Durgapur-Banna-Picture-23

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ জুন ২০১৫: গত কয়েকদিনে প্রবল বর্ষণে আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে দেশের বিভিন্ন নদনদীগুলোর। কুড়িগ্রাম বগুড়া সিরাজগঞ্জ জামালপুর ও শেরপুর জেলায় বন্যায় নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে ।

তাছাড়া নদী ভাঙন ও ভারীবর্ষণে অনেকের বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এদিকে, ব্রহ্মপুত্র নদের ফুলছড়ি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে টওবাহিত হচ্ছে।ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়ার পানি বিপদসীমা ছুই ছুই করছে। নদ নদীগুলোতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্য।পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের উত্তর-মধ্য এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।সুনামগঞ্জ, বগুড়া, সিলেট ও গাইবান্ধা জেলার কতিপয় অঞ্চলে বন্যা পরিস্থতির অবনতি হচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাইবান্ধার ঘাগট বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে, যমুনা ৪সেন্টিমিটার, সুন্দামগঞ্জের সুরমা ৩৫সেন্টিমিটার এবং সারিঘাটে সারিগোয়াইন ২৪সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮৪টি পানি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ৪৯টি স্থানে পানি বৃদ্ধি, ২৪টি স্থানে পানি হ্রাস, ৪টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং ৭টি স্থানের তথ্য পাওয়া যায়নি। ৪টি স্থানের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘন্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছুকিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দেশের অন্যত্র দিন -রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

বগুড়া: বগুড়ার সারিয়াকান্দীতে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার অন্ততঃ ১৫ টি গ্রামের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যমুনার পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের আরো কিছু অংশ হুমকির মুখে পড়েছে।লোকজন বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে লোকজন বাড়ি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।শুক্রবার বিকালে সারিয়াকন্দীর গোদাখালিতে নির্মানাধীন বাঁধের একাংশ ভেঙ্গে যাওয়ার পর বন্যার পানিতে নিম্মাঞ্চল প্ল¬াবিত হয়।

শনিবার বাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া অংশের পরিমান বেড়ে প্রায় ৬০ মিটারে দাড়িয়েছে।যমুনায় পানিবৃদ্ধি ও নির্মানাধীন বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে সারিয়াকান্দীর গোদাখালি, সুতানাড়া দড়িপাড়া, মুড়াগাছা, পাইকারতলি,ঘুঘুমারি সহ ১০/১২টি গ্রামের নিম্মাঞ্চল প্ল¬াবিত হয়েছে। এছাড়া পাশের ধুনট উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের ৪/৫টি গ্রামের নিম্মাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। সারিয়াকান্দী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বন্যায় প্রায় ১২ শ’ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ সহ বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অপরদিকে সারিয়াকন্দীতে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের আরো কযেকটি স্থানে পানি চুইয়ে ভিতরে প্রবেশ শুরু করেছে । এতে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের আরো কিছু অংশ ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাঁধ সংলগ্ন এলাকা গুলো থেকে লোকজন বাড়ি ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে।

কুড়িগ্রামঃ কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ঢুবে গেছে শতাধিক চর ও দ্বীপচর। এসব এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে ৫ হেক্টর জমির মৌসুমি সবজি খেত ও আমন বীজ তলা। জেলার কুড়িগ্রাম সদরের তিনটি, উলিপুর উপজেলার চারটি, চিলমারী উপজেলার পাঁচটি, রাজিবপুর উপজেলার তিনটি ও রৌমারী উপজেলার চারটিসহ ১৯টি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর পারবতীপুর গ্রামের মোকছেদ আলী বলেন, বাড়ির চারিদিকে পানি ওঠায় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাইরে বের হতে পারছি না।

পানি আরো বাড়তে থাকলে বিপদে পড়বো। সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক শ্যামল দাস বলেন, আমার এক একর জমির পটল খেত তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় খেত থেকে আর কোন পটল তুলতে পারবো না। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’ সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘গত দুই দিনে তার ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৫ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে।

