Cox-pic-3-01-newsnextbd

দৈনিকবার্তা-কক্সবাজার, ২৪ জুলাই: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার জেলায় আবারো ভারী টানা বর্ষণে। কক্সবাজার শহরসহ অধিকাংশ এলাকা এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আবারও জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে করে আবারো বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার ভোর থেকে কাজের খোঁজে ঘরের বাইরে আসা হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। বর্ষণ এবং সড়কের জলাবদ্ধাতার কারণে পর্যটন নগরীতে যানবাহন চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারি ও মাঝারি বর্ষণ হওয়ায় বিভিন্ন নিচু এলাকা ও সড়ক প্রায় কোমর সমান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। এতে যানবাহন চলাচলে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। সাম্প্রতিক টানা বর্ষণ আর অমানিশার জোয়ারের পানিতে ভাঙ্গনের কবলে পড়া নদীর তীর ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর মেরামত সম্ভব না হওয়ায় সপ্তাহ না পেরোতে আবারো পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

গত মাসের শেষের দিকে শুরু হয়ে চলতি মাসের শুরুতে শেষ হওয়া বন্যায় জেলার কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া,টেকনাফ ও রামু উপজেলাবাসী অতিরিক্ত ক্ষতির মুখে পড়েন। মাতামুহুরি, বাঁকখালী ও ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাঙ্গন ধরেছে বাঁধের একাধিক স্থান ও অসংখ্য ঘরবাড়ির। বৃহস্পতিবার রাত থেকে আকাশ ক্রমে মেঘাচ্ছন্ন হতে থাকায় আবারো বন্যার আশঙ্কায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন দুর্ভোগে পড়া লোকজন।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারি ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুক্রবার সকালেই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে আবহাওয়া দপ্তরে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত ৪৭মিলিমিটার আর শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতি বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ৩ ইন্সি বৃদ্দি পেয়েছে। বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী লঘুচাপ বিরাজ করায় কক্সবাজারসহ সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এর প্রভাবে কক্সবাজার জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা। থেমে থেমে হতে থাকা বর্ষণের পানি জমে কক্সবাজার শহরের বাজার ঘাটা ,হোটেল-মোটেল জোন, কলাতলী, লারপাড়া, চাদেরপাড়া, হাজিপাড়া, পেশকারপাড়া, এসএমপাড়া, বিডিআর ক্যাম্প, পেতাসওদাগরপাড়া, রুমালিয়ারছরা, চরপাড়া, সমিতিপাড়াসহ শহরের আশপাশের নিম্নাঞ্চল ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে শহরের বাজারঘাটা এলাকার সড়ক দু’থেকে তিন ফুট পানিতে ডুবে রয়েছে। কষ্ট করে রিকশা পারাপার হলেও বন্ধ রয়েছে অন্য যানবাহন চলাচল।

এ এলাকার শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে মালামাল। এ সড়কের পাশাপাশি হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি চলাচল করছে বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘীর পাড়, অ্যাডভোকেট সালামত উল্লাহ সড়ক, বড়বাজার এলাকা ও পেশকারপাড়ায়। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধ হওয়া এসব সড়কের নিত্য চিত্রতে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বড়বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ হাসান ও মোঃ ইসমাইল। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জুন মাসের শেষে শুরু হওয়া বন্যায় জেলায় প্রায ২১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওর কানিয়ারছরা, ভোমরিয়াঘোনা এলাকা, পোকখালী ছমিউদ্দিন পাড়া এলাকা, ইসলামাবাদের পাঁহাশিয়াখালীতে ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর তীর ভাঙনের কবলে পড়ে। রামুর রাজারকুল, অফিসেরচর, মুক্তারকুল, পিএমখালীসহ একাধিক স্থানে বাঁকখালী নদীর তীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের কারণে পার্শ্ববর্তী উপজেলা পেকুয়াসহ বিশাল এলাকা পানিতে ডুবে যায়। এসব এলাকা এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ফলে, আবারো বৃষ্টি বাড়তে থাকায় আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা। ঈদগাঁও ভোমরিয়া এলাকার মোস্তাফা কামাল বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।

যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত সমতলে হচ্ছে সে তার অর্ধেক পরিমাণ বৃষ্টিপাত পাহাড়ে হলে সম্প্রতি শেষ হওয়া বন্যার চেয়েও বেশি প্লাবনের শিকার হবে নদীতীরবর্তী এলাকার লোকজন। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়মী লীগ সভাপতি জাফর আলম এমএ জানান, সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনো পুরোপুরি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এর ভেতর যদি আবারো বন্যার কবলে পড়লে প্লাবিতদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ভাঙ্গনের কবলে পড়া নদীতীর মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সকল ইউএনওকে চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে।