1438391698

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১ আগস্ট ২০১৫: ঘূর্ণিঝড় কোমেন এর প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এদিকে,বান্দরবানের লামা উপজেলায় পাহাড় ধসে এক পরিবারের দুই শিশুসহ ঘুমন্ত অবস্থায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শিশুসহ আহত হয়েছে ৩জন। শুক্রবার গভীর রাতে প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড় ধসে উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বরিশাল পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।অন্যদিকে, প্রবল বর্ষণের কারনে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ৩-৪ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো।পানি বন্দি হয়ে আছে বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার মানুষ।স্থলভাগে অবস্থান করা এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আরও দু’দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।সাত বিভাগের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি এবং খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান শনিবার বিকেলে বলেন, স্থলভাগে থাকা ঘূর্ণিঝড় কোমেন’র প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আরও দু-একদিন বৃষ্টি ঝড়ে দুর্বল হয়ে পড়বে কোমেন।শনিবার আবহাওয়ার সতর্কবাবর্তায় বলা হয়, দেশের মধ্যাঞ্চল ফরিদপুরের নিকট অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে খুলনা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম দিকে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।এজন্য উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।এদিকে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ২০৮ মিলি মিটার।এছাড়া চট্টগ্রামে ১৪৫ মিলি, কুতুবদিয়ায় ১১২ মিলি, টেকনাফে ৯০ মিলি, রাঙ্গামাটিতে ৭১ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

লামা প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামা উপজেলায় পাহাড় ধসে এক পরিবারের দুই শিশুসহ ঘুমন্ত অবস্থায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শিশুসহ আহত হয়েছে ৩জন। শুক্রবার গভীর রাতে প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড় ধসে উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বরিশাল পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, বরিশাল পাড়ার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী রোজিনা বেগম (৩০), ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (৫) ও মেয়ে ফাতেমা বেগম (৭), মৃত লেদু মাষ্টারের ছেলে বশির আহমদ (৬০) ও তার ছেলে সাগর আহমদ (১৪) এবং মোহাম্মদ রানার স্ত্রী আমেনা বেগম (৩০)। আহত শিশুরা হলো- আরাফাত হোসেন, দুলু মিয়া ও জয়তুন বেগম। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। স্থানীয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং স্থানীয়রা ১২ ঘন্টা ব্যাপী আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে মৃতদের লাশ উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, সদস্য কাজী মুজিবুর রহমান, মো. জহিরুল ইসলাম, লক্ষীপদ দাস ও ফাতেমা পারুল, উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী, পৌরসভা মেয়র মো. আমির হোসেন, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন, ইউপি সদস্য আবুল কালাম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বর্তমানেও বরিশাল পাড়াসহ পাহাড় ধস ঝুঁকিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শতশত পরিবার মারাতœক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভার ও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বার বার মাইকিং করে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হলেও এখনো কেউ সরে যায়নি। এছাড়া প্রবল বর্ষণের কারনে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকার দুই সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ৩-৪ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো। কর্মক্ষম মানুষগুলো যাতায়াতের প্রয়োজনে নৌকা ও কলা গাছের বেলাকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করছেন। পাহাড়ি ঝিরির পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এসব মানুষের মধ্যে দেখা দিয়ে নিরাপদ পানি ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদুল ফিতরের আগের দিন থেকে সারা দেশের ন্যায় বান্দরবানের লামা উপজেলায়ও মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। টানা ৮ দিনের বর্ষনে উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল সমূহ পরপর ৩ বার