tareq-khaleda-doinikbarta

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান ছেলে তারেক রহমান। বুধবার লন্ডন সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ১২টা ১৫ মিনিট) লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এরপর কিছুটা সময় ইমেগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে তার দেখা হলো বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে।এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে ঢোকার পর প্রথমেই তারেক রহমান মাকে জড়িয়ে ধরেন। এসময় সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ জানান, মা-ছেলে বেশ কিছু মূহূর্ত একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে থাকেন। দুজনেই তখন কাঁদছিলেন। এরপর লাউঞ্জে কিছুক্ষণ অবস্থান করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছেলে ও দলের স্থানীয় শীর্ষনেতাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। আশেপাশে ততক্ষলে লন্ডনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভির। এরপর খালেদা জিয়া উঠলেন কালো রঙের একটি গাড়িতে। ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলেন তারেক রহমান। মাকে ড্রাইভ করে হোটেলে সোফিটেলে নিয়ে যান তারেক।

ব্যক্তিগত এ সফরে খালেদা জিয়া চোখের চিকিৎসা করাবেন।লন্ডনের একটি হাসপাতালে পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান আগে থেকেই অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে রেখেছেন।দীর্ঘ চার বছর পর বড় ছেলে তারেক রহমান, ছেলের বউ জোবায়দা রহমান, নাতনি জাইমা রহমানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ২০১১ সালে লন্ডন সফরের সময় তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমানের সঙ্গেও লন্ডনে দেখা হচ্ছে খালেদা জিয়ার।এরই মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে দুই মেয়ে নিয়ে লন্ডন পৌঁছেছেন শর্মিলা।এর আগে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে৭ ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন খালেদা।

বুধবার ভোরে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে নামার পর নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে হোটেলে সোফিটেলে নিয়ে যান তারেক। খালেদা আপাতত এই হোটেলে উঠলেও পরে আবাস পাল্টাবেন বলে প্রবাসী বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারেকের সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছার আহমেদ।বিএনপির কয়েকশ’ নেতা-কর্মী বিমানবন্দরের বাইরে উপস্থিত ছিলেন সেখানে দলীয় চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে। অন্যদিকে বিক্ষোভ জানাতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা।স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গেলেও এবার লন্ডনেই ছেলে, পূত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন খালেদা। ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়েও থাইল্যান্ড থেকে লন্ডনে গেছেন। বিএনপি নেতা মালেক বলেন, সফরকালে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন খালেদা জিয়া, সভা করবেন দলের যুক্তরাজ্য শাখার নেতাদের সঙ্গে। ঈদের দিন কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।

হিথরো বিমানবন্দরের বাইরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা হিথরো বিমানবন্দরের বাইরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাএদিকে খালেদা যেখানে কর্মসূচিতে যাবেন, সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক লেন, তিনি যেখানে সভা করবেন, সেখানেই প্রতিবাদ জানাব আমরা। বিশেষ করে ব্রিটিশ সরকারের কারও কাছে তিনি তদবির করলে।খালেদা পৌঁছার সময় হিথরো বিমানবন্দরের বাইরে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ছাড়াও ছিলেন সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, আনোয়ার-উজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ।আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্র করতেই লন্ডন যাচ্ছেন।ঢাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে রওনা হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দুবাইয়ে দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতির পর বুধবার সকালে লন্ডন পৌঁছান তিনি।

তার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান জানান, তার নেত্রীর চোখের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও ঠিক করা হয়েছে।২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে খালেদার এটি দ্বিতীয় সফর। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেককে দেখতে লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় (২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা) হুলিয়া নিয়ে গত সাত বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে রয়েছেন।দলীয় চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছার ফুল যুক্তরাজ্য বিএনপির দুই শীর্ষ নেতারখালেদা জিয়া গত বছর ওমরাহ করতে সৌদি আরবে গেলে তারেকও লন্ডন থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। এরপর আর মা-ছেলের দেখা হয়নি। এরপর মালয়েশিয়ায় থাকা খালেদার ছোট ছেলে কোকো মারা যান।প্রতি বছরের মতো এবারও রোজার সময় ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল খালেদার। কিন্তু ওই সফর তিনি শেষ মুহূর্তে বাতিল করেন দলের শীর্ষ নেতাদের কারাগারে থাকার কথা বলে।আর গত অগাস্টে লন্ডন যাওয়ার তোড়জোড় করেও পরে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন। তার না যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনারও সৃষ্টি হয়।লন্ডন সফরের আগে গত রোববার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত করার তাগিদ দেন খালেদা।খালেদা রওনা হওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, সাংগঠনিক কাজ সবাই মিলে এগিয়ে নিতে চেয়ারপারসন নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওইসব অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। খালেদাকে প্রধান অতিথি করে একটি সমাবেশ হওয়ারও কথা রয়েছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে গত সোমবার যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রস্তুতি সভাও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লন্ডন বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ম্যাডাম উনার ছেলে তারেক রহমান ও ছেলের স্ত্রী জুবায়দা রহমানের সঙ্গে দলীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। এ সময় বিগত আন্দোলনের পর্যালোচনা করা হবে। এমনকি ওই আন্দোলনে দলের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান কি ছিল তাও খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়াও গুলশান কার্যালয়ে থাকা নেতাদেরও অবস্থান খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান বিএনপির ওই নেতা।

বিএনপির ওই নেতা আরো বলেন, ম্যাডামের যুক্তরাজ্য সফর শেষে নতুন তরে দল সাজানো হবে। কেন্দ্র থেকে তৃনমূল পর্যন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে তা জানতে পেরেছি।