অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ যে সাফল্য লাভ করেছে, আসন্ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে তার চেয়েও বেশি সাফল্য পাবে বলে প্রত্যাশা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বুধবার দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন: বাংলাদেশে অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০১৫ প্রকাশ উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ সালফ্য লাভ করেছে। ইতোমধ্যে আমরা দারিদ্র্যের হার কমানো, দারিদ্র্য অনুপাত হ্রাস, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর মৃত্যুর হার হ্রাস, টিকাদান উন্নতি এবং সংক্রামক রোঘের প্রকোপ হ্রাস প্রভৃতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছি।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করা ৪ বছরের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সারা বিশ্বের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে ১৫ বছর সময় লাগবে। এমডিজির যে লক্ষ্যগুলোতে আমরা পিছিয়ে আছি, সেগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। অন্যদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এসডিজির ক্ষেত্রগুলো আমরা নির্ধারণ করে রেখেছি। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত আসন্ন এসডিজির লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে আরও বেশি সক্ষম হবে।বাংলাদেশ যে উন্নতি লাভ করছে তা জাতিসংঘ ও আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো স্বীকার করেছে বলে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র দূরীকরণসহ মানব উন্নয়ন সূচকের বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলো। আমরা সেগুলো ভালভাবে অর্জন করতে পেরেছি। সরকার, বেসরকারী খাত এবং উন্নয়ন সহযোগিদের সম্মিলিত প্রয়াসের কারনে এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছর আমরা যেভাবে দারিদ্র্য কমাতে পেরেছি, এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের আগেই দেশ দারিদ্রমুক্ত হবে।এমডিজি অর্জনের এই উদ্যমকে কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন (এসডিজি) করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, কোনো মানুষ যেন না খেয়ে থাকে সে বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রতিবছর ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে দারিদ্র কমছে। এই হার বজায় থাকলে আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে দেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না।তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে জ্ঞান নির্ভর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দেশ হবে বাংলাদেশ। আর আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তখন আমরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রোলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যাবো। শতভাগ মানুষ শিক্ষিত এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে, আমরা এ স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, স্বদেশি প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিদেশি প্রক্রিয়া যুক্ত করে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি। সরকারের উন্নয়ন কৌশল ও নাগরিকদের অংশগ্রহণে এমডিজির লক্ষ্য অর্জনে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে বেড়েছে মানুষের গড় আয়ুও।

অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সামাজিক ও মানব উন্নয়নসূচকের অগ্রগতির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। এর সাথে সাথে ‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে’ সরকারের এই অর্থনৈতিক দর্শন বাস্তবায়ন হচ্ছে। এমডিজির ঋণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, অনুদানের ক্ষেত্রে অসমাপ্ত ত্বরিত উন্নয়ন সহযোগিতা এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।অনুষ্ঠানে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন: বাংলাদেশে অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০১৫’ এর সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলকরণ, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুহার কমানো, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি বা এইডস-ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ ও সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সবগুলো সূচকেরই আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে।শামসুল আলম প্রতিবেদেন তুলে ধরে বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় দারিদ্র্য কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় অর্জনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ। বালকদের ক্ষেত্রে ৯৬ দশমিক ৬ ও বালিকাদের ক্ষেত্রে ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার হার ৮১ শতাংশ, প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হার (পুরুষ ৭৪ শতাংশ) ও নারী ৭৭ শতাংশ। ২০১৪ সালে ছেলে ও মেয়ের অনুপাত ১ দশমিক ০৩ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালে ছিল ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এ হার ০ দশমিক ৩৭ থেকে ০ দশমিক ৬৭ হয়েছে। অর্থাৎ ১০০ জন ছাত্রের বিপরীতে ৬৭ জন ছাত্রী।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এমডিজি অর্জনে শিশু মৃত্যুহার কমাতে পেরেছে। ১৯৯০ সালে ১ হাজার জন শিশুর মধ্যে জন্মের পর মারা যেতো ১৪৬ জন। ২০১৩ সালে তা নেমে এসেছে শুধু ৪৬ জনে। ২০১৫ সালে এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ জন। ২ বছর আগেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের।পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি প্রমুখ।

ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূলে প্রশংসনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) অন্যতম হলো দারিদ্র্য নিরসন। এমডিজি অর্জনের নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই এ লক্ষ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। একইসাথে এমডিজির সামাজিক ও মানব উন্নয়ন সূচকে অসামাণ্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ।২০০০ সাল থেকে গড়ে প্রতিবছর দেশে দারিদ্র্য কমেছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। এরই ধারবাহিকতায় এমডিজির মেয়াদের শেষ বছর ২০১৫ সালে এসে দেশের দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে। এই হারে যদি দারিদ্র্য কমতে থাকে, তাহলে ২০৩০ সালের আগেই দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে বলে সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।