প্লাবিত হয়। পাশাপাশি পাহাড় ধসে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধস্ত, অভ্যন্তরীন অধিকাংশ সড়ক ভেঙ্গে তছনছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যায়। এতে গত ৪ দিন ধরে উপজেলায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার দিন গত রাত ২টার দিকে প্রবল বর্ষণ শুরু হলে লামা সদর ইউনিয়নের বরিশাল পাড়ার বাসিন্দা বশির আহমদ, সাদ্দাম হোসেন ও মোহাম্মদ রানার বসতঘরে ওপর আচমকা পাহাড় ধসে পড়লে ঘুমন্ত শিশুসহ ৯জন মাটি চাপা পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয় সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। শনিবার বিকাল নাগাদ মৃত ৬ জনের লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়। নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পুরো এলাকা।

লামা পৌরসভা মেয়র মো.আমির হোসেন জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, লামা বাজার, চেয়ারম্যান পাড়া, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, লামা খাদ্য গুদাম, উপজেলা কৃষি বিভাগ ও লামা থানা এলাকাসহ পৌরসভার ৭, ৮, ও ৯ নং ওয়ার্ডের নতুন নতুন এলাকা ৩-৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে দু’সহস্রাধিক পরিবার বন্যার পানি ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী, লামা সদর ইউনিয়ন, গজালিয়া, রুপসীপাড়া ও ফাইতং ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল সমূহ প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বন্যা কবলিতরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। লামা বাজার বন্যার পানিতে ডুবে গেলে শত শত ব্যবসায়ী তাদের মালামাল নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েন। বন্যা কবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লামা পৌরসভায় সহস্রাধিক, ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ে এখনো পাঁচ শতাধিক, রুপসীপাড়ায় দেড় শতাধিক ও আজিজনগর ইউনিয়নেও দুই শতাধিক পরিবার পাহাড় ধস ঝুঁকিতে বসবাস করছে। দারিদ্রতার রোষানলে পড়ে এখানকার মানুষগুলো সমতলে জমি কিনতে পারছেনা। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নেয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঝুঁকিপুর্ণ পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে গিয়ে আশ্রয় গ্রহনের জন্য দফায় দফায় তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সামশুল ইসলাম, রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাচিংপ্রু মার্মা ও আজিজনগর ইউপি চেয়ারম্যান নাজেমুল ইসলাম চৌধুরী। ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সামশুল আলম আরো জানান, লোকজন নিরাপদে আশ্রয় নিলেও পানি বন্দি হয়ে পাড়ায় ওইসব এলাকায় দেখা দিয়েছে নিরাপদ খাবার পানি ও খাদ্যাভাব।

পাহাড় ধসের কারণ হিসেবে বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের জানায়, অবাধে পাহাড় থেকে বৃক্ষ নিধন, পাথর উত্তোলন, পাহাড়ে উপযুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ না করে জুম চাাষ, পাহাড় কেটে ইটভাটা স্থাপনসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি করায় পাহাড়গুলো ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এখানকার পাহাড়গুলো পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত। যা সহজেই ভঙ্গুর প্রকৃতির। তাই ভারী বর্ষণ হলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।লামায় পাহাড় ধস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল হোসেন জানান, রাতে লামা সদর ইউনিয়নের বরিশাল পাড়ার তিনটি বাড়ির ওপর ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরিয়ে ৬ জনকে মৃত ও ৩জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, পাহাড় ধসে নিহতের পাশাপাশি উপজেলার আজিজনগর, ফাইতং, রুপসী পাড়া, ফাঁসিয়াখালী ও লামা পৌরসভা এলাকায় পাহাড় ধসে বহু কাচা ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্যপক ফলদ ও বনজ বাগানের। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিন্ত্রী বীর বাহাদুর ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে পাহাড় ধসে নিহত তিন পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।উল্লেখ্য, পাহাড় ধসে ২০০৯ সালে লামা উপজেলার আজিজনগর ও গজালিয়ায় এক পরিবারের ৬জনসহ ১১ জন, ১৯৯৬ সালে লামা পৌর এলাকার রাজবাড়িতে একই পরিবারের ৭জন এবং ২০১২ সালের ২৭ জুন রাতে ফাইতং ইউনিয়নে ২৫ জন, রুপসীপাড়া ইউনিয়নে ২জন ও সদর ইউনিয়নে ২ জন মারা যায়।

