jamuna nodi

দৈনিকবার্তা-টাঙ্গাইল, ১৬ জুন: বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের কবলে যমুনা নদীর পাড়। অভিসপ্ত নদীর কিনারা ছাড়তে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে এ অঞ্চলের বসতীদেরকে। নতুন বাসস্থান স্থাপনা আর পরবর্তী কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য পরিবারটি গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। স্মৃতিময় বসতবাড়ি ছেড়ে অচেনা পথের সন্ধানে নদী পথে রওনা হচ্ছে এ অঞ্চলের শত শত পরিবার।পানি বৃদ্ধি ও ঘন ঘন ভারীবর্ষণের ফলে গত কয়েকদিনে ৪ শতাধিক পরিবার নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা,গাবসারা, নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের সরাতৈল,হরিপুর ও চালপাকলা নাগরপুর উপজেলার আটাপাড়া,সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকার বহু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রমত্তা যমুনা নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে মানুষের ঘর-বাড়ি ছাড়াও তাদের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙন কবলিত লোকজন তাদের ঘর-বাড়ি সরানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষনে নদীর পানি বৃদ্ধিতে একদিকে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন অন্যদিকে ভাঙনের ফলে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল, কলেজ, নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি, মসজিদ, মন্দির, পোল্ট্রি খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অথচ ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবো কর্তৃপক্ষ। দ্রুতগতিতে নদী ভঙনের ফলে ঘরবাড়ি ও গৃহস্থলি জিনিস সড়ানো নিয়ে বিপাকে পড়েছে যমুনী তীরবর্তী মানুষ। ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম ইতিমধ্যে নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শণ করেছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের যমুনায় নদীভাঙন এলাকার আব্দুস সালাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, বেহানে জাল পাতচিলাম এহান থিকা ৪শ আত দুরে। তহন ওনেই নদীর পাড় আছিল। রাত পোহাইলে দেহি ঘরের ঢুয়া ভাংতাছে। জান বাঁছানের নিগা নৌড় দিলাম। শুধু সালাম নয়, এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই বিপাকে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফেজ আবু রায়হান বলেন, এই এলাকায় গত দু-বছর পূর্বে নদীর প্রশস্থ ছিল ৩ মাইলের মতো। বর্তমানে সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের সরাতৈল,হরিপুর ও চালপাকলা নাগরপুর উপজেলার আটাপাড়া,সিরাজগঞ্জের চৌহালী গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ বছরে তিন থেকে চারশ বসতবাড়ি সহ গত তিন বছরে প্রায় সাড়ে ৬’শ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নদীর প্রশস্ততা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ মাইলে। ক্রমশ ভাংছে নদী। পূর্বদিকে সরে পরিবর্তন হচ্ছে নদীর রুপরেখা। বিপাকে পড়তে হচ্ছে নদীর গ্রাসে কবলিত জনবসতিদের। নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে প্রায়ই নদী কিনারায় স্থানীয়রা আয়োজন করছে দোয়া মাহফিল।

অভিযোগ উঠেছে, গত দুই বছর যাবৎ যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হলেও তা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। বরং গত বছর ভাঙনরোধে ৫শ’ বস্তা জিও ব্যাগ বরাদ্দ হলেও সেগুলো ব্যবহার করা হয়নি। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগ্রই কাজ শুরু করা হবে।