মিনা ট্র্যাজেডি-২২বাংলাদেশী হাজির মৃত্যু,এখনো নিখোঁজ ৯৮

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : সৌদি আরবের মিনায় পদদলিত হয়ে ২২ জন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু হয়েছে।এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৯৮ জন। সোমবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।এদিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের হজ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘটনার পরই বিভিন্ন উৎস, হটলাইনে করা ফোন ও পরিবারের স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিখোঁজ মোট ১২৮ জন হাজির তালিকা তৈরি করা হয়।তিনি জানান, পরবর্তীতে এদের মধ্য থেকে ৩০ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। ৯৮ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে জানিয়েছিলেন ২২ জন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরে আবার সাংবাদিকদের জানান ১০ জনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর হজের সময় শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপের আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য যাওয়ার পথে মিনার ২০৪ নম্বর সড়কে পদদলিত হয়ে ৭৬৯ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার। সোমবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান যুগ্ম-সচিব ডা. মো. বোরহানউদ্দিন জানান, তিনজন হাজির পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছেন তারা। উপ-সচিব মো. ফয়জুর রহমান ফারুকী মোবাইল ফোনে জানান, অফিসিয়ালি এ তথ্য তাদের কাছে রয়েছে।নিহত হাজিদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারিভাবে নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মরদেহ আনা ও দাফনের বিষয়ে নিহতদের পরিবারের মতামত প্রাধান্য পাবে বলেও এ কর্মকর্তারা জানান।নিখোঁজদের খুঁজতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে ডা. বোরহানউদ্দিন বলেন, কব্জির বেল্ট, পাসপোর্টসহ যেসব সামগ্রী নিজেদের সঙ্গে রাখার কথা, তা অনেক সময় রাখেন না হাজিরা। এ কারণে তাদের চিহ্নিত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।গত বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিনার বড় জামারাতে পদদলিতের ঘটনায় ৭৬৯ জন হাজির মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত হন আরও অন্তত ৯৩৪ জন। ড. মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশ থেকে যখন হজ করতে সৌদি আরবে যায় তখন অনেক সময়ই এজেন্সির লোকজন তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। হাজিদের সঙ্গে থাকে শুধু কব্জি বেল্ট। এই বেলটিও হাজিরা অনেক সময় খুলে েেফলেন।তিনি বলেন, হাজিরা যখন বুঝতে পারেন যে, এখানে আমাদের জায়গাটি পরিচিত হয়ে গেছে তখন তারা সে বেল্ট খুলে ফেলেন। এ জন্য মৃত বা নিখোঁজ হাজিদের সনাক্ত করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের হাজিদের সেবাদানরত কর্মকর্তরা তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করে যাচ্ছে।

হাজিদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের লাশ কোথায় দাফন করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমাদের দেশ থেকে যারা হজে যান ধর্মীয় অনুভূতি অনুযায়ী তাদের স্বজনরা চান যেন সৌদি আরবেই তাদের দাফন করা হয়। আর সেসব হাজিদের লাশ তাদের স্বজনেরা ফেরত চাইবেন সেক্ষত্রে আইন অনুযায়ী তাদের ব্যবস্থা নেয়া হবে।নিহতদের দাফন কোথায় সম্পন্ন হবে, সে সিদ্ধান্ত হবে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে। মৃত্যুর আগে হাজিরা তাদের পরিবারের কাছে দাফনের ব্যাপারে কখনো কোনও ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছেন কি না, তা জানার চেষ্টা করা হবে। সৌদি সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, পদদলনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭৬৯ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৯৩৪ জন।আহতদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়।

সৌদি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পদদলনের ঘটনায় উদ্ধার লাশগুলো বৃহস্পতিবার সারা রাত ধরে হাসপাতাল থেকে মিনার মুয়াইজাম মর্গে স্থানান্তর করা হয়। এরপর মর্গে গোসল করিয়ে নেয়া হয় লাশের ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ।কয়েক দফায় এ পর্যন্ত ৬৫০ জনের ছবি সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে, যাতে স্বজন, হজ এজেন্ট বা তার দেশের হজ কর্মকর্তারা লাশ শনাক্ত করতে পারেন।হজযাত্রীরা বিমানবন্দরে নামার পর তাদের আঙুলের যে ছাপ ইমিগ্রেশন দপ্তর সংগ্রহ করেছিল, তার সঙ্গে লাশের আঙুলের ছাপও মিলিয়ে দেখার কথা। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ টেলিফোনে বলেন, স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় ২০০ জনের একটি তালিকা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষেও প্রকাশিত ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে।মিনায় নিহত বাকিদের ছবিও সোমবারের মধ্যে প্রকাশ করা যাবে বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ আশা করছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছে, পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগে কোনো লাশ দাফন করা হবে না, বলেন রাষ্ট্রদূত।তিনি জানান, বাংলাদেশের ছয়টি মেডিকেল টিম মিনার আশেপাশের ছয়টি হাসপাতালে ঘুরে আহত বাংলাদেশিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। কাউকে পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসা ঠিকমত হচ্ছে কি না, সে বিষয়টিও তারা দেখবেন।পদদলনে হতাহতের ঘটনার পর ওইদিনই বাংলাদেশিদের খবর জানতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে হটলাইন চালু করা হয়।+৯৬৬৫৩৭৩৭৫৮৫৯ ও +৯৬৬৫০৯৩৬০০৮২ নম্বরে ফোন করে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মিনার বিষয়ে তথ্য জানা বা জানানো যাবে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যারা সৌদি আরবে মৃত্যু হলে সেখানেই দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন, তাদের ইচ্ছার মর্যাদা দেওয়া হবে। তবে সৌদি সরকার এ ব্যাপারে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেয় কি না, তাও দেখবে বাংলাদেশ। সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও প্রতিনিধি দল এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানায় মন্ত্রণালয় সূত্র। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বেশ ক’জন আমলা রয়েছেন এ দলে।মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. ফয়জুর রহমান ফারুকী বলেন, চলতি বছর হজ উপলক্ষ্যে প্রথম ধাপে এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন ও পরে আরও ৫ হাজার হাজির সৌদি আরব যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এর মধ্যে ভিসা জটিলতাসহ বিভিন্ন কারনে কেউ কেউ যেতে পারেন নি। তবে সব মিলিয়ে এবার এক লাখ ৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশি হাজি পবিত্র হজ পালন করেছেন।মন্ত্রণালয়ের অপর কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সৌদিতে নিজেদের মতো করে তৎপরতা চালানোর সুযোগ নেই। কারোর মরদেহ পেলে তারা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চাইলেই সেটি আমরা দেখতে বা নিতে পারি না। কিন্তু আমাদের দল কাজ করে চলেছে।তিনি জানান, নিহত হাজিদের শেষ ইচ্ছানুযায়ী অথবা তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দাফনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মিনা ও অন্যান্য স্থানের হাজিদের খোঁজে সবসময় হটলাইনে যোগাযোগ করছে মন্ত্রণালয়।ফারুকী জানান, আগামী ৭ অক্টোবর ধর্মমন্ত্রী ও সচিবের দেশে ফেরার কথা। তবে পরিস্থিতি যদি দাবি করে, তাহলে প্রয়োজনে আরও সময় বাড়াবেন তারা। মোট কথা, তারা বাংলাদেশের সকল হাজির তথ্য পাওয়া পর্যন্ত কাজ করবেন।