মুন্সিগঞ্জঃশিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট নদী বন্দরে ২নম্বর সতর্ক সংকেত এবং পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে লঞ্চ, সিবোট ও ইঞ্জিলচালিত নৌকা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ রয়েছে ফ্ল্যাট, মাঝারি ও ছোট ফেরিও। তবে রো-রো ও কে-কে টাইপ ফেরি চলাচল করছে। বড় কিছু লঞ্চ শনিবার সকালের প্রথম ভাগে ঘাট থেকে ছেড়ে গেলেও সকাল সাড়ে ৮টায় সকল লঞ্চ, সিবোট ও ইঞ্জিলচালিত নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে ফেরিতে যাত্রীদের বেশ চাপ রয়েছে।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া ঘাট পরির্দশক ( ট্রাফিক) তোফাজ্জল হোসেন জানান, নদী বন্দরে ২ নম্বর সর্তক সংকেত ও পদ্মা নদীতে বড় বড় ঢেউ থাকায় সাড়ে ৮টায় শিমুলিয়া লঞ্চ, সিবোট, ইঞ্জিলচালিত নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবহাওয়া ভাল ও সতর্ক সংকেত উঠে গেলে আবার নৌযান চলাচল করতে সিধ্যান্ত নেয়া হবে। তবে খোব জরুরী যাত্রীদের কে ফেরিতে পারাপারে জন্য ঘাট থেকে আমরা বলে দিচ্ছি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার বিআইডব্লিউটিসির মাওয়াস্থ সহকারী মহা ব্যবস্থাপক আশিকুজ্জামান ও শিমুলিয়া ম্যানেজার বাণিজ্য শেখর চন্দ্র রায় জানান, শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রী ও যানবাহন ফেরি দিয়ে পারাপার করছি। রো-রো ও কে-কে টাইপ ফেরি চলাচল করছে। নদীতে অনেক রুলিং (বড় ঢেউ) আছে। তাই ফ্ল্যাট, মাঝারি ও ছোট ফেরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। দু’পারে পারে আটকা পড়েছে দীর্ঘ ছোট-বড় ২শতাধিক গাড়ীর লাইন এদিকে পদ্মা নদীতে বড় বড় ঢেউ থাকায় শিমুলিয়া রোরো ঘাটে থাকা পল্টুনের চাপে দুটি দোকান নদীগর্ভে বিলিন একটি খাবার হোটেল-ও চা’পানের ।
দোকান মালিক মোঃ মুক্তার ও আবু ছালাম জানান, গভীর রাতে কিছু ট্রাক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছিল । বেচা কেনার চাপ ছিল, তাই দোকান বন্ধ করতে সকাল হয়ে যায়। বাড়ি চলে যাওয়ার পর খবর পাই (বড় ঢেউ) এর কারনে রোরো ঘাটে থাকা পল্টুনের চাপে ২টি দোকান ভেঙ্গে যাচ্ছে। ছুটে এসে কিছু মালামাল বেড় করি কিছু মালামাল নদীতে বিলিন হয়ে যায়।

ভোলা: স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে সাত স্কুল শিক্ষার্থী। টানা বর্ষণের পাশাপাশি ঘুর্ণিঝড় কোমেন ও পূর্ণিমার জোঁর প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশনের নদনদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪/৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে। শনিবার সকালে স্কুল ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার চরপাতিলা শরীফ পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থী জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। পরে কুকরী-মুকরী ইউপি চেয়ারম্যান হাসেম মহাজনের সহায়তায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চরকচ্ছপিয়া গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন। ভর্তি হওয়া শিক্ষাথীরা হলো, প্রথম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফারজানা, শান্তা, সালমা, ইমা, দ্বিতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া, জাবেদ, লিমা। এঘটনার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অবহেলা অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। এ প্রসংঙ্গে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জোয়ার আসার আগেই স্কুল ছুটি দেয়া হয়। শিক্ষার্থী খেলা ধুলা করতে গিয়ে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। চরকচ্ছপিয়া গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন আখন ছুটে যান ।

ভোলা: ভোলায় মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পূর্ণিমার সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে জেলা সদর, দৌলতখান, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলার অন্তত ৬০টি গ্রাম।এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব গ্রামের লাখো মানুষ। জোয়ারের পানিতে ভেসে আহত হয়েছে ৭ স্কুল শিক্ষার্থী। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এরা হলো, সালমা, ইমা, রিনা, সুমাইয়া, জাভেদ, শান্তা ও ফারজানা।শনিবার দুপুর ২টার পর থেকে অস্বাভাবিক জোয়ারে এসব এলাকা প্লাবিত হয়। এতে বসতঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ৩/৪ ফুট পানির নিচে রয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, জোয়ারের পানিতে সদরের রাজাপুর, কাচিয়া, দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর, মদনপুর, সৈয়দপুর, নেয়ামতপুর, মেদুয়া, মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া, উত্তর সাকুচিয়া, মনপুরা, হাজিরহাট, চরফ্যাশন উপজেলার কুকরী-মুকরী, ঢালচর, জাহানপুর, মাদ্রাজ, কলমি, নজরুল নগর, মুজিব নগর, নুরাবাদ, চর মানিকা, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েক গ্রামসহ মোট ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ওইসব গ্রামের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।