saidpur g hospital-enewsbdpress

দৈনিকবার্তা-নীলফামারী, ১ সেপ্টেম্বর: নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবহেলায় রোগীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷ দায়িত্বরত চিকিত্‍সকদের যথাসময়ে অনুপস্থিতি, নিয়মিত ডিউটি না করা, নার্স-ওয়ার্ড বয়দের দায়িত্বে অবহেলার দরুন প্রতিনিয়ত দুঃসহ যন্ত্রনায় কাটাতে হয় আগত রোগীদের৷ বিশেষ করে রাতের বেলা হাজার ডাকাডাকি করেও কাউকে কাছে না পেয়ে চরম কষ্ট করতে হয়৷

জানা যায়, জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিত্‍সক কাগজ-কলমে উপস্থিত থাকলেও নামমাত্র রোগী দেখে চলে যান এবং বেশিরভাগ সময় থাকেন তাদের নিজস্ব চেম্বারে বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে৷ তাদের অবর্তমানে ওয়ার্ডবয় আগত রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়৷ কিন্ত গুরুতর অসুস্থ রোগী এলে চিকিত্‍সকের অভাবে রোগ যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকেন৷ এসময় ওয়ার্ডবয় বা দায়িত্বরত নার্স তাদের ওই চিকিত্‍সকের চেম্বারে বা সংশ্লি্লষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে পাঠিয়ে দেয়৷ এতে প্রকৃত চিকিত্‍সা সহায়তা না পেয়ে রোগীরা চরম সংকটে পড়ে যায়৷ এর পাশাপাশি অনেক রোগী প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে অপারগ হলে ওয়ার্ড বয় বা নার্সরা কোন রকমে ভর্তি করিয়ে নেয়৷ কিন্ত যথাযথ ব্যবস্থা পত্র ও ওষুধ না পেয়ে আরও বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে৷

হাসপাতালে জরুরী প্রয়োজনে নার্স বা ওয়ার্ডবয়দেরকে বার বার ডেকেও যথাসময়ে পাওয়া যায়না৷ এমনকি ডিউটিকালীন সময়ে অনেক নার্স ঘুমাতে ব্যস্ত থাকেন৷ সৈয়দপুরের পাশর্্ববর্তী চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের মোঃ সাইফুল ইসলামের স্ত্রী মাহমুদা বেগমকে বুকে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে ছুটে আসেন তার পরিবারের লোকজন৷ এসে দেখেন জরুরী বিভাগে কোন চিকিত্‍সক নেই৷ এসময় ডিউটিরত চিকিত্‍সকের নাম জানতে চাইলে ওয়ার্ডবয় আসাদ জানান, তিনি এখন হাসপাতালে নেই তাই তার নাম জানানো যাবেনা৷ এসময় নার্স বাবলী রোগী দেখে চিকিত্‍সা দিতে থাকেন৷ কিন্ত সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ওয়ার্ড বয় মোবাইল ফোনে চিকিত্‍সককে ডেকে আনেন৷ তারপর রোগীকে প্রাথমিক চেকআপ করে ওয়ার্ডে নিয়ে গেল দেখা যায় সেখানে দায়িত্বরত কোন নার্সই উপস্থিত নেই৷ অনেক খোজাখুজি করে তাহসীনা নামে একজনকে পাওয়া গেলেও তিনি ঘুমিয়ে আছেন তাই তাকে ডিস্টার্ব করা যাবেনা বলে ডাকতে নিষেধ করে ওয়ার্ডবয় আসাদ৷ পরে নার্স তাহসীনাকে জোড় পূর্বক ডেকে উঠালে অনেকটা বিরক্তি নিয়ে নামমাত্র সেবা দেয়৷

এসময় একই ওয়ার্ডে চিকিত্‍সারত রোগী সৈয়দপুর শহরের নয়াটোলা ডিআইবি রোডের ফাতেমা পারভীন অভিযোগ করেন যে, এ হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা যেন লাট সাহেব৷ প্রয়োজনের সময় বার বার ডেকেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়না৷ বিশেষ করে রাতের বেলা অতি গুরুতর অবস্থায় ডেকেও তাদের সহায়তা পাওয়া যায়না৷ ফলে চরম রোগ যন্ত্রনা পোহাতে হয়৷ নার্স বা ওয়ার্ড বয়দের বেশি কিছু বলতে গেলে তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে যায় এবং রোগীদের সাথে দূবর্্যবহারও করে৷ যা কোন ভাবেই একটি সরকারী হাসপাতালে কাম্য নয়৷

এভাবে প্রায় কয়েকজন রোগী একইরকম অভিযোগ করেন৷ এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে চাকুরীরতদের বেশিরভাগই স্থানীয়৷ যার ফলে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী কোন না কোন ব্যক্তির পরিচিতজন বা আত্মীয় স্বজন৷ সেই অজুহাতে তারা নামকা ওয়াস্তে ডিউটি করে থাকে৷ তাদের বলার কেউ নেই৷ হাসপাতালের প্রধান দায়িত্বশীল যিনি তিনিই যখন দায়িত্বে অবহেলা করেন তখন অন্যরা অবহেলা করতে দ্বিধা করবে কেন৷ অবস্থা এতটাই প্রকট যে এখানে কোন রোগী না এলেই যেন তারা বেশী খুশি হয় এবং নিজেদের ইচ্ছে মত চলতে পারে৷

এ ব্যাপারে নীলফামারী সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রশিদকে অবগত করা হলে তিনি জানান, এমন কোন ঘটনা আদৌ ঘটার কথা নয়৷ তবে ঘটনার সত্যতা থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে৷