CIRMQxkXAAAEcCb

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ জুলাই: গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম ,ফেনী,কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে ভোগান্তিতে পড়েছে চট্টগ্রামবাসী। পানি বন্দি হয়ে আছে হাজারো মানুষ। দূভোর্গে জীবন কাটাচ্ছে তারা । বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণেজ রোববার সকাল ১০টা থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।আবহাওয়া অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার একথা বলা হয়।

এদিকে,গত জুন মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫ ভাগ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালে বেশি এবং রংপুর ও সিলেটে কম বৃষ্টি হয়েছে।জুন মাসে ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টির গড় ৩৫৫ মিলিমিটার (মি. মি.) বৃষ্টি হয়েছে ৪২০ মি. মি.। বেশি হয়েছে ১৮ ভাগ।এ মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টির গড় ৫৮৯ মি. মি.। বৃষ্টি হয়েছে ৮৩০ মি. মি.। বেশি হয়েছে ৪১ ভাগ।অন্যদিকে,দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বরিশাল নদী বন্দরের জন্য ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়ায় বিআইডব্লিউটিএ অভ্যন্তরীণ রুটে ৬৫ ফুটের নিচের সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।রোববার দুপুর ১২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

বরিশাল নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল বাশার মজুমদার জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করা ৬৫ ফুটের নিচের লঞ্চ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য লঞ্চগুলোকে নিরাপদে চলাচল করতে বলা হয়েছে।এদিকে বরিশালে সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা রয়েছে। ঝড়ো হাওয়াসহ থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বরিশাল আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিাপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আগামী ২৪ ঘন্টায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শরীয়তপুর থেকে সকল নৌরুটের নৌ- যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রোববার সকাল থেকে কিছু কিছু নৌ-যান চলাচল করলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ হওয়ায় রোববার দুপুর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসন জেলার সকল এলাকার নৌ- যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে।জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জননিরাপত্তার স্বার্থে সাময়িকভাবে শরীয়তপুর থেকে সকল ধরনের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে আবার যথারীতি নৌ-যান চলাচল শুরু হবে।উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর পুনঃ ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম:চার দিনের টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে ভোগান্তিতে পড়েছে চট্টগ্রামবাসী।শনিবার বেলা ১২টা থেকে রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া এ বৃষ্টিতে নগরীর ষোলশহর, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, চান্দগাঁও, প্রবত্তর্ক, হামজারবাগ, চকবাজার, আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বড়পোল, হালিশহর, পতেঙ্গা, সিমেন্ট ক্রসিং, কাঠগড় ও বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যাওয়ার পাশাপাশি শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের মাটি ধসে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির একটি কক্ষের জানালা ও দেয়াল ভেঙে পড়েছে। একাডেমির কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন শিকদার জানান, একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পেছনের পাহাড়ের মাটি ধসে সীমানা প্রাচীর ভেঙে কাদামাটি ঢুকে গেছে অফিস কক্ষে। এছাড়া দ্বিতীয় তলার জানালা ভেঙেও মাটি ঢুকেছে।বিমানবন্দর সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ওই পথ দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

ওই এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে বলে বাসিন্দারা জানান।প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামবাসীকে ভুগতে হয় বলে গত এপ্রিলে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অনেক বিষয় ছাপিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টিই ভোটার আর প্রার্থীদের আলোচনায় প্রাধান্য পায়। জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা থেকে বন্দরনগরীর মানুষকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া আ জ ম নাছির উদ্দিনও রোববার দায়িত্ব গ্রহণ করতে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে ঢোকেন বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে।পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টি চলার সম্ভাবনা আছে।

সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। চারদিনের টানা বৃষ্টিতে পানিতে ডুবে আছে নগরীর নিচু এলাকা। কিন্তু এ সমস্যাকে বড় করে দেখতে চান না নতুন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনায় বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তিনি।নির্বাচিত হওয়ার তিনমাস পর রোববার দুপুরে দায়িত্বগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ চ্যালেঞ্জের কথা জানান তিনি।

আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন,যারা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভেতরের খবর জানতো না তারা মনে করতো এক মাত্র সমস্যা জলাবদ্ধতা। আমার কাছে মনে হয়েছে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। আমি যাদেরকে দিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত, উন্নত ও বিস্তৃত করতে যাবো, তাদের অবস্থা যদি বেহাল থাকে তাহলে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। গ্রহণ করলেও বাস্তবায়ন করা যাবে না।নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে তিনি বলেন,তুমুল বৃষ্টিপাত প্রকৃতির আচরণ। বৃষ্টিপাত বন্ধের ক্ষমতা আমার কেন, কারো নেই। উত্তরাধিকার সূত্রে এ জলাবদ্ধতা সমস্যা আমি পেয়েছি। শপথ গ্রহণ করার পর দায়িত্ব না নিলেও কিছু বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি বলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে যাচ্ছে। এটা আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যায়ক্রমে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন,আগামী এক বছরে মধ্যে বন্দর এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত করা হবে। এক সঙ্গে তো পারবো না। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরী জলাবদ্ধতামুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ও ওয়াসার সহযোগিতা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সিস্টেমেরও আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানান তিনি ।

কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফ সেন্টমার্টিন দ্বীপে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার আঘাতে বসত বাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দ্বীপের পশ্চিম-দক্ষিণ এলাকায় অকস্মাৎ ঝড়সহ ঘূর্ণিবাতাস আঘাত শুরু করে।

শুধু বাড়ি ঘর নয় ঝড়ো হাওয়ার আঘাতে দ্বীপের গাছ-পালাও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। সেন্টমাটিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সন্ধ্যার পর হঠাৎ টর্নেডোর আদলে ঝড়ো হাওয়া আঘাত শুরু করে। এতে দক্ষিণ পাড়ার সাতটি বসত ঘর ও গাছ-পালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।তিনি আরো জানান, দুর্যোগপুর্ণ আবহাওয়া ও সর্তক সঙ্কেতের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ নৌরুটে সবধরণের নৌ-যাতায়ত বন্ধ রয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, টর্নেডোর আদলে বয়ে যাওয়া ঝড়সহ ঘূর্ণি বাতাস প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী ছিল। এসময় সেন্টমার্টিনদ্বীপের দক্ষিণ পাড়ার মৃত আব্দু রশিদের স্ত্রী রুকুন নেচা (৯৮), হাজী আব্দু শুক্কুরের ছেলে নূরুল বশর (৩৯), ফজল আহাম্মদের ছেলে আব্দুল গনি (৩৫), আব্দু রশিদের ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৩৫), মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে কবির আহাম্মদ (৪০), রুহুল আমিনের ছেলে আব্দু শুক্কুর (৩৮) ও নূর আক্কাস (৩৭) এর বসত বাড়ি ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

লামা : বান্দরবানের লামা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রোববার বিকাল নাগাদ পৌর এলাকাসহ ৭টি ইউনিয়নের ৫ সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। পাহাড় ধসে বিধস্ত হয়েছে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি। পাহাড়ি ঢলের পানির ¯্রােতের টানে ও পাহাড় ধসে পড়ে অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এর চেয়েও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্যাজ রিডার মো. আবু তৈয়ব জানিয়েছেন, রোববার বিকাল নাগাদ মাতামহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ, বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম, পৌর মেয়র মো. আমির হোসেন পৃথক ভাবে বন্যা কবলিতদের মধ্যে তাৎক্ষনিকভাবে শুকনো খাবার বিতরন করেছেন। এদিকে, পাহাড় ধসে পড়ে ও বন্যার পানিতে লামা-সুয়ালক সড়ক, লামা- আলীকদম সড়কসহ অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, লামা পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাপক হারে পাহাড় ধসে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্যার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদী, খাল ও ঝিরির বৃদ্ধি পেয়ে পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে ২০ হাজার মানুষ।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বন্যা কবলিতদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বন্যায় লামা পৌরসভা এলাকার ৩ হাজার ঘরবাড়ি ও ফাইতং, লামা সদর, রুপসীপাড়া, গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী ও আজিজনগর ইউনিয়নেও প্রায় দু’সহ¯্রাধিক বসতঘর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ওইসব স্থানেও বন্যা কবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তাৎক্ষনিকভাবে শুকনো খাবার প্রদান করা হয়েছে।

