04-05-15-PM Sheikh Hasnina Addressing Cabinet Meeting-3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ মে, ২০১৫ : মন্ত্রিসভায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আইন-২০১৫’র খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে বহু প্রতীক্ষিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে এ আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার এক নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা ব্রিফকালে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক সময়সীমা হচ্ছে ২০১৩’র মার্চ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। এটি উৎপাদনে যাবে ২০২১ সালে। মোট প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এতে রাশিয়া সরকার প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেবে ৪ হাজার কোটি টাকা। ভূইয়া বলেন, এ ধরনের উচ্চপ্রযুক্তি, দুরূহ ও বিপুল বিনিয়োগ সম্পৃক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো এবং প্রকল্প পরিচালনার জন্য একটি কোম্পানী গঠন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রথার অন্তর্ভুক্ত। মন্ত্রিসভা এটি বিবেচনায় নিয়ে এ আইনের অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়ার মধ্যে ‘সহযোগিতা’ চুক্তি ও ‘ঋণ চুক্তি’ দুটি প্রথক নামে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ইন্টারন্যাশনাল এটোমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) গাইডলাইন অনুসরণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। সাধারণ কোনো চুক্তিতে পক্ষ থাকে দুটি। কিন্তু এই চুক্তিতে তদারকি পক্ষ হিসেবে থাকবে আইএইএ। সংস্থাটি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয় মনিটর করবে। চুক্তি মোতাবেক রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক কোম্পানী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বে থাকবে। এ ছাড়া রাশিয়ার নিজ খরচে পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেয়া হবে। বৈঠকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানী অব বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানী গঠনের প্রস্তাবেও অনুমোদন দেয়া হয়। কারণ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো কোম্পানী গঠন করতে হলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আইএইএ’র গাইডলাইন অনুসরণ ও দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে কোম্পানী গঠন প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করে। প্রস্তাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পৃথক কোম্পানী গঠন, রেগুলেটরি অথরিটি হিসেবে সরকার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তাকারী দেশের (ভেন্ডর কান্ট্রি) ভূমিকার উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্প স্থাপনকারী দেশ প্রকল্পটির মালিকানাী ও পরিচালনার জন্য দুটি সংস্থা নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী হিসেবে থাকবে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন এবং পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে নিউক্লিয়ার এনার্জি কোম্পানী অব বাংলাদেশ। কোম্পানীটির অনুমোদিত মূলধন হবে ১ কোটি টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১ হাজার। এটি বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হবে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে এর সকল সম্পদ ও দায়-দেনা কোম্পানীর কাছে হস্তান্তরিত হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা কোম্পানীর প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হবেন।

মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-পথে পণ্য পরিবহনে উপকূলীয় নৌ-পরিবহন চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন সচিব শফিক আলম মেহদী ও ভারতের নৌ-সচিব রাজীব কুমার ২০ এপ্রিল এই চুক্তিতে অনুমোদন করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আশা প্রকাশ করে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তিনি বলেন, চুক্তিটি কার্যকর হলে পণ্য পরিবহনে উভয় দেশের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের কোন জাহাজ ভারতে পৌঁছতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। কিন্তু এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে সময় প্রয়োজন হবে ৪ থেকে ৫ দিন। এতে উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য পরিবহনে ভায়া হিসেবে কলম্বো বা সিঙ্গাপুর বন্দর ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু চুক্তিটি কার্যকর হলে উভয় দেশের কার্গো জাহাজ দু’দেশের যে কোন বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। মোশাররাফ হোসাইন বলেন, এ চুক্তির আওতায় দু’দেশের নদী ও সাগরে চলাচলকারী জাহাজ উভয় দেশের উপকূলীয় পথে যাতায়াত করতে পারবে। এতে উভয় দেশের কার্গো জাহাজের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। তবে, যুদ্ধ জাহাজ, বিজ্ঞান বা সমুদ্র বিষয়ক গবেষণার নৌযান এই চুক্তির আওতাভুক্ত হবে না। এ চুক্তি বাস্তবায়নে ডাইরেক্টর জেনারেল অব শিপিং অব ইন্ডিয়া এবং ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং অব বাংলাদেশ মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। চুক্তি বাস্তবায়নে অপারেটিং রূপরেখা তৈরির কাজও শিগগির সম্পন্ন হবে। এ চুক্তির মেয়াদ হবে ৫ বছর। যে কোন পক্ষ ৬ মাসের নোটিসে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। চুক্তিটি পর্যালোচনার জন্য একটি যৌথ নৌ-পরিবহন কমিটি থাকবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীর ১১ থেকে ১৩ মার্চ গ্রানাডায় ‘ব্লু গ্রোথ ও ফুড সিকিউরিটি’র লক্ষ্যে গ্লোবাল এ্যাকশন নেটওয়ার্কের জন্য কৌশলগত বৈঠকে যোগদান সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়। বৈঠকে মন্ত্রিবর্গ, প্রতিমন্ত্রীবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।