Bogra Pic-05

দৈনিকবার্তা-বগুড়া , ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে । এবছর ১ম দফা বন্যার চেয়ে ২য় দফা বন্যায় যমুনার পানি অতিক্রম করেছে ৯ সেঃমিঃ। ১ম দফা বন্যায় যমুনার পানি বিপদ সীমার ৬৩ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, যমুনা ও বাঙালী উভয় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭২সেঃ মিঃ এবং বাঙালী নদীর পানি বিপদ সীমার ৪২ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল । অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চল সহ ৬৮টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে । দীর্ঘ দিন যাবৎ বসতবাড়িতে বন্যার পানি থাকায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠেছে । পানি বন্দি মানুষের পানি বাহিত রোগ দেখা দিয়েছে ।

প্রতিদিন পাানি বন্দি লোকজন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন । বাড়িঘওে বন্যার পানি ওঠায় মথুরাপাড়া মহিলা উন্নয়ন সংস্থার শাহজাহান আলি গতকাল শনিবার মালামাল নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিতে গেলে তিনি বাঁধার মুখে পড়েন । নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ভিতর জমি যাওয়া লোকজন তাকে আশ্রয় নিতে বাঁধা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন । ঘর থেকে কষ্ট করে মালামাল বের করে বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে রেখে সেড তুলতে না পেরে তিনি বিপাকে পড়েছেন । আদবাড়িয়া গ্রামের ভ্যান চালক সিদ্দিক মিয়া জানান, প্রায় ১৫দিন হলে তার ঘরের মধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করেছ্ ে। বর্তমানে তার ঘরের মধ্যে কোমর সমান পানি । স্ত্রী ও ৩ সন্তান সহ তিনি সেখানেই অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন । বন্যার পানি পারাপার হতে তাদের পরিবারের সদস্যদের পায়ে ঘাঁ হয়েছে ।এদিকে বগুড়ার ধুনটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। যমুনা, বাঙালী ও ইছামতি নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের চরম দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, ২৪ ঘন্টায় ৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাঙালী নদীর পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইছামতি নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাঙালী ও ইছামতি নদীর পানি বিভিন্ন খাল দিয়ে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নে যমুনা নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরের ১৪টি গ্রামের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি এলাকার লোকজন প্রায় ১৫ দিন যাবত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধে আশ্রিতদের ছোট ছোট ছাপড়া ঘর। এসব ঘরেই গোবাদী প্রাণীর সঙ্গে গাদাগাদি করে বসবাস করছে বানভাসী লোকজন। বন্যার পানিতে ডোবার আশংকায় শিশুদের নিয়ে বিপাকে রয়েছে পরিবারের কর্তারা। দূর্গত এলাকায় গোবাদী প্রাণীর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

বানভাসী মানুষের নিরাপদ খাবার পানির সংকট রয়েছে। বিশেষ করে পয়নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চরম দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য শ্রমজীবি মানুষ। শ্রমজীবি পরিবারে গুলোতে খাদ্য সংকট রয়েছে। দূর্গত এলাকায় চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ তৎপরতা নেই। কর্মহীন লোকজন বন্যার পানিতে মাছ শিকার করে পরিবারের সদস্যদের খাদ্য নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এছাড়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত পরিবার গুলো গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে চরম দূর্ভোগ শিকার হয়েছে। বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে ত্রিফলের চাহিদা রয়েছে বন্যার্তদের মাঝে। ত্রিফলের অভাবে বাঁধে আশ্রয় নিতে পারেনি পুকুরিয়া গ্রামের কয়েকটি পরিবার। এসব পরিবারের লোকজন পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে।