khandaker-mosharraf_336483

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০১৫: স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকার সত্‍ উদ্দেশ্যেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মূলত গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করতে আইন সংশোধন করে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷মঙ্গলবার দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়ার জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷

উল্লেখ্য,সোমবার মন্ত্রিসভায় জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনও দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়৷ এই সিদ্ধান্তকে সরকারের দুরভিসন্ধি বলে দাবি করেছে বিএনপি৷খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে মারামারি হওয়ার প্রশ্নই আসে না৷ এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সংঘাত হবে না৷ বরং নির্বাচনে উত্‍সবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হবে৷ অথচ বিএনপি বলছে, এটা সরকারের দুরভিসন্ধি৷ আসলে সবকিছু বিএনপি এমন দৃষ্টিতেই দেখে৷ কেউ যদি ভালো কাজকে অসত্‍ ভাবে, তাহলে তো তাদের চোখে আমরা অস্ত্রপচার করতে পারব না৷কেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন প্রয়োজন এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সবাই দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা বলে৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটও চাচ্ছে দলীয় পরিচয়ে৷ এটা আমরা ওপেন করে দিচ্ছি৷ প্রার্থীরা দলীয় পরিচয়েই নির্বাচন করবে৷ তৃণমূল পর্যায়ে উত্‍সবের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হবে৷

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন সংঘাত-সহিংসতার পথ বন্ধ করবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন৷স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এর বিরোধিতার প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে এই যুক্তি তুলে ধরেন তিনি৷স্থানীয় সরকারের নির্বাচন এতদিন ধরে নির্দলীয়ভাবে হলেও আইন সংশোধনের পর এটাও সংসদ নির্বাচনের মতো দলীয়ভাবে হবে৷ বিভিন্ন সংগঠন এর বিরোধিতা করে বলছে, এতে নির্দলীয় যোগ্য ব্যক্তিরা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুত্‍সাহিত হবে৷পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধের কারণে স্থানীয় নির্বাচনেও মারামারি-কাটাকাটি বাড়বে বলে কারও কারও আশঙ্কা৷এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হলে খন্দকার মোমাররফ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ধরেই নিলেন যে মারামারি কাটাকাটি হবে, এতটা এঙ্টিমে যাবেন কেন? মারামারি-কাটাকাটি হবেই না৷জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দুই এমপি কোথায় মারামারি করেছে, তা আমার জানা নেই৷ মারামারি হলে ওই গ্রামেই হয়, এক দলের লোক মিটিং করে গেলে একটা আজেবাজে কথা বলে বসে হয়ত আরেক দলের লোক, তা নিয়েৃ৷দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের উত্‍সব হবে বলেও মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী৷

মারামারি-কাটাকাটি শেষ হয়ে যাবে৷ মারামারির তো কোনো স্কোপই নাই, বরং গাছে একটা ফুলও থাকবে না, সব ফুলের মালা মানুষে দেবে৷এতদিন আইনগতভাবে নির্দলীয় হলেও স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় আবহের মধ্যেই হত, সে কথা তুলে ধরেন সংসদ সদস্য খন্দকার মোশারফও৷আমরা এখন এটারে ওপেন করে দিলাম৷ দলীয় পর্যায়ে নির্বাচন করুক, গণতন্ত্রকে একেবারে তৃণমূলে প্র্যাকটিসে নিয়ে গেছি৷

নির্দলীয় প্রার্থীদের ভোটে আসতে নিরুত্‍সাহিত করা হল কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, নির্দলীয়দের ইনকারেজ করছি৷ তারা নির্বাচন করতে চাইলে কোথাও কোনো বাধা নেই৷আমার ব্যক্তিগত ধারণা, দলীয় পরিচয়ে নির্বাচনের কথা বললেও দেখবেন গ্রাসরুট লেভেলে নিরপেক্ষ প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি হবে৷

বিএনপি এই আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের মতো তাদের স্থানীয় নির্বাচন থেকেও দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে৷ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিকে কৌশলে স্থানীয় নির্বাচনে আনা হচ্ছে কি না- এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান খন্দকার মোশাররফ৷আমরা কোনো শীষকে নির্বাচনে আনছি না, দল নির্বাচন করবে, বলেন তিনি৷বিএনপির বিরোধিতার প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী বলেন, কেউ যদি ভালো কাজে অসত্‍ উদ্দেশ্য দেখে তবে তা তার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার৷ এটা তো আমরা কিছু করতে পারব না৷উনারা (বিএনপি) যদি শুধু খারাপ জিনিসই দেখেন, উনাদের চোখের অপারেশন আমরা কেমনে করাব? আপনারা (সাংবাদিক) (বিএনপি নেতাদের) মন এবং চোখ পরিষ্কার করাই দেন৷স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ২৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরের পর স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মন্ত্রী৷কাজকে সুনির্দিষ্ট ছকে আনতে পারফরমেন্স বন্ড করা হল জানিয়ে তিনি বলেন, এখন প্রত্যেকটা স্টেপই সুনির্দিষ্টভাবে মনিটর করা হবে৷আমরা যদি যার যার দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে পালন করি তাহলে এই বন্ড সই করার ফলে নয় মাস বসে থেকে প্রজেক্ট অ্যাপ্রুভালের সুযোগ আর থাকবে না৷ সচিবদেরও প্রধানমন্ত্রীর সামনে মূল্যায়ন হবে৷ পরিপূর্ণ জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার মধ্যে আমরা আসছি৷চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এম এ কাদের সরকার ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন৷