coxs-flood-pic1_27.06.201_86472
দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ জুলাই ২০১৫: গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম ,ফেনী ,কক্সবাজার, বান্দরবান চ্াদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে ভোগান্তিতে পড়েছে চট্টগ্রামবাসী। পানি বন্দি হয়ে আছে হাজারো মানুষ। দূভোর্গে জীবন কাটাচ্ছে তারা। নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল, সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।এদিকে নদী উত্তাল থাকায় দেশের বেশিরভাগ নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। সদরঘাট নৌ-বন্দর, মাওয়া-চরজানাজাত, কাওরাকান্দি,পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌ-পথসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বেশীর নৌ-পথে রোববার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ।আবহাওয়া অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। সন্ধ্যা ৭টায় বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। উপকূলীয় এলাকায় মৌসুমী নি¤œচাপটি অবস্থান করছে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমী নি¤œচাপটি সামান্য পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।এটি সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থান করছিল।এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হতে পারে। সোমবার আবহাওয়ার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়

কক্সবাজার: কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউস সংলগ্ন রাড়ার স্টেশন পাহাড়ের একাংশ ধ্বসে মাটি চাপা পড়া মা-মেয়েসহ ৫ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কলেজ ও স্কুল শিক্ষার্থীসহ ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ভোররাত ২ টার দিকে শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া কবরস্থান পাড়ায় এ পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল আমিনের স্ত্রী লুৎফুন নাহার জুনু (২৫) ও মেয়ে নীহা মনি (৬), মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে শাহ আলম (৪৫), তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম (২৮) ও মৃত জাফর আলমের মেয়ে রিনা আকতার (১৬)। পাহাড় ধসের খবর পেয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাদের সাথে রাতে এসে যোগ দেন সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবির একটি টিম। সেনা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারি দল প্রায় দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে মৃত জাফর আলমের ছেলে শেফায়েত হোসেন (১৪) ও জাকের হোসেনের ছেলে নুরুন নবী (১৭) কে জীবিত উদ্ধার করেন। প্রতিবেশী ও নিজেদের চেষ্টায় ধ্বংস স্তুপ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন জহিরুল হকের মেয়ে শারমিন আকতার (২০), খায়রুল আমিনের ছেলে ৬ষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থী আয়াত (১০)।মাটিচাপা থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া কক্সবাজার তৈয়বিয়া তাহেরিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শেফায়েত হোসেন (১৪) জানান, খাবার খেয়ে অন্যরা ঘুমিয়ে গেলেও তিনি রাত জেগে পড়ছিলেন। রাত ২ টার দিকে বাড়ির পূর্বপাশ থেকে হঠাৎ বিকট শব্দ হলে তিনি ভয় পেয়ে টেবিল থেকে উঠে বাইরে থাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই বাড়ির উপর পাহাড়ের মাটি এসে পুরোবাড়ি দুমড়ে মুছড়ে দেয়। দরজার কাছাকাছি থাকায় বাড়ির বাইরের একটি দেয়ালের কিনারে পড়েন তিনি ও তার ফুফাতো ভাই কক্সবাজার সরকারী কলেজের সদ্য এইসএসসি ক্লাসে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী নরুন্নবী (১৭)। এরপর তার আর কিছু মনে নেই।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কক্সবাজার’র ইনচার্জ আব্দুল মজিদ জানান, রাড়ার স্টেশন পাহাড়ের একাংশ গাছসহ ধ্বসে পড়ে পাদদেশের চারটি সেমিপাকা বাড়ি মাটি চাপা পড়ে। এ ঘটনায় ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে মা-মেয়ের দু’টি এবং দুপুরে মাটি সরানোর পর অপর তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাটিচাপার প্রায় দেড় ঘন্টাপর তিন জন কে জীবিত উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাড়ি গুলোর উপর প্রায় ১০ ফুট মাটিচাপা পড়ায় বেগ পেতে হয় উদ্ধারকর্মীদের। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের সাথে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে পেকুয়া ও চকরিয়ার দমকল বাহিনী কর্মীগণ ও সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবির একটি টিম। দুপুরে এসেছে যোগ দেন বিজিবির একটি টীম। বিকাল সাড়ে তিনটায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। উদ্ধার কাজে যোগ দেয়া সেনাবাহিনীর কক্সবাজার ১৬ ইসিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মাহবুব জানান, থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় উদ্ধারকাজে বিঘœ সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, মাটিচাপা পড়ার পর অপর দুটি বাসায় বসবাস করা লোকজন ভাগ্যক্রমে নিজেদের চেষ্টায় বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ বলেন, উদ্ধার কাজ নির্বিঘœ করতে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি তৎপর ছিল।বাহারছরা এলাকার মুহাম্মদ মুরাদ জানান, পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানি রোধ করতে রবিবার বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারিদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। আজ স্মোবারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে অন্যত্র সরে যাবার সময়সীমা বেধে দেয়া হয়। কিন্তু রাত পার হবার আগেই বিক্ষ্ব্ধু পাহাড়ের মাটি বেশ কয়েকটি তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও উন্নয়ন) ড. অনুপম সাহা বলেন, জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের সরিয়ে নেয়ার কাজ অব্যাহত রেখেছে। খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রতিনি আরো জানান, ভারি বর্ষণে রবিবার দিবাগত রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে আরও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে ওসবের মধ্যে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও শহরের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

উল্লেখ্য, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ এক বিবণরীতে সম্প্রতি প্রচার করে প্রবল বর্ষণে কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রামে যেকোনো সময় ভূমিধস হতে পারে।এ খবর পেয়ে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্ব একটি টিম তাদের নিরাপদে সরে যেতে অনুরোধ করে আসেন। কক্সবাজার, ২৭ জুলাই, ফোকাস বাংলা নিউজ : কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টে ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ফিশিং ট্রলার ডুবে জুবাইদ (৩২) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জেলেকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে শমসু মাঝি, এনায়েত উল্লাহ ও মো. হানিফ নামে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। এতে আরো ৯ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। ২৭ জুলাই সোমবার সকালে ট্রলার ডুবির ঘটনাটি ঘটে। উদ্ধার জেলেদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।উদ্ধার শমসু মাঝি জানান, তিন দিন আগে তারা ১৫ জন লোক সাগরে মাছ ধরতে যায়। সোমবার সকালে উপকূলে ফেরার পথে ট্রলারটি শহরের ডায়বেটিক পয়েন্টে উল্টে যায়। এ ঘটনায় একজনকে মৃত এবং আরো ৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম জানান, ট্রলার ডুবির ঘটনায় উদ্ধার জুবাইদকে আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। এঘটনায় ৯ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকার কারণে শনিবার থেকে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল হয়ে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ায় সাগরে টিকতে না পেরে শত-শত ফিশিং ট্রলার কক্সবাজারের মৎস্য বন্দরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকায় আবহাওয়া বিভাগ সমুদ্র বন্দর মংলাসহ কয়েকটি বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত জারি করেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরা নৌকা ও মাছধরা ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।কক্সবাজার বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পেটের দায়ে জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে সাগরে নামছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার উপকূলে ৩নং সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ এলাকায় অবস্থান নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।টেকনাফ: সেন্টমার্টিন, শাহপরীরদ্বীপ ও বাহারছড়ার সাথে টেকনাফের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে এবং বাজারে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে সেন্টমার্টিন ও শামলাপুরে ৪টি ফিশিং বোট ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় ১ জেলের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া টর্নেডোর আঘাতে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ উপজেলায় ৫০ টি বসতবাড়ী লন্ডভন্ড ও শুধু শাহপরীরদ্বীপের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য সর্তকতা জারী করেছে এবং ১৬ টি অতি ঝুঁিকপূর্ণ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে।