jail-ig-34466

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮অক্টোবর ২০১৫: কেন্দ্রীয় কারাগারসহ অন্যান্য কারাগার থেকে বন্দি আসামিরা যে বিভিন্নভাবে বাইরে যোগাযোগ রক্ষা করেন এমন অভিযোগকে নাকচ করে দিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন৷ তিনি বলেছেন, কারাগারে বসে নয় বরং কারাগার থেকে আদালতে যাওয়া-আসার পথে আসামিরা এই যোগাযোগ করে থাকেন৷ যেসব আসামি আদালতে বেশি যাতায়াত করে তারাই মূলত এসব কাজ করে৷ সেখানে কোনো কিছু ঘটে থাকলে তার জন্য কারাগার কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে কারা মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন৷ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন বলেন, কারাগারের ভিতরে যাতে কোনোভাবেই মোবাইল ফোন প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য আমরা সার্চিং প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি৷ তাদের আমরা বন্দি করেছি কিন্তু তাদের মাথাকে তো আর বন্দি করিনি৷ কারাগারের কিছু মানুষের মাধ্যমেই আসামিরা যোগাযোগ রক্ষা করেন পুলিশরা এটা বলে থাকেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না৷ এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবেন৷ তবে এসব অনিয়ম বন্ধে কারাগার কর্তৃপক্ষ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেই বেশি আগ্রহী৷

কারাগার এলাকায় পকেটিং নেটওয়ার্ক চালুর জন্য সব মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ডাকা হলেও তারা কোনো প্রকার সাড়া দেয়নি বলেও জানান তিনি৷তিনি বলেন, দেশে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় কারাগারগুলোতে কড়া নিরাপত্তা আরোপ করা হয়েছে এবং জঙ্গি বন্দিদের আদালতে আনা- নেয়ার জন্য আলাদা এসকর্ট গঠন করা হয়েছে৷ আসামিদের জন্য বডি স্ক্যানার কেনার ব্যাপারে তিনি বলেন, যদিও এটা ১৮ মাস আগে পরিকল্পনা করা হয়েছে কিন্তু এর দাম কত হবে তা নিয়ে জটিলতা থাকার কারণে এতোদিন কেনা সম্ভব হয়নি৷ এ বিষয়টি একনেকে গেলেই তা পাস হয়ে যন্ত্রটি দ্রুত কেনা সম্ভব বলে মনে করেন কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার উদ্দিন৷ গত ছয় মাসে বিভিন্ন আসামির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল দেখিয়ে তিনি বলেন, আসামিদের লোকজন টেনিস বলে গাজা ও ইয়াবা ঢুকিয়ে কারাগারে ভেতরে নিক্ষেপ করে৷ আবার কেউ কেউ সাবান, জুতার সোল, পায়ুপথ, মুখে ও কেউ ওষুধের কৌটায় করে মাদক নিয়ে আসেন৷ বন্দিদের কল্যাণের জন্য তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, আইরিশ ইমেজসহ ডাটাবেজ তৈরির কাজ প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে শুরু হয়েছে৷ আসামিদের সাথে স্বজনদের সাক্ষাত্‍কারে মোবাইল এপ্লিকেশন সার্ভিস, দেখা করতে আসা স্বজনদের জিনিসপত্র রাখার জন্য লকার ব্যবস্থা কারা, ওয়েবসাইটকে উন্নতকরণসহ নানা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ তবে কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার দাবি করেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় বন্দিরা বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না৷ যোগাযোগের যে অভিযোগ ররেছে, তার সুযোগ ঘটে বন্দিদের আদালতে নেওয়ার সময়৷কারাগারে থেকে বিভিন্ন অপরাধীরা বাইরের অপরাধ জগত্‍ নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ বহুদিনের৷ বছর খানেক আগে ত্রিশালে জঙ্গিদের পালানোর ঘটনায়ও পরিকল্পনাটি কারাগারেই হয়েছিল বলে অভিযোগ৷কারাগারে বন্দিরা অবৈধভাবে মোবাইল ফোন রেখে এই যোগাযোগ রাখে বলে অভিযোগ উঠছে বারবার৷ মাদকও কারা অভ্যন্তরে পাওয়ার ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে৷রাজধানীর নাজিম উদ্দিন সড়কে কারা অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কারা কর্তৃপক্ষের তল্লাশিতে পাওয়া মোবাইল ফোন সেট, সিম কার্ড সাংবাদিকদের দেখানো হয়৷

সৈয়দ ইফতেখার টেনিস বল, ব্যাগ, ওষুধের কৌটা দেখিয়ে বলেন, বাহির থেকে দেখলে মনে হবে টেনিস বল৷ কিন্তু বলের ভেতর মাদক, সিম রয়েছে৷ বলগুলো বাহির থেকে কারাগারের ভেতরে নিক্ষেপ করা হয়েছে৷ ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, মনে হচ্ছে ব্যাগটি খালি৷ আসামির স্বজনরা কাপড় পাঠিয়েছেন তার বন্দির জন্য৷ কিন্তু ব্যাগের তলানিতে আরেকটি ফলস’ পকেট রয়েছে৷ ওই পকেটে থেকে মোবাইল পাওয়া গেছে৷ছোট ওষুধের কৌটা দেখিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ওষুধ পাঠিয়েছে বন্দির স্বজন৷ কিন্তু কৌটার ছিপির মধ্যে ফসল’ জায়গা করে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড দেওয়া হয়েছে৷ এসব দেখিয়ে তিনি বলেন, কারাগারে থেকে যে বন্দিরা বাহিরে যোগাযোগ করে না, তা একেবারে অস্বীকার করছি না৷ তা নাহলে কারাকর্তৃপক্ষের তল্লাশিতে মোবাইল ফোন, সিমকার্ড পাওয়া যেত না৷ তবে কারাগার থেকে আদালতে যাওয়ার সময় মাঝপথে বন্দিরা বাইরের কারও সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করে বলে দাবি করেন কারা মহাপরিদর্শক৷ কারাগারে বন্দিরা কারা কর্তৃপক্ষের অধীন থাকলেও আদালতে আনা-নেওয়ার দায়িত্বটি থাকে পুলিশের হাতে৷

কারাপ্রধান ইফতেখার বলেন, যখন বন্দি কারাগারে ঢোকেন৷ তাদের ব্রেন তো বাহিরে রেখে আসতে পারি না৷ পরিকল্পনা করতে পারে৷ তবে বন্দিদের আদালতের নেওয়ার পথেই সাধারণত বাহিরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি হয়৷ একজন আসামিকে সকালে আদালতে নেওয়া হয়৷ প্রায় সারাদিন আদালতে থাকে৷ আবার কোনো কোনো আসামিকে অন্য জেলায়ও নিতে হয়৷বন্দি কল্যাণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজে কারাবন্দিদের পুনর্বাসন’ বিষয়ক ওই সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের লোকবলের কথাও তুলে ধরেন কারা মহাপরিদর্শক৷আমাদের লিমিটেশন রয়েছে৷ লিমিটেশন হলে জনবল৷ আমাদের কারারক্ষীরা সাপ্তাহিক ছুটিও পায় না৷তিনি জনান, বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৮ কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৩৪ হাজার ৬৮১ জন হলেও বন্দি রয়েছে ৭১ হাজার ২৪১ জন, যা দ্বিগুণেরও বেশি৷ এসব বন্দির মধ্যে ৭০ শতাংশর মামলা বিচারাধীন৷ বাকি ৩০ শতাংশ কয়েদি বলে জানান কারাপ্রধান৷