ড.-আসাদুজ্জামান-রিপন

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ আগস্ট ২০১৫: দল পুনর্গঠনে সরকার বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বুধবার দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন।দলের এ মুখপাত্র বলেন, আমরা যখন দলকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করতে যাচ্ছি ঠিক তখনই সরকারের বিভিন্ন মহল হামলা মামলা ও চার্জশিট দিয়ে দল পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি করছে।তিনি বলেন, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে চার্জশিট গঠন করেছে সরকার।এসময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যে মামলা দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার এবং তারেক রহমানসহ সকল নেতাকর্মীদের চার্জশিট বাতিলের আহ্বান জানান তিনি।গাজীপুরের জয়দেবপুরে নাশকতার মামলার চার্জশিট থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম বাতিলের দাবি জানিয়ে রিপন বলেন, তারেক রহমানকে হেয় করতেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজানো মামলায় তাকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এই মামলা রাজনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গের শামিল। বিচারপ্রক্রিয়া একপেশে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে তারেক রহমান এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের বাধার মুখেও বিএনপির পুনর্গঠন চলছে। যেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে যথাসময়ে কাউন্সিল ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বিলম্ব হতে পারে।

মিথ্যা মামলার কৌশল থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে রিপন বলেন, কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির ভূমিকা থাকুক তা সরকার চায় না।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্সাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার গোলাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুল সালাম আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অপর্ণা রায়, সহ-দফতর শামীমুর রহমান শামীম প্রমূখ।

নাশকতা মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।মঙ্গলবার গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর জেলা পুলিশ আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করে।এদিকে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সহদফতর সম্পাদক মো. আবদুল লতিফ জনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। তাতে তারেক রহমানসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের প্রতিবাদ ও নিন্দার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।বিবৃতিতে সব দলের অংশগ্রহণে আশু জাতীয় নির্বাচনেরও দাবি করা হয়েছে।বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পরও আদালত আরো দুটো জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার ব্যাপারে আদালতের পর্যবেক্ষণ নাকচ করে সংবিধানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বানের ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেছে বিএনপি।

সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি না মানায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করেছিল আমাদের দল।এ দাবিতে দেশের অধিকাংশ দলও ওই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এবং সরকার প্রতিশ্র“ত আরেকটি নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার অঙ্গীকার থেকে দূরে চলে যাওয়ায় বিএনপি এ বছরের শুরুতেই অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করা লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ পথে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।কিন্তু আন্দোলন চলাকালে সরকারের এজেন্টরা, শাসক দলীয় লোকেরা বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে তার দায় বিরোধীদলের কাঁধে চাপানোর অপপ্রয়াস নিয়েছে, যা কারোরই অজানা নেই। পত্রপত্রিকাতেও শাসক দলের সংশ্লিষ্টতায় সন্ত্রাসী নাশকতার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে।বিবৃতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, দুঃখের বিষয়, নিজেদের সৃষ্ট এসব সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোকে পুঁজি করে সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পর্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে হুকুমের আসামি করে মামলা করেছে। মিথ্যা মামলায় বিএনপি নেতারা কারাগারে। অনেক নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়েছে। চার্জশিট দিয়ে আমাদের নেতৃত্বকে ভীষণ চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে, যাতে করে পার্টি চেয়ারপার্সন ঘোষিত দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও গাজীপুরের একটি সাজানো সন্ত্রাসী ঘটনায় তাকে হুকুমের আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।অথচ দেশবাসী জানেন, তারেক রহমান সুচিকিৎসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে আদালতের অনুমতি নিয়ে বিদেশে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরকারের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। অথচ এই বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগের সত্যতার লেশমাত্র নেই।বিবৃতিতে অভিযোগ করে বিএনপির নেতা মো. আবদুল লতিফ জনি বলেন, মামলায় এফআইআরে নাম না থাকা সত্ত্বেও তারেক রহমানের প্রবাসের ঠিকানায় বসে সরকার উৎখাতের বিষয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন বলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার নজিরবিহীনভাবে সংবাদ সম্মেলনে যে অভিযোগ করেছেন, তা সত্যের অপআলাপ ছাড়া আর কিছু নয়, যা ছায়াছবির ফ্যান্টাসি কাহিনীকেও হার মানিয়েছে।তিনি বলেন, এ ধরনের মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা এবং চার্জগঠন করা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বিরুদ্ধে কুঠারাঘাত করার শামিল।আমরা সরকারকে হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার কৌশল পরিত্যাগ করার জোর দাবি জানাচ্ছি এবং এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, দেশে এখন সরকার ও বিরোধীদলের জন্য দুই ধরনের আইনি প্রয়োগের ঘটনা ঘটছে। যখন বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যা, গুমের শিকার হচ্ছেন, আমাদের দাবি সত্ত্বেও সে ক্ষেত্রে কোনো বিচার বিভাগীয় জুডিসিয়াল ইনকোয়ারি (বিচার বিভাগীয় তদন্ত) হচ্ছে না এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনো কমান্ডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা না হলেও, শাসক দলের কর্মী ক্রসফায়ারের শিকার হওয়ায়-র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।দলমত নির্বিশেষে সবার প্রাণের মূল্য ভিন্নতা না থাকার কথা থাকলেও পরিতাপের বিষয় হলো এই যে, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গুম, খুনের ঘটনার কোনো প্রতিকার দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে না। ঘটনা দৃষ্টে মনে হয়, সরকার বিরোধীদলকে নির্মূল করা এবং প্রধান বিরোধীদলের নেতৃত্বকে বিপর্যস্ত করার অপকৌশলে নিজেদের অনৈতিক ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করে ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দিকেই তারা এখন বেশি মনোযোগী।এদিকে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

