকিত কৃষক বাচ্চু মিয়া। তিনি জানান, এক জাতের ধান পেকে গেছে, অন্য জাতের ধানের শীষ বের হচ্ছে। ধান কাটার সুযোগ নেই। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ জানান, এসব বীজ ডিলার অবৈধ। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের ধারাকান্দি গ্রামের আবুল কাসেম ২৬০ শতাংশ, ফকর উদ্দিনের ৬০ শতাংশ, জুয়েল ১০০ শতাংশ, আবদুল জব্বার ১০০ শতাংশ, চান মিয়ার ৩০ শতাংশ, মনহর মিয়ার ৫০ শতাংশ, জসিম উদ্দিনের ৮০ শতাংশ, শাহজাহানের ৩০ শতাংশ, আরশেদ আলীর ৩০ শতাংশ, আজিজের ৬০ শতাংশ, মোসলেম উদ্দিনের ৫০ শতাংশ, ফজলুর রহমানের ৫০ শতাংশ, জয়দুলের ৩০ শতাংশ, মজিবুরের ৫০ শতাংশ, নজরুল ইসলামের ১৫০ শতাংশ, রাসেলের ৮০ শতাংশ, আজিম উদ্দিনের ১৬০ শতাংশ, আজহারুলের ৯০ শতাংশ, আবদুল কাদিরের ৮০ শতাংশ, হারুন অর রশিদের ৮০ শতাংশ, লাল মিয়ার ৮০ শতাংশ, আ. বারেকের ৭০ শতাংশ, জাহেদ আলীর ১০০ শতাংশ, মো. দুলাল মিয়ার ৪০ শতাংশ, কিল্লাতাজপুরের চান মিয়ার ৩০ শতাংশ, কুমরীর আবুল কাসেমের ২৬০ শতাংশ, জমিতে মিশ্রণ বীজ বপন করে। কৃষকদের দাবি মিশ্রণ বীজের কারণে রোপিত পাঁচ হাজার ৬৯০ শতাংশ জমিতে তাদের শত কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বীজ বিএডিসির নয়, নকল বস্তা জব্দ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএডিসির উপপরিচালক মো. হাসমত আলী জানান, যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।