saj-43

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০২ অক্টোবর ২০১৫: রাজধানীর কাঁচা বাজারে এখনও ঈদের ছুটির আমেজ শুক্রবার ছুটির দিনেও বাজার অনেকটাই ক্রেতা শুণ্য। তবে বাজার না জমলেও থেমে নেই শাক-সবজির দামের উলম্ফন।সরবরাহ কমের অজুহাতে কোনো কোনো সবজির দাম বেড়েছে দ্বিগুন। মাছের দাম না কমলেও, আগামী সপ্তাহ থেকেই সরবরাহ বাড়বে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।ছুটির দিন, শুক্রবারের বাজার। অনেকটাই অলস ভঙ্গিতে বসে আছেন দোকানিরা। ক্রেতা নেই, নেই বিকিকিনি। তবে এর মধ্যেও দুই-একজন ক্রেতা যাও আসছেন, হতাশ হচ্ছেন বাজারের আচরণে। মিলছে না ঈদের আগের সঙ্গে বর্তমানের বাজার দর।

যেমন করল্লা; ঈদের আগের ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি আর এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। করল্লার তিক্ততা যেন, মিশেছে অন্যান্য শাক-সবজিতেও। শুক্রবার বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বেগুন, বরবটি, করলা, শিম, ঢেড়শ ও ঝিঙেসহ প্রায় সব সবজিরই দাম বেড়েছে। বিশেষ করে কাঁচা মরিচ আর টমেটোর দাম বেড়েছে বেশি। দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রয় হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা। আর ভারতীয় কাঁচা মরিচ বিক্রয় হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা দরে।এছাড়া ফ্রিজের টমেটো ১৪০ টাকা আর সরাসরি ক্ষেত থেকে নিয়ে আসা টমেটো ১৭০ টাকা দামে বিক্রয় হচ্ছে। ঝিঙা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, বাধাঁকপি ৬০ টাকা, কাকরোল ৭০ টাকা, ললিতা আলু ২৬ টাকা আর দেশি আলু ৩৬ টাকা, তিতকরলা ৫০ থেকে ৬০টাকা, আর বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধনে পাতা ২০৫ থেকে ২২০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

ক্রেতা কম, তাই চাহিদাও কম। তাই শাক-সবজির দামও কম থাকার কথা কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টো। এ জন্য সরবরাহ কম থাকাকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।তবে মন্দের ভাল মাছের বাজার। দাম বাড়েনি, আবার কমেওনি। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কিছুটা কমবে। তেল, আদা রসুন ও পেয়াজসহ আন্যান্য মসলার দাম ঈদের আগের মতই আছে। তবে আলুর কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা।ঈদের ছুটি শেষ হলেও রাজধানী ঢাকা এখনো তার আগের রূপে ফিরে আসেনি। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে জমজমাট হয়নি এখনো বাজারগুলো। আর বাজারের ফাঁকা ফাঁকা এই অবস্থানে পণ্যের দাম হয়েছে আকাশচুম্বী।শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ঈদের আমেজ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। ছুটিতে আমদানি কমেছে এবং পাইকারী বাজারের সব মোকাম এখন খোলেনি।এ কারণে পন্যের দাম একটু বাড়তি। যাত্রাবাড়ী, স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, শশা ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, করলা ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায়, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, সাদা গোলাকার বেগুন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, বেগুন ৫০ টাকায়, পটল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, কাকরল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, ঢেড়স ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, ওস্তা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়, জলপাই ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, ধোন্দল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, বটবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, আলু ২৩ থেকে ২৫ টাকায়।

সেগুনবাগিচা বাজারের ব্যবসায়ী তুষার জানান, সকালে আড়তে গিয়ে বেশির ভাগ দোকান বন্ধ পেয়েছেন। এ কারণে সবকিছু তাকে বেশি দামে কিনে আনতে হয়েছে। সব দোকান খোলা থাকলে দাম আরো কমে যেতো বলে মনে করেন তিনি।এদিকে পাইকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, দোকানের কর্মচারীরা ঈদেই একটু ছুটি কাটায়। তাদের ছুটি কাটানো শেষ হলে পাইকারী বাজারে সব দোকান খুলবে। এছাড়া ঈদের সময় আমদানি কম থাকে। কয়েকদিন পর আমদানি বাড়বে তখন কাঁচামালের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে মানভেদে দেশি পিঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। দেশি রসুন আগের মতোই ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি আদা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এদিকে খুচরা বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি হাঁসের ডিম ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী বাজারে ব্রয়লার মুরগির একশ ডিম ৮২০ টাকায় এবং হাঁসের ডিম ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম (সাদা) ১৬০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি (লাল) ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। গরুর মাংসের দোকানে বেচাকেনা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। একই সঙ্গে মাংসের দোকান বেশির ভাগই বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। যেসব দোকান খোলা ছিল সেগুলোতে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৩৮০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী পাইকারী কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীদের নেতা নূরু হাজী বাংলামেইলকে বলেন, ঈদের পর আড়তে মালামাল আমদানি কম। আমদানি পুরোপুরি শুরু হলে দাম কিছুটা কমবে। ঈদের ছুটি শেষ হলেও নগরজুড়ে এখনো ছুটির আমেজ। অফিস-আদালত খুললেও বিভিন্ন পোশাক কারখানাসহ বেসরকারি ও ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ থাকায় ঈদুল আযহার পর মানুষ এখনো বাজারমুখি হয়নি। বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। ঈদের আগের চড়া মসলার বাজারে সস্তি এলেও কিছুতেই কমছেনা সবজির দাম।ট্রাক চলাচল স্বাভাবিক হয়নি, সবজির সরবরাহ কম এমন অযুহাতে সব ধরনের সবজির বিক্রি হচ্ছে দুই গুণ দামে। অথচ ঈদুল আযহার পর স্বাভাবিক ভাবেই সবজির দাম কমার কথা ছিল। কেননা এসময় বাজারে সবজির চাহিদা যেকোন সময়ের তুলনায় কম হয়ে থাকে।খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. আলম জানান,‘মূলত ঈদের পর সবজির ট্রাক না আসায় সবজিসহ সব ধরনের দাম এখন বাড়তি। তবে সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম এমনিতে কমে যাবে। চাহিদা আছে কিন্তু সে তুলনায় আমাদের সবজি নেই, আগের যা ছিল তাই বিক্রয় করছি। তাই সবজির দাম এখন বাড়তি।