অথচ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক অভিযোগ এনে তার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার যে হীন ষড়যন্ত্র চলছে, তার প্রতিবাদে তিনি যে বক্তব্য দেবেন বা দিতে পারতেন, তার সেই সাংবিধানিক অধিকারটি পর্যন্ত ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।এমতাবস্থায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার পর বিচারিক প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে একপেশে হওয়ারই আশঙ্কা থাকছে এবং তিনি যে ন্যায়বিচার পাবেন না, সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এটি ব্যক্তির মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বে অন্য কিছু নয়!আমরা সরকারের এহেন কূটকৌশলের তীব্র নিন্দা করছি এবং তার বিরুদ্ধে গঠিত চার্জশিট প্রত্যাহার ও বাতিলেরও দাবি জানাচ্ছি।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আজ এটা পরিস্কার হয়ে উঠেছে যে, বিএনপি জাতীয় কাউন্সিল করার উদ্দেশ্যে দলকে পুনর্গঠন করার যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।এসব মামলা, চার্জগঠন ও চার্জশিটের নাটক তৈরি তারই অংশ। সরকারকে এসব হীন পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।আবদুল লতিফ জনি বিবৃতিতে বলেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি ভঙ্গুর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এ ধরনের মহাসংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিভেদ-হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির কৌশল কোনো সমাধান দেবে না। বরং কার্যকর সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহয়োগীদের পরামর্শ এবং দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি আস্থার ক্ষেত্র নির্মাণ করার কোনো বিকল্প নেই।প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দলবাজ লোকদের ব্যক্তি স্বার্থের সব উস্কানির ব্যাপারে সরকার সচেতন থেকে বিরোধী নেতৃত্বকে হেয় প্রতিপন্ন করার বা হয়রানির পদক্ষেপ থেকে সরকার সরে এসে সবার অংশগ্রহণে একটি আশু জাতীয় নির্বাচন দিয়ে দেশের মৃত প্রায় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারে সবাই একযোগে কাজ করবেন, সে কথাটি আমাদের সবাইকে জরুরিভাবে ভাবতে হবে।বিএনপির এই নেতা বলেন, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সব বাধা সত্ত্বেও এগিয়ে যাবে। দলের কাউন্সিলের তারিখ শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে দলের চেয়ারপার্সন উপযুক্ত সময়ে ঘোষণা করবেন।