khaleda-doinikbarta

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির দুই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ওজেরার জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন রেখেছে আদালত৷বৃহস্পতিবার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় তিন সাক্ষীর জেরা এবং এক সাক্ষীর জবানবন্দি শোনার পর ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এই দিন ঠিক করে দেন৷ বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের মাঠে এ আদালতের বিশেষ এজলাসে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুননিও চলছে৷মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বেলা ১১টার দিকে আদালতে পৌঁছান সাবেক টওধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া৷ অবশ্য তিনি পৌঁছানোর আগেই সাড়ে ১০টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়৷খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ার কথা বলে সময়ের আবেদন করলে বিচারক তা নথিভুক্ত করে রাখেন৷

এদিন দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এইচ এম ইসমাইল, জনতা ব্যাংকের সাত মসজিদ রোড শাখার জিএম শেখ মকবুল আহমেদ এবং জনতা ব্যাংকের প্রথম সহকারী মহা ব্যবস্থাপক ফাহমিদা রহমানকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা৷পরে সোনালী ব্যাংকের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাখার ডিজিএম মো. হাফিজুর রহমান এ মামলায় সাক্ষ্য দেন৷জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ, তবে তার জেরা বাকি রয়েছে৷এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটির বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় দুদক জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি করে৷বৃহস্পতিবার সেপ্টেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জব্দ তালিকার তিন সাক্ষীকে আসামিপক্ষের জেরা ও নতুন একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর পরবর্তী এ দিন ধার্য করেছেন আদালত৷আদালতে হাজির ছিলেন মামলা দু’টির প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে৷

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জব্দ তালিকার তিন সাক্ষীকে জেরা ও একজন নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় বৃহস্পতিবার৷ গত ৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেওয়া ওই তিন সাক্ষী হচ্ছেন- পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এইচ এম ইসমাইল, জনতা ব্যাংকের সাত মসজিদ শাখার জিএম শেখ মকবুল ও ফাহমিদা রহমান৷ তাদেরকে খালেদা জিয়ার পক্ষে আব্দুর রেজ্জাক খান ও অন্য আসামিদের পক্ষে আমিনুল ইসলাম জেরা শেষ করেন৷ পরে জব্দ তালিকার সাক্ষী সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম ড. মো. হাফিজুর রহমান সাক্ষ্য দেন৷ আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে আসামিপক্ষের জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল৷তিনি আরও জানান, মামলাটির জব্দ তালিকার অন্য ছয়জন সাক্ষীও সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির ছিলেন৷ তারা হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের এজিএম মো. আমিরউদ্দিন ও সিনিয়র এঙ্িিকউটিভ অফিসার পরিতোষ চন্দ্র দে, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার নওশাদ মোহাম্মদ, কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার অলোক কান্তি চক্রবর্তী ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম এবং সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম আব্দুল গফুর৷ আগামী ধার্য তারিখে আগের সাক্ষীদের জেরা শেষ হলে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে৷

সকাল দশটা ৩৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়৷ বেলা এগারটার পরে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন আটজন সাক্ষী৷ বাকি চারজন হচ্ছেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ, মামলার রেকর্ডিং অফিসার মাহফুজুল হক ভূঁইয়া এবং জব্দ তালিকার পাঁচ সাক্ষী সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ইনসান উদ্দিন আহমেদ, ক্যাশ অফিসার শাহজাহান খান৷ তাদেরকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে৷অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বিধিসম্মত বলে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ মামলার জেরা-সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে সময়ের আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা৷ এ আবেদন নথিভূক্ত রেখেছেন আদালত৷ মামলাটিতে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ৷ তাকে আসামিপক্ষের জেরা বাকি রয়েছে৷

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাত সাক্ষীর অন্য ছয়জন হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ, অফিসার (ক্যাশ) শফিউদ্দিন মিয়া, আবুল খায়ের, প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা নাজমা পারভীন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন৷ আগামী দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের জেরা শেষ হলে এসব সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণও করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী৷জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন৷ খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তত্‍কালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডবি্লউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন৷ হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন৷ খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷ আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন৷২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়৷

অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক৷ এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত্‍ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়৷দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তত্‍কালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান৷জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়৷ কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উত্‍স ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি৷

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে৷২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তত্‍কালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান৷গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়৷খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও৷গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে৷