এদিকে, দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাস বইছে। এতে উপকূলকবর্তী মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছেন।কুকরী-মুকরী ইউপি চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন জানান, পুরো ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চর পাতিলা এলাকায় জোয়ারে পানিতে ডুবে ৭ স্কুল ছাত্রী আহত হয়। তাদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।চরফ্যাশন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, চরফ্যাশনে ১০টি ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম: এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে টানা বর্ষণের পর শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এতে চট্টগ্রামের ১৩ উপজেলার কোথাও কোথাও পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে অবনতি হয়েছে। বেড়েছে পাহাড়ি ঢল। নদনদী, খালে এখনও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি জনপদে ফসলি জমি এবং বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। রাস্তাঘাটসহ গ্রামীণ অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি আবারও শুরু হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে বলে আশংকা করছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে পানিবন্দি লক্ষ লক্ষ মানুষের অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন। বানভাসি মানুষের রাত কাটছে সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে। সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ দেয়া হলেও সেগুলো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। জরুরি ভিত্তিতে আরও ত্রাণ দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।আবহাওয়া দপ্তরের পতেঙ্গা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৫০ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত আটদিনে চট্টগ্রামে ১০১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৭টা ৪২ মিনিটে জোয়ার শুরু হয়েছে। ভাটা শুরু হবে দুপুর ১টা ১২ মিনিটে। রাত ৮টা ১৮ মিনিটে জোয়ার পুনরায় শুরু হবে।স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বৃষ্টি কমলেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, হাটহাজারীতে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বোয়ালখালী ও রাউজানে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে সেখানেও ফসল, বীজতলা পানির নিচে আছে। পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইষ ও চরতি ইউনিয়নে পানি আরও বেড়েছে। বাজালিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম এবং সড়কে পানি বেড়েছে। বান্দরবানের সূয়ালকে একটি ব্রিজ দেবে যাওয়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।

ফেনী : টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ফেনীর দাগনভূঞায় নতুন করে ৩৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বানভাসী মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দূর্গত এলাকায় ত্রান বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। পানীয় জল, ওষুধের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট জানা যায়, রামনগর ইউনিয়নের সেকান্তরপুর, রামনগর। ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বাদাম তলির আশ্রয়ন প্রকল্প’র ৬০ পরিবার, দেবরামপুর, ইয়াকুবপুর, চন্ডিপুর, চানপুর, এনায়েত নগর, করিম উল্যাহ পুর। সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধর্মপুর, রশিদপুর, হায়াতপুর, ফতেহপুর, ফতেহ উল্যাহপুর, বাসুদেব পুর, শ্রীধরপুর, দক্ষিণ আলীপুর, বাগঢুবি, দক্ষিণ করিমপুর, তালতলি। পৌরসভার উত্তর শ্রীধরপুর, রামানন্দপুর, উত্তর করিমপুর, আলাইয়াপুর। পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চানপুর, কেরোনিয়া, সেয়াসন, গজারিয়া। মাতুভূঞা ইউনিয়নের মমারিজপুর, উত্তর আলীপুর, লালপুর। জায়লস্কর ইউনিয়নের ওমরপুর, খুশিপুর, সোনাপুর, বারাহিগুনি, জায়লস্কর গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়।দাগনভূঞা উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির জানান, অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে গত কয়েক দিন থেকে উপজেলার ৮৫ শতাংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে রয়েছে। এসব এলাকার আমনের বীজতলা, আউশ ধান ও সবজী ক্ষেত পানিতে তলীয়ে গেছে, বহু মৎস খামারের মাছ ভেসে গেছে। হাজার হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছে। এ অবস্থায় গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও পানিবন্দী মানুষকে তুলে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ছোটবড় সব খাল ও নদীতে বাঁশ, জাল, কচুরীফেনা বা বাঁধসহ সব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে দিতে বলা হয়েছে।ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, দাগনভূঞায় বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ হিসাবে ৩০ মেট্রিক টন, ফেনী ও ফুলগাজী উপজেলার জন্য ১০ মেট্রিক টন করে মোট ৫০ টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার দাগনভূঁঞা উপজেলা পরিষদসহ সিন্দুরপুর, রাজাপুর ও জায়লস্কর ইউনিয়নের ত্রাণ সাহায্য হিসাবে চাল বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরো ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হবে।

কলাপাড়া: কলাপাড়ার পুরো উপকূল অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবনে প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরের হাজারো বাড়িঘর, আবাদি জমি সব ডুবে যায়। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ। শনিবার বেলা ১১ টা থেকে বিকাল তিন টা পর্যন্ত অস্বাভিক জোয়ারকে স্থানীয় লোকজনের কাছে জলোচ্ছ্বাস মনে হয়েছে। মানুষের মাঝে এক ধরনের জলোচ্ছ্বাস আতঙ্ক দেখা দেয়। কোমর থেকে বুক সমান উচ্চতার পানিতে ডুবে গেলে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এসময় মুষলধারে বৃষ্টি চলতে থাকে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে লালুয়ার চারিপাড়াসহ ১৩টি গ্রাম এবং মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুরসহ পাঁচটি গ্রাম। ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় প্রবলবেগে জোয়ারের পানিতে মুহুর্তে সেখানকার মানুষের বাড়িঘর পর্যন্ত ডুবে যায়। প্রায় চার ঘন্টার জলোচ্ছ্বাসে মানুষের অবর্ননীয় দূর্ভোগের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লালুয়ার ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুজ্জামান তারা জানান, তার ইউনিয়নের দুই তৃতীয়াংশ এলাকা জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যায়। একই মন্তব্য মহিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল সালাম আকনের। দোকানি আনিছুর রহমান জানান, এবছর এতোবেশি উচ্চতার জোয়ার তিনি আর দেখেননি। চারিপাড়ার এই মানুষটি আরও জানালেন, চারটি গ্রামের কোন মানুষের চাল-চুলা পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা থেকে রক্ষা পায়নি। এসব গ্রামের জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু মিঠাগঞ্জ, বালিয়াতলী, ধুলাসার ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রামের পানি নামতে পারছে না। গাববাড়িয়া ক্লোজার করায় এসব গ্রাম থেকে পানি নামার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে ১৯টি স্লুইসের পানি নামার পথ। ফলে এসব গ্রামের মানুষ স্থায়ীভাবে পানিবন্দী হয়ে আছে। তাদের এ বছর আমন আবাদ পড়েছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। শনিবারের অস্বাভাবিক জোয়ারে কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়ক যোগাযোগ প্রায় পাঁচ ঘন্টা বন্ধ থাকে। ফেরির ঘাটগুলো ডুবে থাকায় এমন দশা হয়েছে। কুয়াকাটা সৈকতে অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রবল ঝাপটায় শত শত গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। উপড়ে ভাসতে থাকে শত শত ঝাউ গাছ। অস্বাভাবিক জোয়ারের ঝাপটায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ ফের রাতের জোয়ারের আতঙ্কে রয়েছে।
খাতুনগঞ্জ: এতে শত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বলে শঙ্কায় রয়েছে ব্যবসায়ীরা।শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সড়ক হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভোগ্যপণ্যের গুদামে পানি ঢুকেছে।খাতুনগঞ্জে আসা পণ্যবাহী ট্রাক থেকে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য খালাস বন্ধ রাখায় কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে এই পাইকারি বাজার।পানিতে তলিয়ে যাওয়া পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, মরিচ, চাল ও শুটকিসহ নানা ধরণের ভোগ্যপণ্য পানি থেকে সরিয়ে শুকানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।টানা বর্ষণের মধ্যে শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত নির্দিষ্ট বিরতিতে আঘাত হানছে জোয়ারের পানি।