দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ মে: বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বর্তমানে বিশ্বে নিয়োজিত সর্বমোট সংখ্যার নয় শতাংশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে, যে কোনো দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত রয়েছে। রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিসের সহায়তায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০১৫ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সেনা প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া এবংবাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মুহাম্মদ এনামুল বারী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেঃ জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং ভারপ্রাপ্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক জাভেদ পাটোয়ারী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের চেতনা ও পেশাদারিত্বকে অনন্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সদর দফতরসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব পেয়েছে।তিনি বলেন, বর্তমানে ১০টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষী রয়েছে এবং সম্প্রতি নিউইয়র্কে সদর দফতর পর্যায়ে ও অন্যান্য ফিল্ড মিশন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে নিয়োগের জন্য আমরা প্রস্তাব পেয়েছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অবশ্যই দেশের বলিষ্ঠ অবস্থান ও আন্তরিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সুফল এবং এ ধরনের পদে অধিক সংখ্যক সদস্য নিয়োগের ব্যাপারে প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরো অবদান রাখতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪০টি দেশে ৫৪ মিশনে দায়িত্ব পালন করেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা অনুকরণীয কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে সহযোগী শান্তিরক্ষীদের কাছ থেক সম্মান অর্জন করেছেন।একই সাথে তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জনগণের কাছ থেকে চিরস্থায়ী ভালোবাসা অর্জন করেছেন।শেখ হাসিনা আশা করেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা আরো বিকশিত হবেন এবং এই শান্তিরক্ষীরা সম্মান ও গর্বের সঙ্গে গোটা বিশ্বে জাতীয় পতাকা তুলে ধরে রাখবেন।বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক ১৯৮৮ সালে ইউএনআইআইএমওজি (ইরাক-ইরান)-এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ব্লু হেলমেট’ পরিবারভুক্ত হয়।বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী ১৯৯৩ সালে ইউএন পিস কীপিং অপারেশনে (ইউএনপিকেও) যোগ দেয় এবং বাংলাদেশ পুলিশ অংশ নেয় ১৯৮৯ সালে।এ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতিসংঘের ৬৮ শান্তিরক্ষা মিশনের মধ্যে ৫৪টিতে অবদান রেখেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। শান্তিরক্ষা মিশনে বর্তমানে বাংলাদেশের ৯ হাজার ৫৯৩ সদস্য রয়েছে। পাকিস্তান রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে শান্তিরক্ষা মিশনে দেশটির সদস্য সংখ্যা ৮ হাজার ১৬৩ জন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। মিশনে দেশটির সদস্য সংখ্যা ৮ হাজার ১১২ জন।বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে গত ২৭ নভেম্বরে বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১২৪ জন সাহসী ও বীর সন্তান প্রাণ দিয়েছে। এদের মধ্যে ৬ শান্তিরক্ষী জুন ২০১৪ থেকে মে ২০১৫ তারিখের প্রাণ দিয়েছেন।বিশ্বের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষা মিশনের ১৭২ জন সদস্য আহত হয়েছেন।