অপরদিকে ঝড়ো হাওয়ার কারনে গত ৪ দিন যাবৎ বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে গোটা টেকনাফ উপজেলা। ফলে ফ্রিজে রক্ষিত মাছ-তরকারীর পঁচন ধরেছে এবং গোটা উপজেলায় ভূতুড়ে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিগগিরই সরকারী উদ্যোগে পদক্ষেপ না নিলে রোগ-ব্যাধির সংক্রামনসহ পরিস্থিতি মারাতœক আকার ধারন করতে পারে। উপজেলার উপকূলের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ শাহপরীরদ্বীপ ও সাবরাং ইউনিয়নের মানবিক বিপর্যয় ও করুণ দশার সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও নিরাপদ সূপেয় পানির সংকট। বিশেষ করে শাহপরীরদ্বীপের ২০ হাজার মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। ওই এলাকার লোকজন কোন প্রকারে প্রতিবেশী গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে।

গত ৩ বছর ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা। অতি বৃষ্টি ও বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানিতে গোটা শাহপরীরদ্বীপ একাকার। সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান জানান- প্রবল ঝড়ো বাতাসে ৮ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ ও শাহপরীরদ্বীপের ২০ হাজার মানুষ পানি বন্ধ হয়ে রয়েছে এবং জোয়ারের পানিতে ঘোলার পাড়া, জালিয়াপাড়া, মাঝের পাড়ার প্রায় ২শতাধিক বসত-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ পাশ্ববর্তী উঁচু গ্রামে আশ্রয় নিয়ে রাত যাপন করছে। বলতে গেলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।টেকনাফ পৌর এলাকার টেকনাফ কলেজসহ কলেজ পাড়া, জালিয়াপাড়ায় পানিতে প্রাইমারী স্কুল ও রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। অলিয়াবাদের ফকিরার মোরায় পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারের পানিতে কাঁচা ঘর-বাড়ির ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বৃহত্তর নাইট্যংপাড়ায় পাহাড়ী ঢলে কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ এবং স্থানীয় গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় জনসাধারণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ডেইলপাড়ায় অসাধ্য ব্যক্তিরা একটি সরকারী কালভার্ট ও ড্রেন বন্ধ করে দেওয়াল নির্মাণ করায় ২শতাধিক পরিবারের পুরো গ্রাম পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এছাড়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব গোদারবিল,হাবিরছড়া,মিঠাপানির ছড়ায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া এবং পাহাড়ী ঢলে গ্রামীণ জনপদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। অপরদিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম নয়াপাড়া,রঙ্গিখালী লামার পাড়া, উলুচামরী কোনারপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নাটমোরাপাড়া, জালিয়াপাড়া, ফুলের ডেইল, সুলিশ পাড়া, হোয়াব্রাং, পশ্চিম সিকদারপাড়া,পূর্ব পানখালী, আলী আকবর পাড়া, মৌলভী বাজার, লামারপাড়ায় ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে বসত-বাড়ি, মৎস্যঘের এবং রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। হ্নীলা ইউপি সচিব হাকিম উদ্দিন পাহাড়ী জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে অত্র ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, মৎস্যঘের ও বসত-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং ভূমি ধ্বসে প্রাণহানি এড়াতে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী, নয়াবাজার, রইক্ষ্যং ও উলুবনিয়া এলাকায় পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারের পানিতে ৮০/৯০ ভাগ মৎস্যঘের ভেসে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী জানান। উপকূলীয় বাহারছড়ায় ৫নং হলবনিয়া গ্রামে সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় একটি বড় শিশু গাছ মাদ্রাসায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া শামলাপুর ও গুচ্ছগ্রামে প্রবল বাতালে প্রায় ২০ টি বাড়ী ঘর বিধ্বস্থ হয়েছে। বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌঃ হাবিব উল্লাহ জানান- প্রচারনা চালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৯নং দক্ষিণ পাড়ায় টর্ণেডোর আঘাতে ৩০টি বাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। আমির হামজা, নুর মোহাম্মদ ও সৈয়দ আলমের মালিকানাধীন ৩ টি ফিশিং বোটের ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় কেউ হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

kalapara-pic2-kuakata-BM2

