saharatushar_1273989094_1-0000000

দৈনিকবার্তা-সিংগাইর (মানিকগঞ্জ), ২৭ মে: মানিকগঞ্জে শুরু হয়েছে ইরি বোরো ধানকাটা। নতুন ধানের স্বপ্নে আনন্দের পরিবর্তে বিষাদে ছেয়ে আছে কৃষকের মুখ। মানিকগঞ্জে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সবকিছু অনুকূলে থাকায় গত বছরের মতো এবারো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।ধানের এই ভরা মওসুমেও ভারত থেকে চাল আমদানীর ফলে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় ফলন ভাল হলেও খুশি হতে পারছেন না কৃষক। বীজ, চাড়া, সার , কীটনাশক, মুজুর,মাড়াই ও পরিবহন খরচ দিয়ে এখন কৃষকের ধান আবাদ অনেকটাই লোকসানের খাতে পরিনত হয়েছে। প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫০ থেকে ৫০০ এবং আই আর আটাশ ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। আর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের পরিবর্তে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে হতাশা। এভাবে চলতে থাকলে ধানের আবাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কৃষক।মানিকগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে (২০১৪-২০১৫) জেলার ৭ টি উপজেলায় বোরো আবাদ করা হয় ৫১ হাজার ৪২৩ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে (২০১৩-২০১৪) পুরো জেলায় ধান আবাদ করা হয়েছিল ৫১ হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ শ হেক্টর বেশি।

এ বছর মানিকগঞ্জে আবাদকৃত বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে, উফশি, স্থানীয় এবং হাইব্রিড প্রজাতির ধান। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ব্রিধান-২৯ ও ব্রিধান-২৮। এ ছাড়া মানিকগঞ্জে এবারই প্রথম আবাদ করা হয়েছে উন্নতমানের জাত ব্রিধান-৫৮। তবে পরিমাণ খুব বেশি নয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, মানিকগঞ্জে এপি্েরলর প্রথম সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলবে মধ্য জুন পর্যন্ত এখন শুধু ব্রিধান-২৮ কর্তন করা হচ্ছে। ব্রিধান-২৯ কর্তন শুরু হতে আরো ২০/২৫ দিন সময় লাগবে।

এদিকে ধানের ফলন ভাল হলেও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে খুশি হতে পারছেন না কৃষক। বিশেষ করে বর্গাচাষীদের তো মাথায় হাত। তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। সরজমিন ঘিওর উপজেলার কেল্লাই এলাকার চকে গিয়ে দেখা যায়, মোন্নাফ মিয়া নামে স্থানীয় এক কৃষক পাঁচ/ছয়জন শ্রমিক নিয়ে ধান কাটছেন।তিনি জানান, ধান কাটার শ্রমীকের উচ্চমূল্য। মাথা পিছু শ্রমীকদের দেয়া লাগছে ৪/৫ শত টাকা। এছাড়াও বীজ, চারা, সার, কীটনাশক, কাটা, মাড়াই ও হাটে নিয়ে বিবিক্রর পরিবহন খরচ দিয়ে অনেকটা লোকসানই হচ্ছে কৃষকদের।কৈট্টা গ্রামের মুনছের আলী জানান, তিনি একজন বর্গচাষি। নিজের কোনো আবাদি জমি নেই। অন্যের কাছ থেকে তিনি ২৪০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে অন্তত ৪০ হাজার টাকা। তার হিসেবে ২৪০ শতাংশ জমি থেকে ধান আসবে আনুমানিক ১২০ মণ। সেচ মেশিন মালিককে এক চতুর্থাংশ হিসেবে দিতে হবে ৩০ মণ। জমির মালিককে দিতে হবে অবশিষ্ট ধানের অর্ধেক, অর্থাৎ ৪৫ মণ। নিজের থাকবে ৪৫ মণ। আর বর্তমানে প্রতিমণ ধানের দাম ৫০০ টাকা হলে যার দাম আসে মাত্র সাড়ে ২২ হাজার টাকা। সে হিসেবে তার লোকসান প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা।

বিলনালাই গ্রামের প্রান্তিক কৃষক জামাল মিয়া অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, নিজের জমি নাই। বইসা থাকন লাগে। বর্গা নিয়া ধান বুনছিলাম। কিন্তু খুব লস হইল। খরচের টাকাটা একবারে লাগে না। আর ধান বেইছা টাকাটা একবারে পাই। এইটাই সুবিধা। তবে ধানের দাম না বাড়লে আর ধান বুনুমনা। ঘোস্তা এলাকার মজনু বিশ্বাস জানান, ধানের দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা মণ হওনের দরকার। না হলে কৃষকরা ধান আবদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যা দেশের খাদ্য ঘাটতিতে প্রভাব ফেলবে।ঘিওর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা রেজোয়ানা রহমান ভোরের কাগজকে জানান, বোরো আবাদের জন্য সবকিছুই অনুকূলে ছিল। বিদ্যুৎ, পানি, সার, বীজ-কোনো কিছুরই সমস্যা ছিল না। পোকা-মাকড়ও আক্রমণ করতে পারেনি। এসব কারণেই ধানের ফলন ভাল হয়েছে।

এব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রশিক্ষক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, এবার জেলায় ইরি বোরো বাম্পার ফলন হয়েছে। ৭ টি উপজেলায় বোরো আবাদ করা হয় ৫১ হাজার ৪২৩ হেক্টর জমিতে।কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আবাদের মতো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম খুব কম। ধানের দাম আরো কিছু বৃদ্ধি পাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।