Rajshahi Bagha Mango News 6-6-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী , ০৬ জুন: রাজশাহী শহর থেকে ৩৯ কিলোমিটার পূর্বে বাঘা উপজেলা। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা শেষ হচ্ছে ৫ জুন। এরমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ থেকে আম নামানো শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজার ইতোমধ্যে জমে উঠেছে। উপজেলার মধ্যে বড় বাজার আড়ানী ও বাঘা। ব্যবসায়ীরা আম গাছ থেকে নামিয়ে আড়তে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারের আড়তগুলোতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার আম বেচা-কেনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আম ব্যবসার সাথে জড়িত হাজার হাজার মানুষ মৌসুমি কর্মসংস্থানও হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে গাছের আম নামানো, ঝুড়ি বানানো ও সহায়তার কাজে নিয়জিত লোকদের কর্মসংস্থানের ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম জানান, উপজেলায় আট হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ আম ঝড়ে পড়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি ৭৩ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। আম চাষি পরিবার রয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার। তবে ৫ জুন থেকে জুলাই মাসের শেষ নাগাদ প্রায় তিন মাস চলে আমের ব্যবসা। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া জনিত কারণে এবছর আমের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে আম উৎপাদনকারী ও ব্যসায়ীরা দাম ভালো পাচ্ছে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মংসিংহ, চট্রগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন উপজেলার বাজার থেকে আম কিনে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে।

আড়ানী বাজারের চালানী ব্যবসায়ী আবদুস সুবান আলী জানান, চলতি মৌসুমে আমার নিজের প্রতিদিন দুই ট্রাক আম চালান দিচ্ছি। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ীরা তো রয়েছেই। এই মোৗসুমে আম চাষী, পাইকারী, ফড়িয়া ও চালানী ব্যাপারীদের পদতারে মুখরিত হয়ে উঠেছে উপজেলার বাজার। আমই বদলে দিয়েছে উপজেলার অর্থনীতিক চিত্র। বাঘা বাজারের আম ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, সকাল থেকে আম চাষীরা ভ্যান, ভূটভুটি, নসিমন, করিমনসহ স্থানীয় বাহনে করে তাজা আম নিয়ে বাজারে উপস্থিত হচ্ছেন। ফড়িয়ারা ওইসব আম কিনে জমা করছেন আড়তে। আড়ত থেকে পাইকার ও চালানি ব্যাপারীরা আম কিনে ট্রান যোগে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।

উপজেলার বাউসা গ্রামের ফড়িয়া ব্যবসায়ী সাজদার রহমান জানান, আম চাষীর হাত থেকে পাইকার ফড়িয়ার হাত হয়ে আড়তে গিয়ে চালনি ব্যাপারীদের হাতে যাওয়ায় ধাপে ধাপে দাম ও খরচ বাড়ে। এসব কাজে শতশত মানুষ জড়িত। সবাই কিছু-না-কিছু আয়-উপার্জন করছে। তেথুলিয়া গ্রামের আনিসুর রহমান জানান, তিনি বছরের অন্য সময়ে শাকসবজি কিনে ঢাকায় চালান করি। আম মৌসুমে ফড়িয়া হিসেবে কেনা-বেচা করি। মৌসুম শেষে তিনি প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করবেন বলে জানান। চট্টগ্রামের আম ব্যবসায়ী মখলেসুর রহমানের সাথে কথা গতকাল আড়ানী বাজারে তিনি জানান, আমরা সরাসরি চাষীদের নিকট থেকে না কিনে আড়ত থেকে আম কিনে চালান করি। এতে ঝামেলা কম হয়।

বাজুবাঘার আম ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন জানান, বাজের গোপালভোগ সাড়ে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা, খিরসাপাত সাড়ে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা, ল্যাংড়া সাড়ে ১৮ থেকে সাড়ে ২০০০ টাকা, লখনা ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা প্রতিমন দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। তবে ফজলি, আরসিনা আম বাজারে উঠতে আরো মাস খানেক সময় লাগবে বলে তিনি জানান। সিলেট থেকে আসা আম ব্যবসায়ী আব্দুল¬াহ জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবছর আম বেশি সুস্বাধু হয়েছে বলে জানান। আড়ানী শাহাপুর গ্রামের ঝুরির কারিগর সাবাজ আলী জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ঝুরির যথেষ্ট চাহিদা আছে। এ সময় এলে ব্যস্ততাও বাড়ে। আড়ানী বাজারের বস্তা দঁড়ি ব্যবসায়ী বাবলু হোসেন জানান, পাটের সুতলির চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুন।

উল্লেখ্য গত মৌসুমে উপজেলার এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আম পাকার আগে অপরিপক্ব আম পেড়ে ফরমালিন দিয়ে বিক্রি করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক থেকে আম নামিয়ে তা ধ্বংস করে প্রশাসন। ফলে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসাধু ব্যবসায়ীরা, অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগান মালিকরা। এ কারণে এ মৌসুমে আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে তৎপর পুলিশসহ প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র হালদার জানান, ফরমালিনযুক্ত আম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে এবার মাঠপর্যায়ে কড়া নজরদারী রাখা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় আম ব্যবসায়ীদের ৫ জুনের আগে যেকোনো ধরনের আম পাড়া একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা কোনো ব্যবসায়ী অমান্য করলে অর্থদন্ডসহ শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে ট্রাক ও বাস মালিক সমিতিকে নির্ধারিত সময়ের আগে তাদের গাড়িতে আম লোড করতেও বারণ করা হয়েছিল।