সেন্টমার্টিনের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। এ পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন প্রকার সাহায্য বা ত্রাণ পৌঁছেনি। দ্বীপবাসী আতংকে দিনাতিপাত করছে। এছাড়া হ্নীলা রঙ্গিখালী মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল সংলগ্ন প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়া, পূর্ব পানখালীর কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়া এবং হোয়াব্রাংয়ের কালভার্ট ধ্বসে যাওয়ায় যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ধারনা করা হচ্ছে পুরো উপজেলায় কোটি কোটি টাকার গ্রামীণ জনপদ, ব্রীজ-কালভার্ট, মৎস্যঘের ,বসত-বাড়ির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।এছাড়া টেকনাফে ভারী বর্ষণ,সতর্ক সংকেত, নদ-নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় নৌকা ও ট্রলার দিয়ে মাঝি মাল্লারা মাছ শিকারে যেতে না পারায় বিভিন্ন মাছ বাজারে মাছের চরম আঁকাল দেখা দিয়েছে। নিত্যদিনের চাহিদার তুলনায় মাছের বেঁচা-বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলকভাবে খুবই কম।
এদিকে টেকনাফ উপজেলায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধ হয়ে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।ইউএনও শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। যারা সরে যাবেনা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।

ফেনী:ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। ফেনী সদর ও দাগনভূঁঞা উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।ফুলগাজীতে মুহুরী নদী ও কহুয়া নদীর বেড়ি বাঁধের পাঁচটি ভাঙ্গন স্থান দিয়ে বন্যার পানি আবারও ফুলগাজী বাজার ও আশেপাশের গ্রামে ঢুকে পড়েছে। ফেনী-পরশুরাম সড়কের ফুলগাজী বাজার অংশ দুই ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। ফুলগাজী বাজারের অধিকাংশ দোকানপাঠে পানি ঢুকে গেছে।ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিক বলেন, গত রোববার রাত থেকে ফুলগাজীতে মুহুরী নদী ও কহুয়া নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুটি নদীতে পানি বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং পানির প্রবাহ বেড়ে চলছে।এছাড়াও ভারী বর্ষণে মুহুরি ও কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শ্রীচন্দপুর, জয়পুর ও জগতপুর এলাকায় বাঁধের ৪টি স্থান যে কোন মুহুর্তে¡ ভেঙ্গে যেতে পারে বলে জানায় স্থানীয়রা।পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীতে বন্যায় ভেসে গেছে ৫৬ লাখ টাকার মাছফেনীর পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীতে বন্যায় বিভিন্ন পুকুর, দিঘী ও খামার থেকে প্রায় ৫৬ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। টানা বর্ষন, মুহুরী ও কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙ্গন ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এ ক্ষতি হয় বলে জানায় মৎস্য চাষীরা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, সৃষ্ট বন্যায় ফেনীর ৩ উপজেলায় মৎস্য চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। ওই উপজেলা গুলোতে ৭৮০ টি দিঘীর উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় পুকুরের মাছগুলো ভেসে গেছে। এতে করে অন্তত ৫৬ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। এদের মধ্যে ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৪২০টি পুকুর থেকে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে। ফুলগাজী উপজেলার ২৫০ টি পুকুর থেকে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ও পরশুরাম উপজেলার প্রায় ১১০টি পুকুর থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে দাবী করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ।ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আবদুল আজিজ নামে এক মৎস্য খামারী জানান, তার প্রজেক্টের সবগুলো পুকুর থেকে মাছ ভেসে গিয়ে অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন তিনি।পরশুরাম উপজেলার খামারী জাহেদা খাতুন জানান, বন্যার শুরুতে কোন রকুম টেনে টুনে জাল দিয়ে মাছগুলো আটকিয়ে রাখতে পারলেও শনিবার রাতে টানা বর্ষনে সবগুলো মাছ ভেসে গেছেজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই পানির ওভার ফ্লো’র কারণে মৎস্যজীবীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়াতে প্রায় ৫৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।এদিকে ফেনী সদর উপজেলার ও দাগনভূঞা উপজেলায় নতুন নতুন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের দক্ষিন আবুপুর, উত্তর আবুপুর, উত্তর খানেবাড়ী, দক্ষিন খানেবাড়ী ও পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের জগৈরগাঁও ও এলাহিগঞ্জ গ্রামের সব সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।