রংপুর: রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গত কয়েকদিনে প্রবল বর্ষণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার পাইকান ও চিলাখাল এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ি, জমি জমা, গাছপালা। গত তিনদিনে ২০ পরিবারের বাড়ি ঘর জমি জমা, গাছপালা তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে পড়েছে মূল বাঁধসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ভাঙন কবলিত এলাকার কয়েক হাজার পরিবার। ভাঙন কবলিত এলাকায় মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল এলাকার নুরুল হোদা, বিধবা ছকিনা, ইয়াছিন, রবিউল, রশিদ, জহুদ্দি, হাফিজুল, নজরুল, পাইকান হাজীপাড়া, পীরপাড়ার মর্তুজা, কিবরিয়া, মুকুল, আরফিন, গোলাম রসুল, জাহাঙ্গীর তোফাজ্জল, মন্তাজ, নজরুল আলম বাদশা, শাহজাদার বাড়ি ঘর তিস্তায় ভেঙে গেছে। এছাড়া অনেকে বাড়ি ঘর সরিয়ে নিচ্ছে। চিলাখাল ও জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইকান ইউসুফিয়া মাদ্রাসা, সাউদপাড়া মাদ্রাসাসহ এতিমখানা, পোষ্ট অফিস, মসজিদ ও পীর সাহেবের মাজার শরীফ ৫/৭ ফুট ভাঙলে তিস্তায় চলে যাবে। মূল বাঁধ এলাকা ভেদে ৩’শ থেকে ৪’শ ফুট দূরে হুমকিতে আছে।

পীরপাড়া এলাকার কিবরিয়া, শাহজাদা ও গোলাম রসুল বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে ব্লক তৈরি করলেও তা ভাঙন রোধে ব্যবহার না করায় আমরা আজকে নিঃস্ব হলাম। এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ও চিলাখাল প্রাথমিক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি নুরল হোদা জানান, চিলাখাল রেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মূল বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন রোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে স্কুলটি ঠিকানো যাবে না। এছাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মূল বাঁধ হুমকিতে পড়েছে এবং ভাঙনের স্থান দিয়ে পানি ডবেশ হলেই তলিয়ে যাবে কয়েক হাজার পরিবার। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- সহকারী প্রকৌশলী শহিদুর রহমান ভাঙনের বিষয় স্বীকার করে বলেন, ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে জিও ব্যাগে বালু ফেলানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ: গত দু’দিনের টানা বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বালিঘুগরী এলাকায় ২৫০ মিটার রিং বাঁধ সম্পূর্ণ নদীগর্ভে চলে গেছে।অপরদিকে, সিমলা-কাজিপুর পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বালিঘুগরী এলাকায় ২০০ মিটার ধসে গেছে। এতে শতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়েছে।ভাঙনের মুখে শঙ্কায় রয়েছে ৫ গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কয়েক হাজার একর আবাদি জমি।

এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড মূল বাঁধে বালির বস্তা নিক্ষেপ করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।শুক্রবার সকাল থেকে এ ভাঙন শুরু হয় এবং শনিবার (১৩ জুন) সকালে রিং বাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। শনিবার দুপুরে সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দু’মাস ধরে পর্যায়ক্রমে ভাঙতে থাকে বলিঘুগরি রিং বাঁধ। মঙ্গলবার (২ জুন) রাত থেকে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বুধবার (৩ জুন) ২৫০ মিটার রিং বাঁধের ১৬০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়।শুক্রবার থেকে টানা বর্ষণে বাঁধটি পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এছাড়াও সিমলা-কাজিপুর পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৪০০ মিটার ধসে যায়। এতে অর্ধশত বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।

ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে- বালিঘুগরী, সিমলা, পাঁচ ঠাকুরী, চরপাড়া, ইটালি ও ভেওয়ামারা গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও হাজার হাজার একর আবাদি জমি। ভাঙন কবলিত মানুষ নিরুপায় হয়ে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে ওয়াপদা বাঁধে অশ্রয় নিচ্ছেন।খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মূল বাঁধের ধস ঠেকাতে ধসের স্থানে বালির বস্তা ডাম্পিং করা শুরু করে। তবে, এতে ভাঙন রোধ কোনো মতেই সম্ভব নয় বলে স্থানীয়রা জানায়।

সিমলা গ্রামের ব্যবসায়ী আফছার আলী খান জানান, যেকোনো মুহূর্তে তাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হবে। তাই বাড়িঘর সরিয়ে তারা ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।একই গ্রামের শুকুর আলী বলেন, আমার বাড়িটি নদীগর্ভে চলে গেলে দাঁড়ানোর আর কোনো জায়গা থাকবে না।চলবালী ঘুগরী গ্রামের আজাহার আলী অভিযোগ করেন, প্রায় তিনমাস ধরে যমুনা নদীর মাঝখানে ওঠা চ্যানেল অপসারণের জন্য ড্রেজার নিয়ে আসা হলেও তা কাজ শুরু করেনি। সপ্তাহখানেক আগে থেকে কাজ শুরু করলেও তা কোনো কাজে আসেনি।

