Fireign-embassy

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের পর কানাডাও তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।এছাড়া ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থানকালে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মঙ্গলবার বন্ধ রাখা হয়েছে।কানাডা সরকারের ভ্রমণ সতর্কতা বিষয়ক ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদের হুমকি এবং ভগুর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে কানাডার নাগরিকদের উচ্চমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।এর আগে সোমবার যুক্তরাজ্য তার দেশের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে এবং তিনদিন আগে শুক্রবার অস্ট্রেলিয়াও একই ধরণের সতর্কতা জারি করেছিল। এছাড়া ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে রাতেই তথ্য দেয় সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্র“প নামের একটি ওয়েবসাইট, যারা জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

দুই দেশই উল্লেখ করে যে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশে পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুর ওপর জঙ্গি হামলা হতে পারে।এদিকে ঢাকায় কূটনৈতিক এলাকায় গুলিতে সোমবার সন্ধ্যায় ইটাালি নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে গুলশান থানায় ঢাকার ইটালি দূতাবাসের পক্ষ থেকে মামলাটি দায়ের করা হয়।অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহীর গুলিতে নিহত হন তাভেলা সিসারো।পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং কারা এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে এবিষয়ে এখনো তারা নিশ্চিত নন।হত্যা মামলায়ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, গুলশানের কূটনৈতিক এলাকার এক সড়কে তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী ইটালির নাগরিক তাভেলা সিসারোর নিকটবর্তী হয় এবং তাদের একজন সিসারোকে লক্ষ্য করে গুলি করে।নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নেবার পর তিনি মারা যান। তিনি নেদারল্যান্ড ভিত্তিক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতেন। বিবিসি।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোতে মার্কিন স্বার্থের ওপর জঙ্গি হামলার সম্ভাব্য পরিকল্পনার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে।এদিকে, রাজধানীর গুলশানে দুর্বৃত্তের গুলিতে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার (৫০) হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন।মঙ্গলবার ঢাকাস্থ ইইউ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ নিন্দা জানান। বিবৃতিতে পিয়েরে মায়াদুন বলেন, এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বর্বর এ হামলার সঠিক তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা বাংলাদেশের প্রান্তিক দরিদ্রদের সহায়তা করতে এসেছিলেন। এমন একজন ব্যক্তির হত্যার ঘটনা আরও বেশি উদ্বেগজনক।ইইউ প্রতিনিধি দলের পক্ষে চেজারের পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে তাবেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আইসিসিও কো-অপারেশন নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।অন্যদিকে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সোমবার হালনাগাদ করা ওই বার্তায় তাদের নাগরিকদের বলেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিরা অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থে আঘাত হানতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য নতুন’ তথ্য তারা পেয়েছে।এ ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

বার্তায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেসব নতুন তথ্য পাচ্ছে তাতে ধারণা করা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গি দলগুলো ওই অঞ্চলে মার্কিন স্থাপনা, মার্কিন নাগরিক ও মার্কিন স্বার্থের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে।‘ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায়’ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা দপ্তরের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশে বড় ধরনের জমায়েত বা আন্তর্জাতিক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ( যেখানে বিদেশিরা সমবেত হতে পারে) অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের অন্য নাগরিকদেরও একই পরামর্শ দিয়ে রেস্তোরাঁ, হোটেলসহ সব জনসমাগম স্থলে চলাফেরার ক্ষেত্রে ‘উচ্চ মাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে মার্কিন দূতাবাস। নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল গত শনিবার বাংলাদেশ সফর পিছিয়ে দিলে হঠাৎ করেই জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গটি সামনে আসে।তার আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) বাংলাদেশে ভ্রমণে বিষয়ে সতর্কতা জারি করে এক বার্তায় তাদের নাগরিকদের জানায়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে ‘অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের ওপর’ আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে- এমন ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য’ তাদের হাতে রয়েছে।এরপর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রধান শন ক্যারল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে আসেন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন।তাকে আশ্বস্ত করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়,জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বিষয়টি ভিত্তিহীন, বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা পূর্ণ নিরাপত্তা পাবে। এরই মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার কূটনৈতিক পাড়া গুলশানে চেজারে তাভেল্লা নামে এক ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে রাতেই তথ্য দেয় সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্র“প নামের একটি ওয়েবসাইট, যারা জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুক্তরাজ্য সরকারও বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাফেরা সীমিত করে আনার পরামর্শ দেয়।যুক্তরাজ্যও বলেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিরা পশ্চিমা স্বার্থের উপর আঘাত হানতে পারে বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।জঙ্গিদের কাছ থেকে হুমকি রয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের উপর জঙ্গিদের আঘাত হানার পরিকল্পনর নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে।

বাংলাদেশের পুলিশের হাতে এ ধরনের কোনো তথ্য যে নেই তা অস্ট্রেলিয়ার সতর্কতা জারির পরদিনই জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। সেদিন তিনি বলেছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কোনো থ্রেটের খবর জানে না। তাদের কেউ আমাদের কিছু জানায়নি।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও অস্ট্রেলিয়ার আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।ধর্মীয় উগ্রপন্থি তৎপরতার অভিযোগে বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে কয়েকশ ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে; তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি দলের যোগাযোগের কথাও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে বড় কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটেনি।চলতি শতকের শুরুর দিকে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের উর্বর ক্ষেত্রে’ পরিণত হচ্ছে বলে কথা ওঠে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।সারাদেশে ধারাবাহিক বোমা হামলা চালানোর জন্য দায়ী দল জেএমবি পরবর্তীতে র‌্যাব-পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে আসে। জনমনে আতঙ্কও অনেকটা কমে যায়।গত দুই বছরে একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় বার বার জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, পুলিশও জোরের সঙ্গে উগ্রপন্থিদের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের কথা বলেছে। তবে বাংলাদেশে বিদেশি কোনো নাগরিক জঙ্গি হামলায় খুন হওয়ার অভিযোগ এর আগে কখনো ওঠেনি।