˜াগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের মোহরবাগ, কশুল্যা, রঘুনাথপুর, গোতমখালী, সেকান্দরপুর, নারায়নপুর, শরিফপুর ও কৈখালী, রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর, রাজাপুর ঘোনা, জয় নারায়নপুর, বক্তারপুর, গনিপুর, শিবপুর, জায়লস্কর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, ওমরপুর, সোনাপুর, খুশিপুর, জায়লস্কর, বারাহিগনি ও পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ওমরাবাদ, কেরনিয়া, বৈঠারপাড়, গজারিয়া গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে আমনের বীজতলা, আউশ ধান, ও সবজীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সুত্র জানায়, ফেনীতে ৬৫৭ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৬০৫ হেক্টর আউশ ধানের ফসল ও ৫০ হেক্টর জমির সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এছাড়া ফেনী পৌর এলাকার শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, জয়নুল হক সড়ক (হায়দার ক্লিনিক), শান্তি কোম্পানী সড়ক, নাজির রোড, একাডেমি হাসপাতাল সড়ক সহ বিভিন্ন সড়ক বৃষ্টির পানিতে এক থেকে দেড় ফুট তলিয়ে গেছে। দূর্ঘটনা এড়াতে ফেনী শহরে সড়কবাতি বন্ধটানা বর্ষণে ফেনী শহরে জলজট সৃষ্টির কারণে পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে লাগানো সড়ক বাতি বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার সৃষ্ট জলজটের কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে এসব সড়ক বাতি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৭ জুলাই থেকে টানা বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি ও নিন্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সড়কে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় কোথাও কোথাও সড়ক বাতির খুঁটি ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ জানায়, সড়ক বাতির খুঁটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য লাইন সংযোগ দেয়া আছে। কোন কোন খুঁটিতে বৈদুত্যিক ডিভাইস ‘কাট আউট’ স্থাপন করা হয়েছে। এটি পানির নিচে থাকায় বৈদ্যুতিক শট সার্কিট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দূর্ঘটনা এড়াতে এসব সড়ক বাতি বন্ধ রাখা হয়েছে।ফেনী পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী নেছার আহাম্মদ জানান, পানি সরে গেলে পুনরায় পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে সড়ক বাতিগুলো চালু করা হবে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লা জোনের প্রধান প্রকৌশলী মোসাদ্দেক হোসেন জানান, বিরাজমান সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। পানি নামার পরে স্থায়ী সমাধানকল্পে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নুর হাকিম আনোয়ার,টেকনাফসীমান্ত জনপদ টেকনাফে চার দিনের টানা ভারীবর্ষণে জন-জীবন ব্যাহত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি, বঙ্গোপসাগর ও নাফনদীর জোয়ারের পানিতে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বসতবাড়ি, সড়ক, মৎস্যঘের ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রাম: শুক্রবার রাত থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় অবিরাম বর্ষণে বিপর্যস্ত মানুষ। সোমবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হওয়ার কারণে যান চলাচল সংকুচিত হয়ে পড়ে।এতে চরম দুর্ভোগ পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। পাশাপাশি নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া নগরবাসীকেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গাড়ি না পেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে পায়ে হেটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। শুক্রবার থেকে তুমুল বর্ষণের পর শনিবার সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত হয়। রোববার সকাল টানা বর্ষণে নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। শনিবার রাতভর বৃষ্টির কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাসা, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সড়ক পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সকাল থেকে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। একটানা বৃষ্টির কারণে নগরীর নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।নগরীর অক্সিজেন, হামজারবাগ, মুরাদপুর, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, নাসিরাবাদ, বায়োজিদ, ষোলশহর, চকবাজার, পাঁচলাইশ, ডিসি রোড, খাজা রোড, চান্দগাঁও, মোহরা, বাকলিয়া, চাক্তাই, কোরবানিগঞ্জ, মাস্টারপুল, বৌ বাজার, মিয়াখান নগর, রাজাখালী, দেওয়ানবাজার, আগ্রাবাদ, ছোটপুল, বড়পুল, সিডিএ, হালিশহর, পাহাড়তলী, সরাইপাড়া, সাগরিকা, কাঁচারাস্তার মাথা ও পতেঙ্গার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকা, মুরাদপুর, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, মেহেদীবাগ এলাকায় সড়কে হাটু থেকে কোমর পানি। ফলে এসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্বল্প দুরত্বে গাড়ি চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