আনোয়ারা বেগম ও মরিয়ম খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, যমুনা নদী তাদের সর্বশান্ত করেছে। তাদের আর কোনো আশ্রয় নেই।এদিকে, প্রায় এক মাস পূর্বে যমুনার ভাঙন ঠেকাতে মূল বাঁধের পশ্চিমপাশ দিয়ে শুরু হয়েছে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ। ধীর গতিতে কাজের কারণে ওই বাঁধ নির্মাণ এখনও শেষ হয়নি।অনেকের আশঙ্কা মূল বাঁধ ভেঙে গেলে যমুনার স্রোত বিকল্প বাঁধটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

সিমলা গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, পাশে গর্ত করে সেখান থেকে মাটি নিয়ে নতুন বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে আশপাশের বাড়িঘর বিলীনের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রতিবছরই দুর্যোগকালীন পাউবোর লোকজনের তোড়জোড় বেড়ে যায়। শুকনো মৌসুমে বন্যা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হয় না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার পরিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সামনে নদীর মাঝখানের চর অপসারণ করা হচ্ছে। ওই চরের মাটি নিয়ে গ্রামের দিকে আসা নদীর চ্যানেলটি বন্ধ করা হচ্ছে।আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইমাম জানান, ভাঙন ঠেকাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে বালির বস্তা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এছাড়া বিকল্প বাঁধের দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।

নীলফামারী: তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী সুরত উজ জামান বাংলানিউজকে জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে তিস্তায় বেড়েছে পানির প্রবাহ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের সবকটি দরজা(৪৪টি) খুলে রাখা হয়েছে।নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার রাতে উজানের পানি প্রবাহের চাপে ডিমলা উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের সুপরীটারী ছোটখাতা এলাকায় ৬শ’ ফিট একটি বালির ক্রস বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ১ টি গ্রামের প্রায় ৪০টি বাড়িতে তিস্তার পানি ঢুকে পড়েছে।ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে শুক্রবার সকাল থেকে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বাড়তে থাকে।

বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করলেও শনিবার বিকেলে বিপদসীমার চার সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছোটখাতা, পশ্চিম বাইশপুকুর, পূর্ব বাইশপুকুর, কিসামত ছাতনাই, পূর্বছাতনাই ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর, বাঘেরচর, টাবুর চর, ভেণ্ডাবাড়ী, ছাতুনামা, হলদিবাড়ী, একতারচর, ভাষানীর চর, কিসামতের চর, ছাতুনামা ও চরগ্রামসহ অন্তত ২৫ গ্রাম।

টাঙ্গাইল: যমুনার পানি বৃদ্ধি ও ঘন ঘন ভারীবর্ষণের ফলে ৩ দিনে ৪ শতাধিক পরিবার নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আর এসব বাস্তুহারা মানুষের কারও ঠাঁই হয়েছে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। কেউবা সড়কের পাশে খুঁপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে।টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে নতুন করে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ভাঙনের ফলে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক হুমকির মুখে রয়েছে।

অথচ ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবো কর্তৃপক্ষ।সরেজমিনে উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা, নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রমত্তা যমুনা নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে মানুষের ঘর-বাড়ি ছাড়াও তাদের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত লোকজন তাদের ঘর-বাড়ি সরানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে।নদী ভাঙন ও ভারীবর্ষণে অনেকের বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।ভাঙন কবলিত গ্রামগুলো হলো- গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া, চর চিতুলিয়া ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া, অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া, অজূর্না, চুকাই নগর, শুশুয়া ও গোবিন্দপুর, গাবসারা ইউনিয়নের রুলীপাড়া, রেহাই গাবসারা, রামপুর, চণ্ডিপুর ও মেঘারপটল, নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ি ও বাইনতাইন।হুমকির মুখে রয়েছে ৪টি ইউনিয়নের স্কুল, কলেজ, নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি, মসজিদ, মন্দির, পোল্ট্রি খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুক্রবার সরেজমিনে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে, অব্যাহত ভাঙনের ফলে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। গত দুই বারের ভাঙনে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের যান চলাচল বন্ধ ছিল। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া গ্রামের শিক্সক মজিদ সরকার ও আব্দুস ছবুর ন কার্যকর কোনো প্রদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। এবার নতুন করে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।