লামা পৌরসভা মেয়র মো. আমির হোসেন জানান, পৌর এলকার প্রায় ৩ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বন্যায় ও পাহাড় ধসে বিধস্ত হয়। বন্যা কবলিতদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৪, ২৫ ও ২৬ জুন এ তিন দিনের টানা বর্ষনে সৃষ্ট বন্যায় সরকারি হিসেবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৭ হাজার ৭শ’ ২০ পরিবার সম্পূর্ণ এবং ৬ হাজার ৫শ’৪০ পরিবারের বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে মৎস্য, গবাধি পশু, কৃষি, রাস্তাঘাট, বসতঘরসহ বিভিন্ন খাতে ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।

ফেনী : মুহুরি ও কহুয়া নদীর উপর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩টি অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এতে করে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুলগাজী বাজার অংশ পানিতে তলীয়ে গেছে। ফুলগাজী বাজারের কয়েক শত দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত শনিবার ও রবিবার উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২শ’ পরিবারের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, মুহুরী নদীর সাহপাড়া ২০ মিটার ও উত্তর দৌলতপুরে ৩০ মিটার ও কহুয়া নদীর বৈরাগপুরে ৩০ মিটার এলাকা বাঁধ ভেঙ্গে ধেয়ে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী উপজেলার শাহা পাড়া, উত্তর ও দক্ষিণ দৌলতপুর, বৈরাগপুর, পশ্চিম ও উত্তর ঘনিয়ামোড়া, বরইয়া এবং পাশের ছাগলনাইয়া ও পরশুরামের ট্যাটেশ্বরসহ অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েকশ বসতবাড়ি, গাছপালা, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এছাড়াও ভারী বর্ষণে মুহুরি ও কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শ্রী চন্দ্রপুর, জয়পুর ও জগতপুর এলাকায় বাঁধের ৪টি স্থান যেকোন মুহুর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে।

এদিকে,রবিবার বন্যায় দুর্গত ১২শ পরিবারকে ২ লিটার করে বিশুদ্ধ পানি ও দু’টি করে খাবার স্যালাইনসহ শুকনো খাবার বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন।ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহিদুর রহমান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিক মুহুরি ও কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩ স্থানে ভাঙ্গনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি কমে যাবে।

এদিকে,ফেনী পৌর এলাকায় খাল ও ড্রেন দখল করে দোকানপাট নির্মাণের কারণে ফেনীতে জলজট কমছে না। গত দুই দিনের টাকা বৃষ্টিতে সড়কসহ শহরের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়ীতে পানি ঢুকে লাখ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে দাউদপুর ব্রীজ পর্যন্ত খাল, পাগলির ছড়া খাল, খাজা আহম্মদ লেক দখল হয়ে যাওয়ায় এমন জলজট তৈরি হয়েছে। এতে করে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার জন্য রাস্তাঘাটে কম যানবহন চলাচল করায় ভোগান্তিতে পড়েছে শহরবাসী।এদিকে শহরের এসএসকে রোড, নাজির রোড, শান্তি কোম্পানি রোড, রামপুর,ডাক্তারপাডা, উকিলপাড়া, মাস্টার পাড়া, পেট্রোবাংলা, পুলিশ কোয়ার্টার, একাডেমী রোড, জেল রোড,হাসপাতাল রোড, মিজান পাড়া, বারাইপুরসহ, পশ্চিম ডাক্তার পাড়া রোডসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লার সড়ক সমুহ পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সময় ডাক্তার পাড়া, শান্তি রোড, একাডেমি এলাকা. শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ও খাল ও লেক দখল হয়ে যাওয়ায় শহরে এ জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ড্রেন পরিস্কার না করায় শহরবাসীকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ফেনী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোসলেহ উদ্দিন হাজারী বাদল জানান, ১৭ জুলাই থেকে ফেনী অবিরাম বৃষ্টি হওয়ায় শহরে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার কর্মীরা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ সব সময় ড্রেনগুলো পরিস্কার রাখার চেষ্টা করে।