হাটাহাজরী :বিগত কয়েক দিনের হালকা, মাঝারী ও প্রবল বর্ষণে হাটাহাজরী উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ জনপদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে অনেক গ্রামীণ জনপদ অযোগ্য হয়ে পড়েছে চলাচলের। বেশি কিছু জনপদ সাথে জন যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। ফলে উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও ১টি সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিন পাহাড়তলী ওয়ার্ডে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়া লক্ষাধিক জনসাধারণে জনজীবনে উঠছে নাভিশ্বাস। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলের পানি উপজেলার মন্দাকীনি খাল, সোনাই খাল, মনাই খাল, ধলই খাল, বিপুলা খাল, কুমারী খাল, বদর খালী, চারিয়া খাল, হালদা প্যারালাল, মুন্দারী ছরা, পৌরসভার মরা ছরা, আলাওল খাল, চেংখালী, দুবলী ছরা, বোয়ালিয়া খাল, মরা বোয়ালিয়া, পোড়া কোপালী, খন্দকীয়া ছরাসহ বিভিন্ন খাল ও ছরা খালের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে উপজেলার নি¤œাঞ্চল বিশেষ করে নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দ্দন, ছিপাতলী, মেখল, গড়দুয়ারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া হাটহাজারী পৌরসদর ও সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিন পাহাড়তলী ওয়াডে নিচু এলাকা সমুহের সাথে ধলই, ফরহাদাবাদ, মির্জাপুর, ফতেপুর, উত্তর মাদার্শা, দক্ষিণ মাদার্শা, শিকারপুর, বুড়িশ্চর ও চিকনদন্ডি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাাবিত হয়েছে।

পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানি উপজেলার আওতাধীন ওইসব খাল সমুহের বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে জনপদে প্রবেশ করে গ্রামীণ জনপদ পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে উপজেলার প্রায় অর্ধ শতাধিক জনপদ কম- বেশি ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়েছে। এসব জনপদ গুলো হল আজিজিয়া মজিদিয়া সড়ক, মুফতি ফয়জুল্লাহ সড়ক, জাফরাবাদ নুর আহমদ সড়ক, গুমানমর্দ্দন নাঙ্গমোড়া ডিসি সড়ক, ধলই-বাড়বকুন্ড সড়ক, ফতেয়াবাদ-রামদাশ হাট সড়ক, মদুনাঘাট সংযোগ সড়ক, আমান বাজার হাজী নেয়ামত আলী সড়ক, চারিয়া মুরাদ সড়ক, গুমানমর্দ্দন সড়ক, ফতেপুর মেহের নেগার ডিসি সড়ক, দাতারাম চৌধুরী সড়ক, ধলই-শাহাজাহান শাহ সংযোগ সড়ক, বড়দীঘির পাড়-কাটাখালী সংযোগ সড়ক ও মাদার্শা-সাইনবোর্ড সংযোগ সড়ক। ইতিমধ্যে এসব সড়কে যানচলা চল বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে উপজেলার লক্ষাধিক জনসাধারণকে। এতে করে দূর্ভোগে পড়া জনজীবনে উঠছে নাভিশ্বাস।বিগত কয়েক দিনের মত এবারে হালকা, মাঝারী ও প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এবং অচিরে ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক গুলোর সংস্কারের ব্যবস্থা করা না গেলে নি¤œ এলাকার সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাইতো এলাকাবাসী জন দূর্ভোগ লাঘবের জন্য খালের বিধ্বস্ত বেড়ি বাঁধ জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।

বান্দরবান: বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে আছে। আর এ ডুবে যাওয়া সড়কে ঝুঁকি নিয়ে ভ্যানগাড়ি ও নৌকায় পার হয়ে কেরানীহাটে পৌঁছাচ্ছেন পর্যটকরা। সোমবার সকাল থেকে এভাবেই গন্তব্যের পথে রওনা দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন টওান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।বৃহস্পতিবার থেকে টানা চার দিনের অবিরাম বর্ষণ ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সোমবার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি।তাই বিকল্প উপায়ে জলাবদ্ধ সড়ক পার হয়ে নিজ নিজ গন্ত ব্যে ফিরছেন পর্যটকরা।দুপুরে জেলা শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল মোটেলগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা, নরসিংদী, রাজশাহী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৩ শতাধিক পর্যটক বিভিন্ন আবাসিক হোটেল- মোটেলে অবস্থান করছিলেন। তবে, এখন অধিকাংশ পর্যটক বান্দরবান ছেড়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।শহরের হিলকুইন আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক পান্না চৌধুরী জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন টওান্ত থেকে আসা পর্যটকরা শনিবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তারা বান্দরবান ছেড়ে যেতে পারেনি। অনেকে বাসের টিকিট অগ্রিম বুকিং দিয়েও তা আবার বাতিল করে ফিরে আসেন।