দুপুর নাগাদ জোয়ারের পানিতে আছদগঞ্জ, বাঁশঘাটা, চানমিয়া গলি, ওসমাইন্যার গলি ও পোস্ট অফিস গলি তলিয়ে যেতে দেখা যায়।ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্রবার বন্ধের দিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় খাতুনগঞ্জ। বন্ধের দিনে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় দ্বিগুণ ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোশিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, খাতুনগঞ্জে ৫ হাজার ট্রেডিং হাউজ আছে, যার প্রতিটা কোনো না কোনোভাবে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।শনিবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকাপাটের যে প্রতিবেদন পাচ্ছি, তাতে ক্ষয়ক্ষতি টাকার অংকে একশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ব্যাংক লোন পরিশোধে হিমসিম খাবে।

বরগুনা: বরগুনার অভ্যন্তরীণ রুটে বড় নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও ৬৫ ফুটের থেকে ছোট নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে।শনিবার সকালে বড় নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।এর আগে, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে নদনদী উত্তাল হওয়ায় ৩০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বরগুনায় সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন বরগুনা নদীবন্দরের বন্দর কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, কোমেনের প্রভাব কেটে গেলেও এখনো ৩ নম্বর সংকেত বহাল আছে। তাই ৬৫ ফুটের থেকে ছোট নৌযান চলাচল বন্ধ আছে।৩ নম্বর সংকেত কেটে গেলে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা :অতিবৃষ্টি আর কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে তালা ও কলারোয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে বীজ তলাসহ শত শত বিঘা জমির ফসল। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। ত্রাণের অভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে পানিবন্দি মানুষ। এলাকার বৃদ্ধ ও শিশুরা ভূগছে সর্দি কাশিসহ পানি বাহিত নানা রোগে। তালা উপজেলার কপোতাক্ষ তীরবর্তী গ্রামের পানিবন্দি মানুষ ধানদিয়া, নগরঘাটা, কুমিরা, সদর, ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের নিমতলা, গাবতলা, দক্ষিণ নগরঘাটা, রাঢ়ীপাড়া, ভবানীপুর, কুমিরা মালোপাড়া, মন্দির খোলা, জুজখোলা, কাশিপুর, ঘোনা, ইসলামকাটি,খলিলনগরের নলতা, জালালপুর ইউনিয়নের কানাইদিয়া সহ ৩০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ি তলিয়ে গেছে। এলাকার বেশ কিছু বাড়ির ভিতরে পানি উঠে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আমন বীজতলা। নষ্ট হয়েছে শাকসবজির ক্ষেতও। এরই মধ্যে কপোতাক্ষ নদের নতুন বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে বড় আকারের ভাঙন। কপোতাক্ষ নদের পানি এখন নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে সংযোগ খাল দিয়ে ধেয়ে আসছে লোকালয়ে। পলি জমে দুই দশক ধরে স্রোতহীন হয়ে পড়েছে কপোতাক্ষ নদ। বৃষ্টির কারণে নদের দুই পারের একাধিক গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অতি বৃষ্টিতে নদের পানি উপচে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। তালা সদর উপজেলা সহ তার আশপাশের এলাকা অতিবৃষ্টি আর কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে ডুবে গেছে। তালা উপজেলা পরিষদ অফিস, সমাজ সেবা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, মৎস অফিস, কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রাণী সম্পদ কর্যালয়, ভূমি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, আনসার ভিডিপি অফিস, শিল্পকলা একাডেমী, উপজেলা জামে মসজিদ সহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। এছাড়া তালা উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তা, তালা সদর ইউনিয়ন পরিষদে হাঁটু পানি পেরিয়ে সবাইকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সরকারী অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাঁটু পানির মধ্যেই তাদের কাজ সারতে হচ্ছে। যার ফলে তালা উপজেলাবাসীকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সব কিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা বর্ষন ও কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে এই উপজেলায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। প্রতি বছরই এই উপজেলাবাসীকে পানির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। এদিকে, স্থায়ী জলাবদ্ধতার ফলে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে ওই উপজেলার মানুষদের।