farmer-Biztola

দৈনিকবার্তা-কলাপাড়া, ২৭ জুলাই ২০১৫: কলাপাড়ায় এবছর অন্তত ২০ হাজার একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ পরিমান জমি অনাবাদি থাকার প্রবল আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতির এবং মানুষসৃষ্ট বিপর্যয়ে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক পরিবার এমন দুরবস্থায় পড়েছেন। একমাত্র আমন ফসল নির্ভর তাও হারানোর শঙ্কায় পড়েছে কৃষকরা। চাষাবাদের জমিতে গলা থেকে কোমর সমান পানিতে প্রায় মাসব্যাপী ডুবে থাকায় কৃষকের এমন সর্বনাশ হতে যাচ্ছে। আর মাত্র দু’চারদিন সময় রয়েছে বীজতলা করার, এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া না হলে এসব কৃষককে আগামি মৌসুমে না খেয়ে থাকতে হবে। কৃষকরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি অফিস, উপজেলা প্রশাসনসহ সর্বত্র ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কেউ তাদের এ সমস্যা লাঘবে ন্যুনতম আন্তরিকতা দেখায়নি। শুধু ব্যক্তিগতভাবে এসব কৃষক পরিবারের সমস্যা ছাড়াও এ পরিমাণ জমি অনাবাদী থাকলে অন্তত ২৫ হাজার মেট্রিকটন চালের উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফি-বছর চাহিদার অন্তত দ্বিগুন উৎপাদন অঞ্চল কলাপাড়ায় এবছর এখানকার চাহিদা মেটানোর মতো চালের উৎপাদন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এবছর টানা বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে কৃষকের বীজতলা পানির নিচে ডুবে আছে। কিন্তু মহিপুর-ডালবুগঞ্জ যোগাযোগের জন্য গাববাড়িয়া পয়েন্টে নদীতে পানিউন্নয়ন বোর্ড এবছর একটি ক্লোজার করায় চারটি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার কৃষক পরিবারের আরও অন্তত ১৫ হাজার একর আমন আবাদের জমি প্রায় দেড় মাস পানিবন্দী হয়ে আছে। মানবসৃষ্ট এ বিপর্যয়ে পড়া এসব কৃষক এখন পর্যন্ত জমিতে চাষাবাদ তো দুরের কথা বীজতলা পর্যন্ত করতে পারেনি। মিঠাগঞ্জ, ডালবুগঞ্জ, বালিয়াতলী ও ধুলাসার ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক কৃষক পরিবারের এমন মরন দশা হয়েছে। ক্লোজারটি নির্মাণের কারনে চারটি ইউনিয়নের পানি ওঠা নামার অন্তত ১৯টি স্লুইস অকেজো হয়ে গেছে। পানি নামছে না। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়েছে তিনটি সংযোগ ও শাখা নদীর।কলাপাড়া কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ায় আবাদি জমির পরিমাণ ৯৬ হাজার ৫৭৭ একর। গত বছর এপরিমাণ জমি থেকে আমন উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ২৪১ মেট্রিক টন চাল। যা কলাপাড়া উপজেলার মানুষের খাদ্য চাহিদার চেয়ে দ্বিগুন। কিন্তু এবছর কৃষকের বেহাল দশা। অন্তত ২০ হাজার একর কৃষি জমি জলাবদ্ধতার কারনে আমন আবাদ বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মিঠাগঞ্জের ইউপি মেম্বার ও কৃষক মাসুদ মিয়া জানান, বর্ষা শুরু থেকে তাদের এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার কৃষকের কয়েক হাজার একর জমি পানিতে ডুবে আছে। গাববাড়িয়ার ক্লোজার করায় তাদের এমন দুরবস্থা হয়েছে। সকল কৃষকের আমন বীজতলা পচে গেছে। কারও এখন বাড়তি বীজধান নেই। একই দশা বালিয়াতলী, ধুলাসার ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের অর্ধেক এলাকা। একমাত্র আমন ফসল নির্ভর এসব কৃষকের এখন চোখেমুখে চরম হতাশা। এদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কৃষক মিলন কাজী জানান, দুই/চার দিনের মধ্যে ক্লোজার কেটে পানি সরানোর ব্যবস্থা না করলে তাদের এবছর না খেয়ে থাকতে হবে। শুধু খাওন-খোরাকি নয়। বাড়তি ফলন বিক্রি করে সংসারের অন্যান্য চাহিদা মেটানোর সুযোগও তাদের থাকছে না।

বর্তমানে বিস্তীর্ণ এলাকার আবাদি জমিতে পানি আর পানি। কোথাও কোমর সমান আবার কোথাও গলা সমান। পানিতে ডুবে আছে সব। সাফাখালী গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, বাড়ির উঠোন পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। মোট কথা হাজার হাজার কৃষক পরিবার পড়েছে মরন দশায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মসিউর রহমান জানান, জলাবদ্ধতায় অন্তত ১৬ শ’ হেক্টর বীজতলা ডুবে আছে। যার অর্ধেক পচে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তারাও এবছর আমন ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের গাববাড়িয়ার ক্লোজার হওয়ায় হাজার হাজার একর জমিতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার কথা শিকার করে এসব অপসারণের কোন সুখবর জানাতে পারেন নি।