বান্দরবান শহরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় আমরা বাড়ি ফিরে যেতে পারিনি। সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকায় আমরা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছি। এখন ঠিকঠাক মতো ফিরতে পারাটাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।বান্দরবান জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ সদস্য ও লামা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের উদ্যোগে বন্যা কবলিত দুই হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরনএদিকে, বান্দরবানের লামা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের উদ্যোগে বন্যা কবলিতদের মধ্যে শুকনো খাবার, মোমবাতি ও দিয়াশলাই বিতরন করা হয়েছে। লামা পৌর এলাকায় বন্যা কবলিত এক হাজার ব্যবসায়ী ও পরিবারের মধ্যে এ শুকনো খাবার প্রদান করা হয়। সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম এ শুকনো খাবার বিতরন উদ্ভোধন করেন। এ সময় সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জাহিদ আখতার, লামা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতি মিন্টু কুমার সেন, রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাচিংপ্রু মার্মা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সাইফুদ্দিন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মো. জাহিদ হাসান, কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বিধান দাশ, সাধারন সম্পাদক সুকুমার দেওয়ানজি, কোষাধ্যক্ষ মাইকেল আইচ, ডিরেক্টর বিপুল কান্তি দাশ ও চন্দন দাশ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রোববার প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে নৌকা যোগে বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মো. জহিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্যা কবলিত প্রায় এক হাজার পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার, মোমবাতি ও দিয়াশলাই প্রদান করা হয়। এ খাবার বিতরনে উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু চৌধুরী, পৌর মেয়র মো. আমির হোসেন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জাহিদ আখতার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিদারুল ইসলাম, মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জোসনা বেগম, উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাশ ও সমাজ সেবক মোহাম্মদ হোসেন বাদশা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রোববার বিকাল নাগাদ পৌর এলাকাসহ ৭টি ইউনিয়নের ৫ সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। পাহাড় ধসে বিধস্ত হয় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি। পাহাড়ি ঢলের পানির ¯্রােতের টানে ও পাহাড় ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ।

ভোলা প্রতিনিধি : গত কয়েকদিনে দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানি নদনদীর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভোলার ছয় উপজেলার ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়ারাও জোয়ারের পানি ও ভারি বর্ষণের ফলে ভোলা সদরের ইলিশা টু লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরি ঘাট পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যে সড়কটি সহ অন্তত্য ৩শ’ মিটার এলাকায় মেঘনার ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে। সড়ক বিচ্ছিন হওয়ার ফলে এই রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ভোলার সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে উভয় পাড়ে যানবাহনের তীব্র লাইন জটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীরা।জানা গেছে,গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ছয় উপজেলার ২০ টি গ্রাম ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানির কারণে ভোলার সদর উপজেলার রামদাসপুর, নাছির মাঝি, মাঝের চর,দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া, নেয়ামতপুর, চৌমাথা, বোরানউদ্দিন উপজেলার বাটা পাড়া, কাজির হাট, চর জহির উদ্দিন, লালমোহন উপজেলার কচুয়াখালীর চর, লঞ্চঘাট এলাকা , চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর পাতালিয়া, মনপুরা উপজেলার কলাতলির চর, ঢালচর, সোনার চর, চর নিজামসহ ২০ টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চড়ম দুর্ভোগে পড়েছে।

