কাঁচাপণ্যের দাম স্থিতিশীল ঈদকে ঘিরে মসলার দাম বাড়ার আংশকা

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫: টানা দুই মাস ধরে বিভিন্ন অযুহাতে দেশে কাঁচাবাজারে পণ্যের দর বাড়লেও অবশেষে তা কমতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাঁচাপণ্যের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে জনিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দিন দিন পণ্যের দর আরো কমবে বলে জানিয়েছেন তারা। শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এমনটিই জানিয়েছেন।এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে মসলার বাজারে দর বাড়ার আংশকা করছে ক্রেতারা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বেড়েছে চোরাই পথে মসলা আমদানি। এতে রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়, সীম ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায় (গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা), গাজর ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা (গত শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা), শশা ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা (গত শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা), করলা ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা (গত শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা), ঝিঙ্গা ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা (গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), বেগুন ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা (গত সপ্তাহে ছিল ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা), পটল ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় (গত সপ্তাহে যা ছিল ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা), কাকরুল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা (আগে ছিল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), ভেণ্ডি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টকায় (গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), ওস্তা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা (গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায়), চিঁচিঙ্গা ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায় (গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), পেঁপে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, দোন্দল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায় (গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), বটবটি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় (গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায়), টমেটো ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায়, আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, গত দুই মাসে বেশির ভাগ সময় বৃষ্টিতে দেশের শাকসব্জির বাগান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে পণ্যের দাম বাড়তি ছিল। তবে এখন আবহাওয়া স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। এতে পণ্যে দাম কমছে। এছাড়া কাঁচাপণ্যের দর আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। সেগুনবাগিচা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, পাইকারী বাজারে এখন আমদানি ভালো, যে কারণে পণ্যের দাম কিছুটা কমছে। আর আমরা পাইকারী বাজারে কম দামে পাচ্ছি বলেই কাস্টমারদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে পারছি। পাইকারী বাজারে আরো দাম কমলে আমরা আরো কমে পণ্য বিক্রি করতে পারবো।এদিকে বাজারে পিঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে দেশি পিঁয়াজ ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো কোনো বাজারে ঈদকে সামনে রেখে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ ৮০ টাকায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া বিদেশি পিঁয়াজ ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশি রসুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি আদা ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে শুক্রবার ছাড়া টিসিবি প্রতিদিন খোলা ট্রাকে প্রতি কেজি পিঁয়াজ রাজধানীতে ৫০ টাকায় এবং রাজধানীর বাইরে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছে।পাইকারী বাজারে ডিমের দাম আগের সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি হাঁসের ডিম ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী বাজারে ব্রয়লার মুরগির একশ ডিম ৮০০ টাকা থেকে ৮১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে (গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকায়)। তবে হাঁসের ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পাইকারী বাজারে একশ হাঁসের ডিম ১০৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম (সাদা) ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকায়, ব্রয়লার মুরগি (লাল) ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বেড়েছে চোরাই পথে মসলা আমদানি। এতে রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।ঈদ সামনে রেখে চাহিদার চেয়ে বেশি মসলা আমদানি হলেও তার বেশিরভাগই চোরাই পথে দেশে ঢুকছে বলে দাবি করেছেন আমদানিকারকরা। আর এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।মসলা আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি মসলা আমদানি হয়। ঈদের ২ থেকে ৩ মাস আগে থেকেই মসলা আমদানি শুরু হয়। মসলা ভেদে ৬১ থেকে ৯৩ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করেন আমদানিকারকরা। এতে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায়। বেশিরভাগ মসলা প্রতিবেশী দেশ ভারতে উৎপন্ন হয়। ফলে স্থলবন্দর ও সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে মসলা আমদানি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। চোরাই পথে আসা নিম্নমানের এসব মসলার সঙ্গে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছে না আমদানি করা মানসম্মত মসলা। এতে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি (বিডব্লিউএসএমএ) সূত্র জানায়, ঈদ সামনে রেখে গত দু’মাসে আমদানি হয়েছে বিপুল পরিমাণ মসলা। এর আগে মসলার দাম কিছুটা বেশি থাকলেও পর্যাপ্ত আমদানি ও রফতানিকারক দেশগুলোতে বুকিং রেট কমে যাওয়ায় বর্তমান বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানি ও সরবরাহ থাকায় ঈদের বাজারে মসলার দাম আরো কমবে।সূত্র আরো জানায়, আবহাওয়ার কারণে জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, গোল মরিচ, দারুচিনি, জয়ফল, জয়ত্রী, কিসমিস ও পেস্তার উৎপাদন বাংলাদেশে হয় না। যার ফলে সিরিয়া থেকে জিরা, পাকিস্তান ও মায়ানমার থেকে পেস্তা, সিঙ্গাপুর থেকে এলাচ ও লবঙ্গ, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে দারুচিনি এবং চীন-ভারত-নেপাল-ইন্দোনেশিয়া থেকে গোল মরিচ ও কিসমিস আমদানি করা হয়। দেশে প্রতিবছর আড়াই হাজার মেট্রিক টন জিরা, সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন দারুচিনি, তিন হাজার মেট্রিক টন এলাচ ও ৩৬০ মেট্রিক টন লবঙ্গের চাহিদা রয়েছে বলে সূত্র জানায়।

তবে চাহিদার ৭৫ শতাংশ মসলাই চোরাই পথে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আসে বলে জানা গেছে। পতিবছর চোরাই পথে আড়াই হাজার মেট্রিক টন এলাচ, সাড়ে ছয় হাজার মেট্রিক টন জিরা ও বিপুল পরিমাণ গোল মরিচ, লবঙ্গ এবং অন্যান্য মসলা আসছে।ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে আসা মসলা ফেনী ও চৌদ্দগ্রামে, পাঁচবিবি সীমান্ত দিয়ে আসা মসলা কুমিল্লা ও ঢাকার পাইকারি বাজারে চলে যায়। এছাড়াও বগুড়া ও খুলনা সীমান্ত দিয়ে আসা মসলা পাবনা-সৈয়দপুর-রংপুর-রাজশাহী-ঢাকা এবং টেকনা ও ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে আসা মসলা দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। চোরাই পথে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে আমদানিকারকরা জানান, মসলার আমদানি শুল্ক ৬১ থেকে ৯৩ শতাংশ। অথচ, পাশ্ববর্তী দেশে এ হার ২০ থেকে ২৬ শতাংশ। শুল্ক কমালে রাজস্ব বাড়বে, কমবে অবৈধ আমদানি।বিডব্লিউএসএমএ সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, শুল্ক বেশি বলে অবৈধ পথে মসলা আসছে। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, ঈদ সামনে রেখে গত তিন মাস আগে থেকে মসলা আমদানি শুরু হয়েছে। জুলাই ও আগস্ট এ দুই মাসে তিন হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন মসলা আমদানি হয়েছে; যার বেশিরভাগই জিরা ও এলাচ। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ ভাবে মসলা আমদানিতে তৎপর। ইতিমধ্যে তাদের বেশ কয়েকটি চালান আটক করা হয়েছে।