অজুর্না গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মকবুল খাঁ, সাদিক, তবু খাঁ ও বাছেদ খাঁ বাংলানিউজকে জানান, পুরনো জনপদ হিসেবে খ্যাত অর্জুনা গ্রামে বহু বছর পর যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। লিখিত আবেদনের পরও স্থানীয় প্রশাসন ও টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সম্প্রতি এই গ্রামে ভাঙন ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল।

অব্যাহত ভাঙন ও প্রবল বষর্ণে সে বাঁধও নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়া গত বছর ভাঙনরোধে ৫০০ বস্তা জিও ব্যাগ বরাদ্দ হলেও অদৃশ্য কারণে সেগুলো না ফেলে ফেরত নেওয়া হয়।ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম বলেন, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, ভাঙনের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অনুমতি পেলে কাজ শুরু করা হবে।

শেরপুর: বল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ধানশাইল, কাংশা, গৌরিপুর,ঝিনাইগাতী সদর ও মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।রাস্তাঘাট ঢলের পানিতে তলিয়ে এসব এলাকার কমপক্ষে ৪/৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান বাদশা বলেন, পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ঝিনাইগাতী-ভটপুর পাকা সড়ক ২০ ফুট ভেঙ্গে যাওয়ায় ওই সড়কে যাতায়াত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া হাতিবান্দা, মালিঝিকান্দা ও ধানশাইলের বাগেরভিটা এলাকায় তিনটি কাঠের সেতু ভেসে গেছে এবং হাতিবান্দা ও গৌরিপুরে দুটি বক্সকালভার্টের দুইপাশের মাটি ধসে গেছে।ঢলের চাপে মহারশি নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর রক্ষা বাঁধের রামেরকুড়া, দিঘীর পাড় ও জিগাতলা বনগাঁও এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে গেছে বলেও জানান তিনি।প্লাবিত গ্রামগুলো হচ্ছে, কালিনগর, দড়িকালিনগর, লঙ্গেশ্বর, সুরিহারা, দিঘীরপাড়, চতল, বালিয়াচন্ডি, জিগাতলা বনগাঁও, কাংশা, দুপুরিয়া, কারাগাও, রাঙামাটি, জুলগাঁও, হাসরিপাতিয়া, দাড়িয়ারপাড়, নয়াপাড়া, বাগেরভিটা, রামেরকুড়া ও মাঝা কান্দুলী।

ময়মনসিংহ: প্রবল বর্ষণে ময়মনসিংহে রেললাইনের ওপর পানি উঠায় ট্রেন চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে।শনিবার (১৩ জুন) সকাল থেকেই ট্রেন চলাচলে এ বিঘ্নতা দেখা যায়।এদিকে, প্রকাণ্ড ঝড়ে শহরের কাঁচিঝুলি এলাকায় একটি রেইন ট্রি নামের গাছ রাস্তার ওপর উপড়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ-জামালপুর মহাসড়কের যান চলাচল।ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আবু তাহের জানান, ভারী বর্ষণের শনিবার সকালে শহরের সানকিপাড়া রেলক্রসিং, নতুন বাজার রেলক্রসিংসহ বিভিন্ন পয়েন্টে রেললাইনের ওপর পানি উঠে যায়।তিনি বলেন, রেলপথে পানি উঠে যাওয়ায় শনিবার দুপুরে দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় আধঘন্টা আটকে থাকে।

পরে আধঘন্টা পর ট্রেনটি দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।তিনি জানান, রেলপথে পানি থাকায় স্বাভাবিক গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারছে না। ফলে স্লো গতিতে চলাচল করছে ট্রেন।কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, শহরের কাঁচিঝুলি এলাকায় একটি রেইন ট্রি ঝড়ে সড়কের ওপরে পড়ে যাওয়ায় সেখানে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।রাস্তার ওপর উপড়ে পড়া গাছটি কাটা হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সড়কটি সচল হবে বলে জানান কামরুল ইসলাম।

বরিশাল: আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করায় বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের লঞ্চ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।শনিবার (১৩ জুন) সকাল ১১টার দিকে জারি করা এ নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।বরিশাল নদী বন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবুল বাশার মজুমদার জানান, বৈরি আবহাওয়ায় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে ৬৫ ফুটের চেয়ে ছোট লঞ্চ চলাচলের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ রুটের অন্যান্য লঞ্চগুলোকেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে নদীপথে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।এর আগে একই কারণে বৃহস্পতিবারও বরিশালে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।