ভোলার সদরের রামদাসপুর এলাকার পানিবন্দি কুলসুম বেমগ, সেতারা, জান্নাত বেগম জানান,কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির পানি আর জোয়ারের পানির কারণে আমাগো ঘর বাড়ি, ফসলি জমি তলাইয়া গেলে। এইবার আমাগো না খাইয়া থাকতে হইবো।ভোলা সদরের ধনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমদাুল রহমান কবির জানান, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর ও ঘেরের মাছ তলিয়ে যাওয়ায় চড়ম দুর্ভোগে পড়েছে অনেকে। দৌলতখান উপজেলার নেয়ামতপুর এলাকার পানিবন্দি ইসমাইল, খোকন মিয়া, আব্বাস মিয়া জানান, জোয়ারের পানির কারণে আমাগো ঘরবাড়ি, জমি ফসল, পুকুরের ও ঘেড়ের মাছ ভাইসা গেছে। আমাগো অনেক টাকা লোকসান গুনতে হইবো। অনেক দাড়-দেনা করছি এইবার না খাইয়া থাকতে হইবো।অপরদিকে জোয়ারের চাপে উত্তাল মেঘনা গ্রাস করছে জনপদ, ভাঙছে রাস্তা, ফসলি জমি, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রবল জোয়ারে চাপে ইলিশা টু লক্ষ্মীপুর ঘাট এলাকায় সড়কের এক তৃতীয়াংশ ভেঙে গেছে। এতে এই রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।ফেরির ইনচার্জ আবু আলম জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে রোববার দিনভর ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোমবার ভোরের দিকে প্রবল জোয়ারের চাপে ইলিশা ঘাট এলাকায় সড়কে ভাঙনের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা। যার ফলে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাটার কারণে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেনি, তবে জোয়ার এলেই পুরো এলাকা তলিয়ে যাবে।ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হেকীম জানান, টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ওই সব এলাকায় ২ থেকে ৩ ফুট তলিয়ে গেছে। সোমবার মেঘনার পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। তবে ভাটা পরলে কোথাও পানি নেমে যায়। জোয়ারের চাপে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের সড়ক ভেঙে গেছে। আমরা ওই পয়েন্টে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি।উল্লেখ্য, ঈদের দিন থেকেই ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা পয়েন্টে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। ওই ভাঙন এখন অব্যাহত রয়েছে। গত ১০ দিনের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে।

চাঁদপুর: টানা বৃষ্টি ও বর্ষার কারণে দেশের অন্যতম ‘চাঁদপুর সেচ প্রকল্প’ (সিআইপি) বাঁধের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পের ভিতর ৫৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমির আমনের বীজতলা বিনষ্ট হয়ে গেছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত সেচ প্রকল্পে রোপণ করা আমন ক্ষেত ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে ছিল।ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রকল্পের বাইরে মেঘনা নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রকল্প এলাকার ফরিদগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলায় মারাত্মক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।এদিকে, চলতি মৌসুমে আমনের চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাজারো কৃষক। পানি কমে গেলেও পুনরায় আমন চাষ করতে চারার সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এছাড়া সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে আবাদকৃত শত শত মাছের ঘের পানির চাপে ভেসে যাওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।অন্যদিকে, নিম্নাঞ্চলের কৃত্রিম জলাবদ্ধতা বন্যায় রূপ নিয়েছে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, কৃষকরা নষ্ট হয়ে যাওয়া বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সড়কের পাশসহ বিভিন্ন স্থানে নতুনভাবে বীজতলা তৈরি করেছে।সিআইপি কৃষি সম্প্রসারণ সুপারভাইজার জহিরুল ইসলাম জানান, জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেওয়ায় বহু কৃষকের আমনের বীজতলা ও ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমে গেলে পুনরায় আমন চাষ করতে গিয়ে চারার সঙ্কটে পড়তে পারেন কৃষকরা।সিআইপির উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) বদর উদ্দিন মোল্লা জানান, মেঘনায় পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ভিতর হতে হাজিমারা ও চরবাগাদী স্লুইচ গেইট দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। চরবাগাদী পাম্প হাউজের মোট ১২শ’ কিউসেকের ৬টি পাম্প মেশিন দিয়ে বিরতিহীনভাবে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। তবে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে জলাবদ্ধতার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শাখা কর্মকর্তা (এসও) মো. আলাউদ্দিন জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।