1434435758

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ জুন: রাজধানীতে জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল হক এ আদেশ দেন।রনির পক্ষে তার আইনজীবী শওকত ওসমান জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি (রনি) স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এই নরহত্যায় জড়িত নন।এর আগে গত রবিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ন্যাম ভবনে পিনু খানের সরকারি ফ্ল্যাটের গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান থেকে ওই খুনের ঘটনায় ব্যবহূত গাড়িটি জব্দ করে। পরে সেটি মামলার আলামত হিসেবে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে রাখা হয়।গত ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতে এই গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় নিউ ইস্কাটন রোডে মদ্যপ অবস্থায় যানজটে বিরক্ত হয়ে নিজের লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে এলোপাতারি গুলি করেন বখতিয়ার আলম রনি। এতে দৈনিক জনকণ্ঠের অটোরিকশা চালক ইয়াকুব আলী ও রিকশা চালক আবদুল হাকিম নিহত হন। রনির মা পিনু খান মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই দীপক কুমার দাস জানান, দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গাড়িটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত। কারণ এই গাড়িতে বসেই গুলি চালিয়েছিল রনি। মামলার তদন্তের স্বার্থে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে, এমপি পুত্র রনির কাছ থেকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না নিয়েই কারাগারে পাঠানোর অভিযোগের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবনবন্দি না দিলেও জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণে কোনো সমস্যা হবে না। তার জবানবন্দি ছাড়াও অনেক তথ্য-প্রমাণ পুলিশের কাছে রয়েছে।জাড়া খুনে যে সাংসদপুত্র রনি জড়িত সেটা কেউ জানতো না। পুলিশ পেশাগত দায়িত্ব থেকে একটি ক্লুলেস ঘটনাকে ক্লু দিয়েছে। রনিকে গ্রেপ্তার করার পর সাবাই জেনেছে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে রনিই।জোড়া খুনের ঘটনা এবং এমপিপুত্র বখতিয়ার আলম রনিকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি ওই ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন।মনিরুল ইসলাম বলেন, সাংসদপুত্র রনি যে ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পূর্বে কোনো মহলই কিছু জানতো না। পুলিশ সম্পূর্ণ ক্লুলেস কেসটি দীর্ঘ সময় তদন্ত করে আসামি সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করার পরেই বিষয়টি মূলত মিডিয়ায় এসেছে, জনগণ জানতে পেরেছে। তার আগে এই ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তিনি সাংসদপুত্র নাকি অন্য কেউ তা কেউ জানতো না। মূলত পুলিশই একটা ক্লুলেস ঘটনাকে পেশাগত দায়িত্ববোধ, দক্ষতা ও আন্তরিকতা থেকে তদন্ত করে ঘটনার বিস্তারিত তুলে এনেছে এবং ঘটনায় জড়িত এমপিপুত্র রনিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় মূলত এমপিপুত্রকে দুই দফায় আটদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পরপরই তার কাছ থেকে লাইসেন্সকৃত অস্ত্রটি জব্দ করা হয়েছে। আপনাদের অবগতির জন্য বলছি, প্রথমে মৃত্যুর আগে আহত ভিকটিমের শরীরে যে গুলি পাওয়া গিয়েছিল সেটি সংরক্ষণ করা হয়। গত ২৮ মে সেটির ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্যপাঠানো হয়েছে। আসামি রনিকে গ্রেপ্তারের পর যে অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি, সেই অস্ত্রটি জব্দ করা হয়। সেই অস্ত্রটিও পরীক্ষার জন্য গত ৬ তারিখে ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য সিআইডতে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আমরা আছি।মনিরুল ইসলাম বলেন, যদিও ড্রাইভার তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে, ওই অস্ত্রটি দিয়েই রনি গুলি করেছে এবং রনিও এক পর্যায় স্বীকার করেছে ওই অস্ত্রটি সে ব্যবহার করেছে। তবে ব্যালাস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে এই অস্ত দিয়েই গুলি করেছে। সিটি নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টির চালানো হচ্ছে। এই ঘটনায় আরও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন। ওই গাড়িতে আরও একাধিক ব্যক্তি ছিল। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে রনিকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে। আটদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পরে আমরা আপাতত তাকে রিমান্ডে আনিনি। এই তথ্যগুলো এবং ব্যালাস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে তাকে আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে আসব।

তিনি বলেন, ১৬৪-এর কথা যেটি বলা হয়েছে, সাধারণত এটি নিয়ে ধুম্রজালের কোনো সুযোগ নেই। কেউ সেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইলে তাকেই ১৬৪-এর জন্য আদালতে পাঠানো হয়। তিনি (রনি) শুরু থেকেই বলেছেন আদালতে স্বীকারোক্তি দেবেন না। আমরা বিভিন্নভাবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এতে মনে হয়েছে তিনি স্বীকারোক্তি দেবেন না। আমরা ১৬৪-এর কথা আবেদনে বললে তিনি আদালতে গিয়ে ডিনাই করলে তদন্তকাজে ব্যাঘাত ঘটত। এতে ভবিষ্যতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ থাকত না। এই কারণেই আমরা বিষয়টি লিখিনি।তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন এই মামলায় ভিকটিমের পরিবার কেমন, তাদের কোথাও বলা বা তদবির করারও সুযোগ নেই। তথাপি ক্লুলেস মামলাটি ডিবি স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ডিবি তদন্ত করে আসামির পরিচয় নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করেছে। ফলে এখানে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বা ফাঁকফোকর দেখা হচ্ছে- বিষয়টি এভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আমরা অনুরোধ করব এ বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় যেনে কোনো ধুম্রজাল সৃষ্টি করা না হয়।’মনিরুল বলেন ৩১ মের আগে আপনারাতো ঘটনাটি জানতেনই না। কোনো কোনো মিডিয়ায় গাড়ির রঙ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। এজাহারে ফাস্ট ইনফরমেশন থাকে। তাই এসব বিতর্কের সুযোগ নেই। আমরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে মামলাটির তদন্তকাজ শেষ করব।