Bangladesh-Mapদৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ জুলাই  ২০১৫ : গত বছরের ৫ জানুয়ারির একতরফা সংসদ নির্বাচনের পর ঐ বছরের ১২ জানুয়ারি গঠিত এবং সর্বশেষ ১৪ জুলাই মঙ্গলবার পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায় মারাত্নক আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।এমনকি মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় যে রদবদল হয়েছে তাতেও আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতা দূরীভূত হয়নি। এ অবস্থায় কয়েকটি জেলায় ও অঞ্চলে বেশি মন্ত্রী থাকলেও কয়েকটিতে একেবারেই কোন মন্ত্রী নেই।

সবজেলা থেকে মন্ত্রী থাকার বাধ্যবাধকতাও নেই।মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা সম্পর্কিত আইনে কিম্বা সংবিধানে মন্ত্রীদের সংখ্যা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। তবে আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রেখেই মন্ত্রিসভা গঠন সংসদীয় ব্যবস্থার নিয়ম। মন্ত্রিসভা গঠনে আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা সব সরকারই করে থোকে। সংসদ সদস্যদের সমর্থনে সরকার গঠিত হয় বলে সরকারে তথা মন্ত্রিসভায় সব অঞ্চল ও জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব রাখা সংসদীয় রেওয়াজ। মন্ত্রীরা সাংবিধানিকভাবে দেশের, তথা সারাদেশের।তবে দুর্নীতির বিস্তার, মূল্যবোধের অবক্ষয় ও ব্যক্তিস্বার্থের কারনে মন্ত্রীরা আজকাল আর দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন না। এদের অনেকেই বড় জোর জেলা, তবে বেশিরভাই নির্বাচনী এলাকার বাইরে দৃষ্টি দিতেও নারাজ। কেউ কেউ আবার পরিবারের মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে আছেন। ফলে যে এলাকায়, বা জেলায় মন্ত্রী থাকেনা তারা মন্ত্রীদের এলাকার তুলনায় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থাকেন।

প্রধানমন্ত্রীসহ এ মুহুর্তে মন্ত্রীর সংখ্যা ৫৩। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া তার সরকারের ৩২ জন মন্ত্রী, ১৮জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপ-মন্ত্রী রয়েছেন।রয়েছেন মন্ত্রীদের থেকে উচ্চতর অবস্থানের স্পীকার ও মন্ত্রীর মর্যাদাভোগী ডেপুটি স্পীকার। এছাড়া সংসদে সরকারি দলের চীফ হুইপ মন্ত্রী এবং ৬ জন হুইপ প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। এর বাইরে মন্ত্রীর মর্যাদাভোগী ৪ ও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাভোগী ১জনসহ প্রধানমন্ত্রীর ৫জন উপদেষ্টা রয়েছেন।

দেশে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীর মর্যাদাভোগীর সংখ্যা ৬৭ হলেও ৬৪ জেলার বাংলাদেশে ২৪টিতে কোন মন্ত্রী বা মন্ত্রীত্বের সুবিধাভোগীরা নেই।মঙ্গলবারের পুনর্গঠনের পরেও যে সব জেলায় মন্ত্রী বা মন্ত্রীর মর্যাদাভোগীরা নেই সেগুলো হচ্ছে: পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, জয়পুরহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ, মেহেরপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বরগুনা, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, নারায়নগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ফেনী, লক্ষীপুর, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি।

এর মধ্যে বগুড়ার বঞ্চনা সব থেকে প্রকট। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া।জয়পুরহাটের ২টিসহ বৃহত্তর বগুড়ায় ৯টি সংসদীয় আসনের ৪টিতে আওয়ামী লীগ, ১টি সরকারের শরিক জাসদ এবং অন্য ৪টিতে একই সাথে সরকারের শরিক ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৪জন সদস্য রয়েছেন। কিন্তু এ দু’টি জেলায় কোন মন্ত্রী বা হুইপ নেই। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদেও ছিলনা। যদিও সে সময় বগুড়ায় আওয়ামী লীগের ২জন এমপি ছিল। কুড়িগ্রাম জেলায় এবার আওয়ামী লীগের কোন এমপি নেই। তবে এ জেলায় সরকারের শরিক জেপি’র ১জন এবং অন্য ৩জন জাতীয় পার্টির (সরকারের শরিক ও বিরোধী দল) সংসদ সদস্য রয়েছেন, যাদের দুজন আবার সাবেক মন্ত্রী।

যেসব জেলায় যারা মন্ত্রী :

চট্টগ্রাম থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রবাসীকল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, বিএসসি ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বান্দরবান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং। নোয়াখালী থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। কুমিল্লা থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী আনহ মোস্তফা কামাল ও রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক।চাঁদপুর থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সিলেট থেকে অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সুনামগঞ্জ থেকে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম, এ, মান্নান। মৌলভীবাজার থেকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। রাজশাহী থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহ্‌রিয়ার আলম। নাটোর থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। নওগাঁ থেকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। সিরাজগঞ্জ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। পাবনা থেকে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। রংপুর থেকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা। লালমনিরহাট থেকে খাদ্যপ্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। নীলফামারী থেকে সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। দিনাজপুর থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ঝালকাঠি থেকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। পিরোজপুর থেকে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন। ভোলা থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং পরিবেশ ও বন উপ-মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। কুষ্টিয়া থেকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। যশোর থেকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বেগম ইসমাত আরা সাদেক। খুলনা থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী শ্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। মাগুড়া থেকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার। গোপালগঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফরিদপুর থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।মাদারীপুর থেকে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। ঢাকা থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, খাদ্যমন্ত্রী মোঃ কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও ডাক ও টেলিযোগাযোগপ্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। মানিকগঞ্জ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গাজীপুর থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ চুমকি। নরসিংদী থেকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। জামালপুর থেকে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। শেরপুর থেকে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। ময়মনসিংহ থেকে ধর্ম বিষয়কমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও সমাজকল্যান প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। নেত্রকোনা থেকে যুব ও ক্রীড়া উপ-মন্ত্রী আরিফ খান জয়। কিশোরগঞ্জ থেকে দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক (চুন্নু)।

মন্ত্রীর মর্যাদাভোগী জাতীয় সংসদে সরকারি দলের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য। প্রতিমন্ত্রীর মযর্যাদাভোগী সরকারি দলের ছয় হুইপ হলেন: শেরপুর-১ এর আতিউর রহমান আতিক, নওগাঁ-২ এর শহীদুজ্জামান সরকার, দিনাজপুর-৩ এর ইকবালুর রহিম, মৌলভীবাজার-১ এর মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা-১ এর সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার এবং গাইবান্ধা-২ এর মাহবুব আরা বেগম গিনি।

এছাড়া স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী নোয়াখালীর সন্তান হলেও রংপুরে শেখ হাসিনার ছেড়ে দেয়া আসনের উপ-নির্বাচনে এমপি হয়েছেন। মন্ত্রীর মর্যাদাভোগী ডেপুটি স্পীকার গাইবান্ধার এমপি এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ইমাম, সিরাজগঞ্জ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, খুলনা, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম, সিলেট ও মেজর জেনারেল (অবঃ) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর কোন জেলাবাসী হিসেবে পরিচিত নন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে মন্ত্রীর মর্যাদাভোগী জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ রংপুরের এমপি।