লৌহজং প্রতিনিধি জানান, পদ্মায় হু হু করে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছেএছাড়া মাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই পদ্মার পানিপ্রবাহ, আজ সকাল থেকে কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় পদ্মা উত্তাল হয়ে উঠায় এসব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৯টায় কাওড়াকান্দি ও বেলা ১১ টায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাট থেকে এসব নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। শিমুলিয়া নদীবন্দরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তোফাজ্জল হোসেনএসব তথ্য নিশ্চিতকরেন , বৈরী আবহাওয়ায় পদ্মা নদীর পানি উত্তাল ঢেউ হয়ে উঠে। সেই সাথে নদীর ¯্রােতও দেখা দেয়। এতে উভয়ঘাট থেকে লঞ্চ, সিবোট, ট্রলারসহ ছোট ছোট নৌযানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে পুনরায় এ নৌরুটে বন্ধ রাখা নৌযানগুলো চালু করা হবে। বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম এস এম আশিকুজ্জামান জানান দোপুর ১টা থেকে এরুটের বড় আকারের ৬টি ড্রাম ফেরী বন্ধকরে দেওয়া হয়েছে এদিকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।ফলে শত শত পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। লৌহজং উপজেলার কলমা ,হলদিয়া ,কনকসার ,কুমারভোগ, মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে উপজেলার মাওয়া পোরাতন ফেরীঘাট ও কুমারভোগ ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে ।

নাটোর : নাটোরে চিতলগাড়ির বিলের সংযোগ খালের বাঁধ শত্র“তা করে কেটে দিয়ে একটি পেয়ারা ও লেবুর বাগান ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগ এনে বাগানের মালিক আলফাজুল আলম নাটোর থানায় একটি জিডি করেছেন। অভিযোগকারী আলফাজুল আলম জানান, শহরের আলাইপুর এলাকায় মৃত নুরুন নবীর জমি লীজ নিয়ে গত চার বছর ধরে পেয়ারা ও লেবুর বাগান করছেন। বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিতলগাড়ির বিলের সংযোগ খালের পানি নারদ নদী দিয়ে বেরিয়ে যায়। পৌর এলাকার ভিতরে ঐ খালটির অনেক জায়গায় এখন মাটি ফেলে বন্ধ করে বিভিন্ন ধরনের অবকঠানো নির্মাণ করায় বর্ষার পানি এই খাল দিয়ে বের হয়ে নদীতে যেতে পারছেনা। এতে করে খালের অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়ার জন্য কে বা কারা শত্র“তা করে বাঁধ কেটে দিয়ে তার বাগান ডুবিয়ে দিয়েছে। এতে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি উল্লেখ করে নাটোর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা: টানা বর্ষনের ফলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বল্লী, ফিংড়ি ও লাবসা ইউনিয়ন সহ সাতক্ষীরা শহরের ২০টি বিলের অন্তত ৩৫ হাজার বিঘা কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মৎস্য ঘেরের লোনা পানি উত্তোলন, অতি বর্ষণ, পানি নিষ্কাশানের পথ না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিতে যাচ্ছে ২০টি বিল। গত ১৫ দিন ধরে প্রতিটি বিলের কানায় কানায় পানি ভরে গেলেও পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। পানি না কমায় কৃষকের আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা, পাট নষ্ট হয়েছে। কয়েকটি সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে গ্রামের ভিতর পানি ঢুকছে। কৃষকরা জানায়, চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করতে না পারলে তাদের পথে বসতে হবে। সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরুতে সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙ্গা, কুন্দুরানীসহ কয়েকটি স্লুইচ গেট দিয়ে মৎস্য ঘেরে লোনা পানি উঠানো হয়। এ পানি বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ও ফিংড়ি ইউনিনের বিভিন্ন বিলে প্রবেশ করছে। সম্প্রতি বৃষ্টির এ পানির সাথে যোগ হওয়ায় ৪ ইউনিয়ন সহ শহরের প্রত্যেটি বিলে কানায় কানায় টইটম্বুর হতে থাকে।